Home » আইনসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা কর
আইনসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী

আইনসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা কর

by Susmi
0 comment

আইনসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী

আধুনিক রাষ্ট্রে আইনসভা বিভিন্ন কাজ সম্পাদন ও ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে। নিচে আইনসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী গুলো তুলে ধরা হলো-

১. আইন প্রণয়ন

আধুনিককালে আইনসভা আইনের প্রধান উৎস। আইন প্রণয়ন এর প্রধান কাজ। দেশের শাসনকাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আইনসভা প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করে। আবার সমাজ ও রাষ্ট্রের চাহিদা অনুযায়ী পুরনো আইন পরিবর্তন বা সংশোধন করে যুগোপযোগী করে তোলে।

সরকারের অঙ্গ কয়টি ও কি কি এবং আইনসভার গঠন আলোচনা

২. সংবিধান প্রণয়ন ও সংশোধন

আইনসভা সংবিধান রচনা ও প্রয়োজনে তা সংশোধন করে থাকে। কোনো দেশের আইনসভা যখন সংবিধান রচনার কাজ করে তখন তাকে সাংবিধানিক গণপরিষদ বলা হয়। যেমন- ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান গণপরিষদ সে দেশের সংবিধান প্রণয়ন করে। আবার বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের গণপরিষদ দেশের প্রথম সংবিধান রচনা করে। সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। যেমন- যুক্তরাজ্যের আইনসভা সহজেই সে দেশের সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে, কারণ তা অলিখিত। পক্ষান্তরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান পরিবর্তন করতে হলে কংগ্রেসকে এক বিশেষ জটিল পদ্ধতির আশ্রয় নিতে হয়। বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করতে জাতীয় সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতি প্রয়োজন যা সাধারণত খুব সহজ নয়। বাংলাদেশের সংবিধান রচনার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৭ বার তা সংশোধন করা হয়েছে। কোনো কোনো দেশের আইনসভা সংবিধানের ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। যেমন- সুইজারল্যান্ডের আইনসভা সে দেশের সংবিধানের চূড়ান্ত ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে।

৩. শাসনসংক্রান্ত কাজ

বিশ্বের অনেক দেশেই আইনসভা শাসনসংক্রান্ত কিছু কাজ করে থাকে। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত বা সংসদীয় সরকারের আইনসভা শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানে শাসন বিভাগ তার যাবতীয় কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়ী থাকে। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের আইনসভার কথা বলা যায়। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থায়ও আইনসভা শাসনসংক্রান্ত কাজ করে থাকে। যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের সম্মতিক্রমেই প্রেসিডেন্ট উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগ দেন। আবার সিনেটের অনুমোদন ছাড়া প্রেসিডেন্টের পক্ষে সন্ধি, চুক্তি ইত্যাদি স্বাক্ষর ও যুদ্ধ ঘোষণা করা সম্ভব নয়।

৪. বিচারসংক্রান্ত কাজ

আইনসভার বিচার সংক্রান্ত কাজও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইনসভা কিছু বিচারসংক্রান্ত কাজ করে থাকে। সাধারণত আইনসভার উচ্চকক্ষই এ কাজ সম্পাদন করে। যুক্তরাজ্যের আইনসভার উচ্চকক্ষ হাউজ অব লর্ডস (House of Lords) সে দেশের আপিল বিভাগের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা রাষ্ট্রদ্রোহ, ঘুষ-দুর্নীতি বা অন্য কোনো গুরুতর অপরাধে সরকারপ্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান, বিচারপতি এবং সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অভিশংসন (Impeachment) বা অপসারণ করতে পারে।

