Home » ক্ষমতার ভারসাম্য নীতি কি? – ব্যাখ্যা কর
ক্ষমতার ভারসাম্য নীতি কি, ক্ষমতার ভারসাম্য নীতি,

ক্ষমতার ভারসাম্য নীতি কি? – ব্যাখ্যা কর

by Susmi
0 comment

ক্ষমতার ভারসাম্য নীতি

ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে সরকারের ক্ষমতাকে পৃথক করার ওপর অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও দার্শনিক গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল (Aristotle) থেকে শুরু করে আধুনিক যুগে সপ্তদশ শতাব্দীর ফরাসি দার্শনিক মন্টেস্কু (Montesquieu)-এর হাতে এসে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। তবে সরকারের তিনটি বিভাগ একেবারে আলাদাভাবে অবস্থান করতে পারে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি ব্যাপকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানকে ‘ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের এক ব্যাপক প্রবন্ধ’ বলে উল্লেখ করেছেন সংবিধান প্রণেতারা। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে সেখানেও শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয়। এক বিভাগ অন্য বিভাগের ওপর কোনো না কোনোভাবে নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট আইন বিভাগকে বাণী প্রেরণ করে প্রভাবিত করতে পারেন। তিনি কংগ্রেস প্রেরিত যেকোনো বিলে ভেটো (Veto) প্রয়োগ করতে পারেন। আবার প্রেসিডেন্টকেও যুদ্ধ ঘোষণা, সন্ধি স্থাপন, শান্তি চুক্তি এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য অবশ্যই কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত এবং কংগ্রেস প্রণীত আইনকে বাতিল করে দিতে পারে। এভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের পাশাপাশি ক্ষমতার ভারসাম্যও পরিলক্ষিত হয়।

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কি? ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রবক্তা কে?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা ও ভারসাম্য নীতি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা ও ভারসাম্য নীতি

যুক্তরাজ্যের দিকে তাকালে আমরা দেখি, সেখানে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো এতটা কঠোরভাবে পালিত না হলেও কাঠামোগত ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ লক্ষ করা যায়। যুক্তরাজ্যেও সরকারের আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ আছে। কিন্তু আইন বিভাগীয় ও শাসন বিভাগীয় ক্ষমতার একত্রীকরণ ঘটেছে বলে এ দুই বিভাগকে সেভাবে আলাদা করে দেখা যায় না। কারণ ক্যাবিনেট সদস্যরা সবাই পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ অর্থাৎ কমন্স সভা থেকে আগত। প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলেও এর বাইরে থেকে ক্যাবিনেট সদস্য গ্রহণ করতে পারেন না। আবার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ অর্থাৎ লর্ড সভায় ৯ জন বিচার বিভাগীয় ব্যক্তি বিচার বিভাগীয় কাজ সম্পন্ন করেন। এই ৯ জন ব্যক্তি হচ্ছেন আইন বিশারদ এবং তারা ল’ লর্ড (Law Lords) নামে অভিহিত। এজন্যই বলা হয় যুক্তরাজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একাধারে ব্যক্তিগত ও কাঠামোগত পৃথকীকরণ নেই, সেখানে রয়েছে মূলত কাঠামোগত পৃথকীকরণ।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ভূমিকা আলোচনা কর

বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশে সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বিদ্যমান। এ কারণে যুক্তরাজ্যের মতো বাংলাদেশেও কাঠামোগত স্বতন্ত্রীকরণ বিদ্যমান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো এখানে কাঠামোগত ও ব্যক্তিগত উভয় প্রকার ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ পরিলক্ষিত হয় না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আইনসভার সদস্যদের মধ্য থেকে ক্যাবিনেট সদস্যদের ধাছাই করেন। ফলে জাতীয় সংসদের সদস্যরা মন্ত্রিসভা (Cabinet) তথা শাসন বিভাগেরও সদস্য। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা এবং সংসদেরও নেতা। এতে করে আইন বিভাগ এবং শাসন বিভাগ এক ঘনিষ্ঠ বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। আবার বাংলাদেশের বিচার বিভাগের দিকে তাকালেও দেখা যায়, এখানে বিচার বিভাগ আলাদাভাবে সংগঠিত হলেও তা এখনও সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন নয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পদ চিরতরে বিলুপ্ত হয়নি। বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা শাসন বিভাগ কর্তৃক নিয়োগ লাভ করে থাকেন। তাছাড়া জেলার ডেপুটি কমিশনার শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগীয় দায়িত্ব পালন করেন। এতে করে এখানে আইন ও শাসন ক্ষমতার একত্রীকরণ দেখা যায়। তবে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে আনুষ্ঠানিকভাবে পৃথক করা হয়েছে। ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করা হয়েছে। সংবিধানের বিধান সাপেক্ষে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ও বিচারকগণ বিচার কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দান করেন। এখনও যদিও বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের ছায়া রয়ে গেছে, তবুও আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে তা দূর হবে।

অতএব, উপরের আলোচনা থেকে আপনারা ক্ষমতার ভারসাম্য নীতি সম্পর্কে জানতে পারলেন।

Related Posts