অংশীদারি ব্যবসায়ের গঠন প্রণালী
অংশীদারি ব্যবসায়ের গঠন করা অত্যন্ত সহজ। মুনাফা অর্জনের উদ্দেশে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ ব্যবসায় গঠন করতে পারে। ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন অনুযায়ী অংশীদারি ব্যবসায় গঠিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। নিম্নে অংশীদারি ব্যবসায়ের গঠন প্রণালী আলোচনা করা হলো:
১. একাধিক সদস্যের সমাবেশ
অংশীদারি ব্যবসায় গঠনের জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ২০ জন প্রয়োজন। আবার ব্যাংকিং অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ১০ জন ব্যক্তিকে স্বেচ্ছায় ব্যবসায় গঠনের জন্য একত্রিত হতে হয়।
অংশীদারি ব্যবসায়ের সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর। |
২. চুক্তি সম্পাদন
একত্রিত সদস্যদের মধ্যে ব্যবসায়ের গঠন, পরিচালনা, উদ্দেশ্য, সদস্যদের পারস্পরিক স্বার্থ ইত্যাদি বিষয়ে চুক্তি সম্পাদন করতে হয়। চুক্তিই অংশীদারি ব্যবসায়ের মূলভিত্তি। এ চুক্তি হতেই অংশীদারদের মধ্যে সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। চুক্তি লিখিত ও মৌখিক উভয়ই হতে পারে।
৩. নিবন্ধন
অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়। তবে অংশীদারগণ ব্যবসায় ও নিজেদের স্বার্থে তা নিবন্ধন করতে পারে। এক্ষেত্রে নিবন্ধন অফিস হতে ফি জমাদানপূর্বক আবেদন ফরম সংগ্রহ করে তা যথাযথভাবে পূরণ করে নিবন্ধন অফিসে জমা দিতে হয় এবং নিবন্ধক সন্তুষ্ট হলে ব্যবসায়টিকে নিবন্ধিত করে নেয়।
৪. অনুমতিপত্র সংগ্রহ
ব্যবসায়ের প্রকৃতি অনুসারে স্থানীয় পৌরসভা বা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ হতে অনুমতি পত্র সংগ্রহ করতে হয়।
৫. কার্যারাম্ভ
উপরোল্লিখিত কার্য সম্পাদনের পর একটি অংশীদারি ব্যবসায় কাজ শুরু করতে পারে।
অতএব উপরোক্ত নিয়মাবলি পালনের মাধ্যমে অংশীদারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়।
অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপ সাধন পদ্ধতি
অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপ সাধন বলতে অংশীদারদের মধ্যে ব্যবসায়গত সকল সম্পর্ক বা সম্বন্ধের সম্পূর্ণ অবসানকে বুঝায়।
নিম্নলিখিত যে কোনো উপায়ে অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপ সাধন করা যেতে পারে। যেমন-
১. সকলে একমত হয়ে বিলোপ সাধন
২. বিজ্ঞপ্তির দ্বারা ঐচ্ছিক বিলোপ সাধন
৩. বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে বিলোপ সাধন
৪. আদালতের মাধ্যমে বিলোপ সাধন।
১. সকল অংশীদার একমত হয়ে
১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৪০ ধারা মোতাবেক যে কোনো সময় চুক্তিবদ্ধ সকল অংশীদার একমত হয়ে অংশীদারি কারবারের বিলোপসাধন ঘটাতে পারে।
২. বিজ্ঞপ্তির দ্বারা ঐচ্ছিক বিলোপসাধন
অংশীদারী আইনের ৪৩ ধারা মোতাবেক ঐচ্ছিক অংশীদারি কারবারের যে কোনো অংশীদার যে কোনো সময়ে ব্যবসায় বিলোপসাধনের জন্য আদালতে আবেদন জানালে যে কোনো কারণে আদালত অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপ সাধনের আদেশ দিতে পারেন।
৩. কোনো বিশেষ ঘটনা ঘটার ফলে
১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী নিম্নের যে কোনো কারণে এ জাতীয় বিলোপসাধন ঘটতে পারে।
(ক) নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যবসায় গঠন হলে এবং উক্ত সময় যদি অতিক্রান্ত হয়।
(খ) এক বা একাধিক কার্যের জন্য ব্যবসায় গঠন হলে উক্ত কাজ বা কার্যসমূহ সম্পাদন হলে।
(গ) কোনো অংশীদারের মৃত্যু ঘটলে। (ঘ) যদি ফার্ম দেউলিয়া হয়ে পড়ে।
(ঙ) কোনো অংশীদার পাগল বা উন্মাদ হয়ে গেলে।
অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন পদ্ধতি আলোচনা কর |
৪. বাধ্যতামূলক বিলোপসাধন
অংশীদারি আইনের ৪১ ধারায় বলা আছে যে, নিম্নলিখিত দুটি অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের বাধ্যতামূলক বিলোপসাধন ঘটে। যথা-
(ক) একজন ব্যতীত সকল অংশীদার দেউলিয়া বলে ঘোষিত হলে।
(খ) যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটে যাতে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ব্যবসায় চালানো বা অংশীদারি বজায় রাখা অবৈধ হয়ে যায়।
৫. আদালতের মাধ্যমে বিলোপসাধন
বাংলাদেশে প্রচলিত ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৪৪ ধারা অনুযায়ী নিম্নের যে কোনো কারণে আদালত অংশীদারি ফার্মের বিলোপসাধনের আদেশ দিতে পারে। যেমন-
(ক) কোনো অংশীদার পাগল বা উন্মাদ হলে। স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে।
(খ) কোনো অংশীদার ব্যবসায় পরিচালনায়
(গ) কোনো অংশীদার আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হলে।
(ঘ) কোনো অংশীদার ব্যবসায়িক লেনদেনের ব্যাপারে অসৎ প্রমাণিত হলে।
(ঙ) কোনো অংশীদার ইচ্ছাকৃতভাবে চুক্তিভঙ্গ করলে।
(চ) কোনো অংশীদার দেউলিয়া প্রমাণিত হলে।
(ছ) এছাড়া অন্য যে কোনো কারণে আদালত যদি মনে করে ফার্মের বিলোপ হওয়াই উচিত তবে তা।