Home » আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ভূমিকা আলোচনা কর
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ভূমিকা

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ভূমিকা আলোচনা কর

by Susmi
0 comment

আইনের শাসনের অর্থ আইনের প্রাধান্য স্বীকার করা এবং আইনানুযায়ী শাসন করা। অধ্যাপক এ. ভি. ডাইসি (A. V. Dicey) আইনের শাসনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন- (ক) আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, (খ) সবার জন্য একই প্রকার আইনের ব্যবস্থা থাকবে, (গ) কাউকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার করা যাবে না এবং (ঘ) বিনা বিচারে কাউকে আটক করা যাবে না। আইনের শাসনকে বলা যায় নাগরিক স্বাধীনতার রক্ষাকবচ। অধ্যাপক ডাইসি আইনের শাসনের যে ধারণা দিয়েছেন তা অনুসারে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বিচার বিভাগ। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগ যেসব ভূমিকা রাখতে পারে সেগুলো নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলো-

১. ন্যায় প্রতিষ্ঠা

বিচার বিভাগ প্রতিটি রাষ্ট্রে প্রচলিত রাষ্ট্রীয় আইন অনুসারে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। রাষ্ট্রীয় আইনের বৈশিষ্ট্য হলো এটি রাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য হয়। তাই বিচার বিভাগও বিচারের ক্ষেত্রে সর্বজনীনতা বজায় রাখে। বিচারের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ কোনোরূপ পক্ষপাতিত্ব করে না। তাই রাষ্ট্রে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি আইনের শাসনের প্রথম কথা ‘আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান’ তা বাস্তবরূপ লাভ করে।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কি বুঝ | বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রয়োজন কেন

২. নতুন আইনের সৃষ্টি

বিচারকার্য পরিচালনা করতে গিয়ে বিচারকগণ অনেক সময় প্রচলিত আইন যথেষ্ট স্পষ্ট নয় বলে মনে করেন। সেক্ষেত্রে বিচারাধীন কোনো মামলায় এই ধরনের আইন প্রয়োগ করার সময় বিচারকগণ সংশ্লিষ্ট আইনের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। এ ব্যাখ্যার ফলে প্রচলিত আইনের অস্পষ্টতা দূর হয়। অস্পষ্ট আইন থাকলে এবং বিচারকগণ তা মানতে বাধ্য হলে অনেক সময় নিরপরাধ ব্যক্তিও শাস্তি পেতে পারে। অর্থাৎ, বিচারকগণ আইনের ব্যাখ্যার মাধ্যমে নতুন আইন সৃষ্টি করেন এবং আইনের শাসনকে সুনিশ্চিত করেন।

৩. মৌলিক অধিকার রক্ষা

বিচার বিভাগ নাগরিকের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করে থাকে। পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রেই নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে নাগরিক বিচার বিভাগের শরণাপন্ন হতে পারে। বিনা অপরাধে গ্রেফতার না হওয়া এবং বিনা বিচারে আটক না থাকা নাগরিকের অন্যতম দুটি মৌলিক অধিকার। কোনো নাগরিকের এ মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে নাগরিক বিচার বিভাগের দ্বারস্থ হতে পারেন। মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে নাগরিক রিট আবেদন করতে পারেন। একজন নাগরিক সাধারণত চার রকমের রিট দায়ের করতে পারেন। যথা- (ক) নিষেধাজ্ঞামূলক, (খ) ম্যান্ডামাস, (গ) হেবিয়াস কর্পাস এবং (ঘ) কো-ওয়ারেন্টো। এ রিট আবেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও বিচার বিভাগ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারে।

৪. আপিল ক্ষমতা

কোনো নাগরিক যদি মনে করেন নিম্ন বা অধস্তন আদালতের রায়ে তিনি সন্তুষ্ট নন তবে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের আদালতই স্তরায়িত। যে কারণে নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ থাকে। বিচার বিভাগের এ ধরনের আপিল ক্ষমতাও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে।

৫. সুয়োমোটো (স্বপ্রণোদিত) রুল জারি

বিচার বিভাগ নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষায় ভূমিকা পালন করে। তবে অনেক ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে এমন নাগরিকের হয়তো আদালতে শরণাপন্ন হওয়ার মতো অবস্থা বা সামর্থ্য নেই। কিন্তু গণমাধ্যমে এ ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হলে বিচার বিভাগ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে থাকে। এ ধরনের রুল বা আদেশ জারিকে সুয়োমোটো রুল বলে আখ্যায়িত করা হয়।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কিভাবে রক্ষা করা যায়? – বিস্তারিত আলোচনা

সুতরাং বলা যায়, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। তবে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে যেমন আইনের শাসন কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রকৃত ঘটনা আদালতে উপস্থাপনের দায়িত্বে যারা নিয়োজিত থাকেন তারা বিচার বিভাগের অধীনস্থ নয় বরং শাসন বিভাগের অধীন। যে কারণে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের পুরোপুরি কার্যকর ভূমিকা পালন করা সম্ভব হয় না।

Related Posts