Home » ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কি? ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রবক্তা কে?
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কি, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রবক্তা কে,

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কি? ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রবক্তা কে?

by Susmi
0 comment

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি এর অর্থ এই যে, সরকারের কাজকে তিনটি ভিন্ন বিভাগের মধ্যে বিভক্ত করা। তিনটি বিভাগ হচ্ছে আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ। প্রতিটি বিভাগ এর স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কার্য পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। অর্থাৎ, এ নীতি অনুসারে আইন বিভাগ আইন প্রণয়ন করবে, শাসন বিভাগ আইনকে কার্যকর করবে এবং বিচার বিভাগ উক্ত আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করবে। এভাবে সরকারের তিনটি বিভাগ তাদের স্ব-স্ব কাজে ও বিভাগে নিয়োজিত থাকবে এবং এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করবে না। এটাই ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূলকথা।

১. এরিস্টটলের অভিমত

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল সর্বপ্রথম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির কথা উল্লেখ করেন। এরিস্টটল ছিলেন স্বেচ্ছাচারতন্ত্রের ঘোর বিরোধী এবং ব্যক্তি-স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সঙ্গত কারণেই তিনি স্বেচ্ছাচারিতা রোধ করার লক্ষ্যে ক্ষমতা বিভাজনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে তিনি তিন ভাগে ভাগ করার কথা বলেন। যথা- আলোচনামূলক (Deliberative), শাসন সংক্রান্ত (Majesterial) এবং বিচার সংক্রান্ত (Judicial)।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ভূমিকা আলোচনা কর

২. সিসেরো ও পলিবিয়াসের অভিমত

রোমান আইনজ্ঞ সিসেরো এবং পলিবিয়াস রোমের শাসন ব্যবস্থায় তিনটি বিভাগের উল্লেখ করেন। তারা উভয়ে শাসনকার্যের সুবিধার জন্য সরকারের ক্ষমতা বিভাজনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। মধ্যযুগের মার্সিলিও অব পাদুয়া (Marsilio of Padua) আইন ও শাসন ক্ষমতাকে আলাদা করা বাঞ্ছনীয় বলে উল্লেখ করেন।

৩. মন্টেস্কুর অভিমত

ফরাসি দার্শনিক মন্টেস্কু তার ‘The Spirit of Laws’ নামক গ্রন্থে সরকারের ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ধারণা ব্যক্ত করেছেন। মন্টেস্কু বলেন, ‘যখন আইন সংক্রান্ত ও শাসন সংক্রান্ত বিষয় একই ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের হাতে কেন্দ্রীভূত হয় তখন জনগণের স্বাধীনতা খর্ব হয়। আবার যদি আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ও শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা থেকে আলাদা না হয় তাহলেও স্বাধীনতা থাকে না।’

৪. মার্সিলিও এর অভিমত

মধ্যযুগে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি পণ্ডিতদের আলোচনার মূল উপজীব্য বিষয় ছিল। ধর্মতাত্ত্বিক নেতাগণ, ধর্মীয় সাধু বা পুরোহিতগণ এ সময় রাজনৈতিক বিষয় বিশেষ করে রাষ্ট্র ও ধর্মের সম্পর্ক নিয়ে বেশি ভাবতেন। ঐ সময়ে জন্মগ্রহণ করেও পাদুয়া নামক স্থানের মনীষী মার্সিলিও শাসন বিভাগ ও আইন পরিষদের কার্যক্রমের পার্থক্য নির্দেশ করে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের নির্দেশ দেন। তিনি রাষ্ট্র এবং চার্চের ধর্মীয় কাজের পার্থক্যও নির্দেশ করেন।

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োজনীয়তা

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করে দিয়ে সরকারের স্বৈরাচারী প্রবণতা রোধ করে। মন্টেস্কু উল্লেখ করেছেন যে, আইন প্রণয়নের ক্ষমতা যাদের হাতে ন্যস্ত তারা যদি আইন কার্যকরও করেন, তাহলে তারা নাগরিকদের ওপর স্বৈরতান্ত্রিক শাসন চাপিয়ে দিতে পারেন। আবার যদি বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা ও আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা একই ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে তা হলেও ব্যক্তিস্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হতে বাধ্য। সুতরাং যখন সরকারের ক্ষমতা (আইন, শাসন ও বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা) স্বতন্ত্রভাবে ভিন্ন ভিন্ন বিভাগের মধ্যে বিভক্ত করে দেওয়া হয় এবং এক বিভাগ অপর বিভাগের কাজে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ না করে তখনই কেবল ব্যক্তিস্বাধীনতা যথাযথভাবে রক্ষিত হতে পারে। বস্তুত ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সরকারের স্বৈরাচারী প্রবণতার প্রতি কুঠারাঘাত করে ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষাকবচরূপে কাজ করে।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কিভাবে রক্ষা করা যায়? – বিস্তারিত আলোচনা

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রবক্তা কে?

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রবক্তা হলেন ফরাসি লেখক মন্টেস্কু।

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল কথা কি?

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল কথা হলো সরকারের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ; আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগ আলাদা আলাদাভাবে অর্থাৎ স্বতন্ত্র শাখা দ্বারা পরিচালিত হবে।

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কোন দেশে আছে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ করা হয়েছে।

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অস্তিত্ব রয়েছে কোন দেশে?

যুক্তরাষ্ট্রে

Related Posts