Home » আন্তর্জাতিক ব্যবসায় পরিবেশের উপাদান সমূহ আলোচনা কর
আন্তর্জাতিক ব্যবসায় পরিবেশের উপাদান সমূহ,

আন্তর্জাতিক ব্যবসায় পরিবেশের উপাদান সমূহ আলোচনা কর

by Susmi
0 comment

আন্তর্জাতিক ব্যবসায় পরিবেশের উপাদান সমূহ

প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় আয়তন অন্য দেশের ব্যবসায়ের সাথে জড়িত থাকলে বা অন্য দেশের ব্যবসায় দ্বারা প্রভাবিত হলে তাকে আন্তর্জাতিক পরিবেশ বলে। বিশ্বায়নের ফলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিকীকরণের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। তাই ব্যবস্থাপনার উপর আন্তর্জাতিক পরিবেশের ব্যাপক প্রভাব লক্ষণীয়। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিবেশগত উপাদান ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করে। নিচে ব্যবস্থাপনার উপর প্রভাব বিস্তারকারী আন্তর্জাতিক ব্যবসায় পরিবেশের উপাদান গুলো আলোচনা করা হলো:

১. বিশ্ব ব্যবসায় পরিবেশ

বিশ্বায়নের ফলে এককভাবে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো যৌথ উদ্যোগে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। ফলে ছোট খাটো, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হুমকির সম্মুখীন হয়। তাছাড়া বর্তমানে ইন্টারনেটের অনলাইনে যোগাযোগ করে ক্রেতা-ভোক্তা ঘরে বসে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের কাঙ্ক্ষিত দ্রব্য ও সেবা পায়। তাই গতানুগতিকতা পরিহার করে বর্তমানে বিশ্বায়নের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ব্যবস্থাপনাকে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়।

ব্যবসায় পরিবেশ কি | ব্যবসায় পরিবেশের উপাদান সমূহ আলোচনা কর

২ . বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিবেশ

বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিবেশ সকল দেশের উপর প্রভাব বিস্তার করে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিবেশ – বিবেচনা করে ব্যবস্থাপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সাধারণত উন্নয়নশীল দেশগুলো দাতা দেশগুলোর সাহায্যের উপর ভিত্তি করে তাদের বাজেট পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, অস্থিতিশীল রাজনীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অনেক দেশে সাহায্যের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে বিভিন্ন আঞ্চলিক জোট গঠন বা চুক্তি সম্পাদিত হলেও আন্তর্জাতিক অর্থসংস্থানকারী প্রতিষ্ঠান। যেমন- আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF), আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (IDA) এবং বিশ্বব্যাংক (WB) এর প্রেসক্রিপশনের উপর অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করছে। তাই আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে ব্যবস্থাপনাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়।

৩. বিশ্ব তথ্য ও প্রযুক্তিগত পরিবেশ

তথ্য প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নও ব্যবস্থাপনাকে ব্যাপক প্রভাবিত করছে। তাই উন্নত কলাকৌশল ও প্রযুক্তির অধিকারী দেশগুলো ব্যবসায়-বাণিজ্যে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করছে। তাছাড়া তথ্য প্রযুক্তি উন্নয়নের ফলে ইন্টারনেট এবং অনলাইন ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করছে। কিন্তু দরিদ্র দেশগুলোর পক্ষে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে চলা সম্ভবপর হচ্ছে না। তাই অনুন্নত ও দরিদ্র দেশ দক্ষতার সাথে ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

৪. বিশ্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশ

সারা বিশ্বে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও এক ধরনের পরিবেশ গড়ে উঠেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক উন্নয়নের কারণে বিভিন্ন দেশে আবহমানকাল থেকে চলে আসা স্বকীয় সংস্কৃতি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। বিশ্বের সকল দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দুয়ার সারা বিশ্বের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে। পোশাকে-আশাকে, কথা-বার্তায়, চলন-বলনে, আচার-ব্যবহারে, খাদ্য-খাবারে যেন বিশ্বায়নের প্রভাব পড়েছে। শক্তিশালী গণমাধ্যমগুলোর কারণে নতুন প্রজন্মের মধ্যেও বিশ্বায়নের জোয়ার বইছে।

৫. বিশ্ব রাজনৈতিক পরিবেশ

বিশ্ব রাজনীতির বিভিন্ন দিকও আন্তর্জাতিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিভিন্ন সহযোগিতামূলক চুক্তি সম্পাদিত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে যে ব্যবসায়িক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে তা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দ্বারা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একক শক্তিশালী অবস্থানের কারণে বিভিন্ন দেশ রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা লাভের স্বার্থে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক তাদের পক্ষই সমর্থন করছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ইত্যাদির মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বিশ্ব রাজনীতির কূটচালে আবর্তিত হচ্ছে।

ব্যবসায়ের অবস্থান নির্ধারণে বিবেচ্য বিষয় সমূহ আলোচনা কর

৬. বিশ্ব আইনগত পরিবেশ

বিশ্বায়নের ফলে এক দেশের প্রণীত আইন অন্য দেশে প্রভাব বিস্তার করছে। ফলে সমস্ত পৃথিবীতে তথা জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আইনগত আবহাওয়া তৈরি হচ্ছে। যেমন- আন্তর্জাতিক শিশু শ্রম নিষিদ্ধ থাকায় বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পে শিশু কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সন্ত্রাসবিরোধী আইন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, অভিবাসনসংক্রান্ত আইনগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে মেনে চলতে হচ্ছে। তাই যে কোনো দেশ তথা সংগঠনের ব্যবস্থাপকের এ সকল আইন মেনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হচ্ছে।।

পরিশেষে বলা যায়, বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটছে। তাই এক দেশের জনগণ অপর দেশের খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে। এমতাবস্থায় ব্যবস্থাপনাকে সকলের সহানুভূতি বিবেচনা করে ও আন্তর্জাতিক পরিবেশের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

Related Posts