Home » আমলাতন্ত্র কি | আমলাতন্ত্র কাকে বলে | আমলাতন্ত্রের সংজ্ঞা দাও
আমলাতন্ত্র কি, আমলাতন্ত্র কাকে বলে, আমলাতন্ত্রের সংজ্ঞা দাও,

আমলাতন্ত্র কি | আমলাতন্ত্র কাকে বলে | আমলাতন্ত্রের সংজ্ঞা দাও

by Susmi
0 comment

আমলাতন্ত্র কি বা কাকে বলে?

অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ফ্রান্সে আমলাতন্ত্র ধারণাটির উৎপত্তি ঘটে। ফরাসি অর্থনীতিবিদ দ্য গুরনে (De Gourmey) ফরাসি ভাষায় শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। ‘আমলা’ মূলত আরবি শব্দ। এর অর্থ আদেশ পালনকারী বা বাস্তবায়নকারী। আবার আমলাতন্ত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘Bureaucracy’। শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ফরাসি শব্দ ‘ব্যুরো’ (Bureau) এবং গ্রিক শব্দ ‘ক্রেটিন’ (Kratein) থেকে। ‘Bureau’ শব্দের অর্থ টেবিল বা দপ্তর (Desk) আর ‘Kratein’ শব্দের অর্থ শাসন। অতএব উৎপত্তিগত অর্থে আমলাতন্ত্র হলো দপ্তরনির্ভর শাসন বা Desk Government। যেসব সরকারি কর্মচারী সরকারের আদেশ পালন ও বাস্তবায়ন করে তাদেরকে আমলা বলা হয়। আর আমলাদের সামগ্রিক প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে বলা হয় আমলাতন্ত্র।

রাজনৈতিক সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা কর

আমলাতন্ত্রের সংজ্ঞা

প্রখ্যাত জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) সর্বপ্রথম আমলাতন্ত্রের একটি আইনগত ও যুক্তিসঙ্গত মডেল উপস্থাপন করেন।

মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক জন ম্যাকডোনান্ড ফিফনার (John McDonald Pfiffner) এবং আর ভি প্রেসথাস (Robert Vance Presthus) এর মতে, ‘আমলাতন্ত্র হচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং তাদের কার্যাবলিকে এমন এক পদ্ধতিতে সংগঠিত করা যা সুসংহতভাবে গোষ্ঠী শ্রমের উদ্দেশ্য অর্জনে সক্ষম হয়।’ (Bureaucracy is the systematic organization of tasks and individuals into a pattern which can effectively attain the end of group effort.)

অধ্যাপক এইচ, জে, লাস্কি (H.J. Laski) বলেন, ‘আমলাতন্ত্র বলতে সাধারণত সেই ধরনের শাসনব্যবস্থাকে বোঝায়, যাকে সরকারি কর্মচারীবৃন্দ পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন, তাদের ক্ষমতা সাধারণ নাগরিকদের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে’। (Bureaucracy is the term usually applied to a system of government the central of which so completely in the hands of officials that their power jeopardizes the liberties of ordinary citizens.)

মার্কিন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ পল এইচ অ্যাপলবি (Paul Henson Appleby) আমলাতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমলাতন্ত্র বলতে অভিন্ন ও জটিল শর্তে পরস্পর একত্রিত অনেক ব্যক্তির সুসংহত মিথস্ক্রিয়াকেই বোঝায়।’ (Bureaucracy is inseparable from the phenomenon of systematic interaction of many persons associated in common and complex terms.)

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক অগ (Professor Ogg) আমলাদের বর্ণনায় বলেন, ‘এরা হচ্ছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দ যারা দক্ষ, পেশাদারি, অরাজনৈতিক, স্থায়ী এবং অধীন।’ (The body of the civil servants is an expert, professional, non-political, permanent and subordinate staff.)

আধুনিক যুগের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অ্যালমন্ড ও পাওয়েল (Almond & Powell)-এর মতে, ‘আমলাতন্ত্র হলো একটি বৃত্তের সংগঠন, যার মাধ্যমে শাসকবর্গ বা বিধান প্রণেতাগণ নিজেদের সিদ্ধান্তকে কার্যকর করার চেষ্টা করেন।’ (Bureaucracy is a large organization, in which the executive their own decision.)

ব্রিটিশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক হারম্যান ফাইনার (Herman Finer) এর মতে, ‘আমলাতন্ত্র বা সিভিল সার্ভিস হলো সেসব পেশাদার কর্মকর্তার সমষ্টি যারা স্থায়ীভাবে কর্মে নিয়োজিত, বেতনভুক্ত ও দক্ষ।’ (The civil service is a body of officials, permanent, paid and skilled.)

মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক গার্নার (Professor James Wilford Garner) বলেন- “যে শাসনব্যবস্থায় সরকারের কার্যাবলি মূলত স্থায়ী সরকারি কর্মচারিগণ কর্তৃক সম্পাদিত হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন, তাকে আমলাতন্ত্র বলা হয়।”

ওপরের আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত, সরকারের স্থায়ী বেতনভুক্ত, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, দক্ষ, রাজনীতিনিরপেক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তাদের বলা হয় আমলা। আর আমলাদের মাধ্যমে পরিচালিত শাসনব্যবস্থাকে বলা হয় আমলাতন্ত্র।

রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রকারভেদ আলোচনা কর

প্রখ্যাত জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবারকে আমলাতন্ত্রের জনক বলা হয়। তিনি আমলাতন্ত্রের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও আধুনিক সংজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘Essays in Sociology’ তে আমলাতন্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তার মতানুসারে, যদি কোনো সংস্থা বা সংগঠন আয়তনে বিশাল আকার ধারণ করে, তা হলে তার সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য একদিকে দরকার নির্দিষ্ট নিয়মনীতি এবং সাথে সাথে দরকার একদল বিশেষ পরিচালকের। এসব ব্যক্তি নির্দিষ্ট পরিধির মধ্যে ক্রমোচ্চ শ্রেণিকাঠামোর মধ্যে সংগঠিত। তারা নির্ধারিত কাজ দায়িতের সাথে এবং সঠিকভাবে সম্পাদন করেন। সরকারি কর্মচারীর সব পদাধিকারী ব্যক্তি আমলাতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত। ম্যাক্স ওয়েবারের এ ধারণা অনুসারে আমলা বলতে প্রশাসনে নিযুক্ত সব স্তরের কর্মচারীকে বোঝায়। কিন্তু বর্তমানে প্রশাসনে রাজনৈতিক ও অ-রাজনৈতিক এ দুই শ্রেণির লোকই দেখা যায়। প্রশাসনের রাজনৈতিক পদাধিকারীগণ নিদিষ্ট সময়ের জন্য নিযুক্ত হন। যেমন- মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ইত্যাদি। প্রশাসন পরিচালনার রাজনৈতিক দায়িত্ব তাদের উপর ন্যস্ত থাকে। তারাই সরকারি নীতি, সিদ্ধান্ত, কার্যাবলি, কর্মসূচি, সরকারের সাফল্য এবং ব্যর্থতার রাজনৈতিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

আমলাতন্ত্রের জনক কে?

আমলাতন্ত্রের জনক হলেন জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার।

ভারতবর্ষে আমলাতন্ত্রের জনক কে?

ভারতবর্ষে আমলাতন্ত্রের জনক হলেন লর্ড কর্ণওয়ালিস।

Related Posts