Home » ব্যবস্থাপনা কি? ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি আলোচনা কর।
ব্যবস্থাপনা কি

ব্যবস্থাপনা কি? ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি আলোচনা কর।

by Susmi
0 comment

ব্যবস্থাপনা বলতে কী বুঝায়, বা ব্যবস্থাপনা কি, অথবা ব্যবস্থাপনা কাকে বলে তা জানতে চান? সঠিক আর্টিকেলে চলে এসেছেন। আজকের আর্টিকেলে এ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়া হবে। সেই সাথে ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি সম্পর্কেও আলোচনা করা হবে। আসুন তবে জেনে নিই ব্যবস্থাপনা কি ও এর কার্যাবলি কি কি।

ব্যবস্থাপনা কি বা ব্যবস্থাপনা কাকে বলে?

ব্যবস্থাপনার ইংরেজি ‘Management’ শব্দটি সম্ভবত ইতালীয় ‘Maneggiare’ শব্দ হতে উৎপত্তি লাভ করেছে যার অর্থ ‘To train up the horses’ বা অশ্বকে প্রশিক্ষিত করে তোলা। এর সমার্থক শব্দ হলো বা চালনা করা। সুতরাং পরিচালনাসহ ব্যবস্থাপকের সকল কাজই হলো ব্যবস্থাপনা। ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে জনপ্রিয় ধারণাটি হলো ‘Getting things done through other people.’ অর্থাৎ অন্য কোনো মাধ্যমে কাজ আদায় করে নেয়ার কৌশলই হচ্ছে ব্যবস্থাপনা।

নিচে ব্যবস্থাপনার কয়েকটি সংজ্ঞা দেয়া হলো-

১.  Lawrence A. Apply– এর মতে, “অন্যের দ্বারা কাজ করিয়ে নেয়ার কৌশলই হলো ব্যবস্থাপনা।” (Management is the art of getting things done through the effort of other people.)

২. Joseph L. Massie– এর মতে, “ব্যবস্থাপনা হলো একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা একটি সমন্বিত দল সাধারণ লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কার্য পরিচালনা করে। (The process by which a cooperative group directs action towards common goals.)

অতএব আমরা ব্যবস্থাপনা কি বা কাকে বলে সে সম্পর্কে ধারণা নিলাম। এবার আমরা জানবো ব্যবস্থাপনা কি কি কার্যাবলি সম্পাদন করে।

আরও পড়ুন:   ব্যবস্থাপনার স্তর গুলো কি কি? বা ব্যবস্থাপনার তিনটি স্তর কি কি?

ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি

ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলিসমূহ প্রকৃতিভেদে ভিন্ন বা স্বতন্ত্র হলেও স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। এরা একে অপরের উপর নির্ভরশীল। তাই একে ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া বলে। প্রতিষ্ঠন যতদিন চালু থাকে এ প্রক্রিয়াও ততদিন চলমান থাকে। তাই একে একটি চলমান প্রক্রিয়া নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। নিচে ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি আলোচনা করা হলো-

১. পরিকল্পনা (Planning)

ব্যবস্থাপনার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো পরিকল্পনা প্রণয়ন। এর মাধ্যমেই অন্যান্য কাজের দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ব্যবস্থাপনা বিশারদ Prof. W. H. Newman বলেন, “Planning is deciding in advance what is to be done.” অর্থাৎ ভবিষ্যতে কি করতে হবে তার অগ্রিম সিদ্ধান্তই হলো পরিকল্পনা। পরিকল্পনা এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেখানে কোনো গলদ থাকলে ব্যবস্থাপনার অন্য কোনো কাজ দ্বারা তা সংশোধন করা সম্ভব হয় না। তাই একে ব্যবস্থাপনারও ভিত্তিও বলা হয়।

২. সংগঠন (Organization)

সংগঠন হচ্ছে ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় মৌলিক ধাপ। এর মাধ্যমে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ ও সেগুলোকে কার্যে ব্যবহার করার জন্য আন্তঃব্যক্তিক ও বিভাগীয় সম্পর্ক সৃষ্টি এবং প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব বণ্টন নিশ্চিত করা হয়। এ প্রসঙ্গে Stoner & Others- এর মতে, এক বা একাধিক লক্ষ্য অর্জনের স্বার্থে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির সংগঠিত পন্থায় কার্য সম্পাদনকে সংগঠন বলা হয়।

৩. কর্মীসংস্থান (Staffing)

সাধারণভাবে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্তরে যেসব কর্মী দরকার হয় তা সংগ্রহ করা এবং তাদের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করার নামই হলো কর্মীসংস্থান। ব্যাপক অর্থে, কর্মীসংস্থান নির্বাচন ছাড়াও পদোন্নতি, কর্মী মূল্যায়ন ও উন্নয়ন, পারিশ্রমিক নির্ধারণ এবং প্রশিক্ষণকে অন্তর্ভুক্ত করে।

৪. নির্দেশনা (Direction)

পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নিমিত্তে কর্মীদের ফলপ্রসূ আদেশ-নির্দেশ প্রদান করাকে নির্দেশনা বলা হয়। এটি ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং প্রশাসনের মূল চালিকাশক্তি। নির্দেশনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের মূল কার্যধারা অব্যাহত রূপ লাভ করে এবং কর্মীরা সঠিক দিকনির্দেশনা পায়। সুযোগ্য নির্দেশনার অভাবে প্রতিষ্ঠান তার মূল লক্ষ্য হতে বিচ্যুত হয়ে পড়ে।

৫. প্রেষণা (Motivation)

ব্যবস্থাপনা শুধু নির্দেশনা দিয়েই কর্মীর মধ্যে তাড়না সৃষ্টি করতে পারে না। এর জন্য কার্যকর প্রেষণা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হয়। এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক কাজ। কর্মীদের মনোবল, ইচ্ছা, আগ্রহ, কর্মশক্তি এবং উদ্দীপনা বৃদ্ধির অন্যতম কৌশল হলো প্রেষণা। কর্মীরা যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করে সেজন্য তাদের কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি এবং সে আগ্রহ ধরে রাখার জন্য ব্যবস্থাপনাকে প্রচেষ্টা চালাতে হয়।

৬. সমন্বয় সাধন (Co-ordination)

সমন্বয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপকীয় কাজ। এর মাধ্যমে এমন প্রচেষ্টা চালানো হয়, যা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উপায় উপকরণ ও কার্যসমূহকে একই সূত্রে গ্রথিত করে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়। এর কার্যকারিতা মূলত কর্মীদের সহযোগিতামূলক মনোভাব ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য অনুধাবনের উপর নির্ভরশীল।

৭. নিয়ন্ত্রণ (Controlling)

নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ ধাপ। পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা অনুসারে কার্য পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাই হলো নিয়ন্ত্রণ। আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক হেনরি ফেয়ল বলেন, নিয়ন্ত্রণ হলো গৃহীত পরিকল্পনা, জারিকৃত নির্দেশনা ও প্রতিষ্ঠিত নীতি অনুযায়ী কার্য পরিচালনা হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করা।

Related Posts