৫. অর্থনৈতিক কাজ

রাষ্ট্রের সব গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক কার্যক্রম আইনসভার অনুমোদনের মাধ্যমে কার্যকর হয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় আইনসভাই জাতীয় অর্থ তহবিলের রক্ষক ও অভিভাবক হিসেবে কাজ করে। এটি সরকারের আর্থিক আয়-ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে। আইনসভার সম্মতি ছাড়া কোনো কর ধার্য বা ব্যয় বরাদ্দ করা যায় না। করারোপ ও ব্যয় বরাদ্দকরণের মাধ্যমে আইনসভা জনগণের উপার্জন ও জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করতে পারে। সরকারি অর্থব্যবস্থা জাতীয় অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে বলে আইনসভা কর্তৃক এর যথাযথ নিয়ন্ত্রণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের বার্ষিক বাজেট আইনসভায় গৃহীত না হলে তা কার্যকর হয় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা অর্থসংক্রান্ত ক্ষমতা স্বাধীনভাবেই প্রয়োগ করে থাকে। যুক্তরাজ্যের হাউজ অব কমন্সও (House of Commons) রাষ্ট্রের ব্যয় বরাদ্দ অনুমোদন বা হ্রাস করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ক্ষমতা ভোগ করে থাকে।

৬. সরকারি নীতি প্রণয়ন

আইনসভা বিভিন্ন সরকারি নীতিনির্ধারণে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। এসব নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইনসভা প্রশাসনিক প্রয়োজন, রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি, জাতীয় ঐতিহ্য, বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর মতামত বা ইচ্ছা ও জনমতের প্রতি গুরুত্বারোপ করে থাকে।

৭. জনমত গঠন

আইনসভা জনমত গঠনে বিশেষ সহায়ক। আইনসভায় অনুষ্ঠিত জনপ্রতিনিধিদের বিভিন্ন বিতর্ক ও আলোচনা রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। ফলে নাগরিকরা চলমান গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয় এবং সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে পারে, যা সুষ্ঠু জনমত গঠনে সহায়তা করে।

৮. নির্বাচনসংক্রান্ত কাজ

আইনসভা নির্বাচনসংক্রান্ত কাজও করে থাকে। যেমন- বাংলাদেশ ও ভারতে আইনসভার সদস্যদের ভোটেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে থাকেন। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের প্রতিনিধি আইনসভার মাধ্যমে নির্বাচিত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে সে দেশের আইনসভার নিম্নকক্ষ রাষ্ট্রপতিকে এবং উচ্চকক্ষ উপরাষ্ট্রপতিকে নির্বাচিত করে।

৯. অনুসন্ধান ও তল্লাশিমূলক কাজ

আইনসভার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান ও তল্লাশি পরিচালনা করা। আইনসভা জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে কমিটি গঠন করে অনুসন্ধানমূলক কাজ সম্পাদন করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ যুক্তরাজ্যের রাজকীয় অনুসন্ধান কমিশন (Royal Commission of Inquiry) -এর উল্লেখ করা যায়। আইনসভার এ ধরনের কমিশন বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সুপারিশ পেশ করে।

১০. শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ

আইনসভা আইন প্রণয়ন, নীতি নির্ধারণ এবং শাসন বিভাগের প্রত্যাশিত আইনের প্রস্তাবকে অনুমোদন অথবা নাকচ করার মাধ্যমে শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে। রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থায় এ নিয়ন্ত্রণ পরোক্ষভাবে করা হয়। কিন্তু সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় শাসন বিভাগের ওপর আইনসভার প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে। সংসদীয় সরকারের আইনসভা সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। আইনসভা বিভিন্ন উপায়ে শাসনবিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যেমন- প্রশ্ন জিজ্ঞাসা, বিতর্ক ও আলাপ-আলোচনা, মুলতুবি প্রস্তাব, নিন্দা প্রস্তাব, অনাস্থা প্রস্তাব প্রভৃতি।

আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণ | আইন বিভাগের ক্ষমতা হ্রাসের কারণ

১১. সংযোগ সাধনসংক্রান্ত কাজ

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আইনসভা সরকার ও জনগণের মধ্যে সংযোগ সাধনের কাজ করে। জনগণ কীভাবে, কী চায় এবং তাদের জন্য কী করা প্রয়োজন তা আইনসভার প্রতিনিধিরা শাসনবিভাগকে অবহিত করেন। এভাবেই সরকার ও জনগণের মধ্যে সংযোগ সাধিত হয়।

উপরোক্ত পোস্ট থেকে আপনারা আইনসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে জানতে পারলেন। ব্লগটি থেকে উপকৃত হলে অবশ্যই অন্যদের সাথেও শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।

Related Posts