জনমতের গুরুত্ব
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনমতের গুরুত্ব অপরিসীম। গণতন্ত্র ও জনমত প্রায় সমার্থক শব্দ। গণতন্ত্র হচ্ছে ‘জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা, জনগণের শাসন।’ জনসম্মতির ভিত্তিতেই গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। জনমত গণতন্ত্রের ভিত্তি, গণতন্ত্রের প্রাণ। জনমতের ওপর গণতন্ত্রের সাফল্য নির্ভরশীল। জনমতের ভিত্তিতেই আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহ পরিচালিত হয়। জনমতের গুরুত্ব নিম্নরূপ:
১. জনমত গণতন্ত্রের ভিত্তি: জনমত গণতন্ত্রের ভিত্তিস্বরূপ। জনসম্মতির ভিত্তিতেই গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।
২. স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ: জনমত দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে সহায়তা করে। যথার্থ জনমতের কারণেই রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব টিকে থাকতে পারে।
জনমতের সংজ্ঞা দাও | জনমত কি বা জনমত কাকে বলে |
৩. জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ: জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণে জনমতের গুরুত্ব অপরিসীম। সুষ্ঠু জনমত নাগরিক অধিকার ও স্বার্থ বিঘ্নিত হতে দেয় না।
৪. আইন প্রণয়ন ও পরিবর্তন: গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইন প্রণয়ন ও পরিবর্তনে জনমতের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কেননা জনমতের প্রভাবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইন প্রণয়ন ও পরিবর্তন হয়।
৫. রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে: রাষ্ট্র পরিচালনায়, মূলনীতি নির্ধারণে, আইনকানুন প্রণয়নে, শাসনসংক্রান্ত রীতিনীতি নির্ধারণে, শাসনতন্ত্র পরিবর্তন ও পরিবর্ধনে জনমতের গুরুত্ব অপরিসীম।
৬. স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ আনয়ন: জনমত রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা আনয়নে ভূমিকা রাখে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা টিকিয়ে রাখে। এ কারণে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমতের প্রভাবে বিপ্লব কিংবা অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় না।
৭. জনহিতকর কাজে সহায়তা: সরকার জনকল্যাণ সাধনের জন্য যে কর্মসূচি প্রণয়ন ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে, তা সাধারণত জনমতের দিকে লক্ষ রেখেই করা হয়ে থাকে।
৮. সুষ্ঠু গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা: সুষ্ঠু জনমতের কারণে সজাগ ও সজ্ঞান গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে।
৯. ব্যক্তি ও সামাজিক স্বার্থের সমন্বয়: অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও সামাজিক স্বার্থ স্বতন্ত্র হয়। ফলে এ দুই স্বার্থের মধ্যে স্বন্দ্ব বাধে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনমত এ দুই স্বার্থের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।
১০. সরকারকে গতিশীল করে: জনমত সরকারকে গতিশীল হতে সাহায্য করে। জনমতের চাপে সরকার রক্ষণশীল মনোভাব পরিত্যাগ করে। সরকার যুগোপযোগী ও প্রগতিশীল কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।
১১. গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী: জনমতকে গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী বলা হয়। সরকার জনমতের বিরুদ্ধে যেতে পারে না। ফলে অগণতান্ত্রিক কাজ করার সুযোগ পায় না। সুতরাং গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে জনমতের গুরুত্ব অপরিসীম।
১২. জনপ্রতিনিধি নির্বাচন ও সরকার গঠন: আধুনিক প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচন ও সরকার গঠনের ক্ষেত্রে জনমত মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দল জনমতকে ভয় করে চলে। জনমত গণতান্ত্রিক সরকারকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।
১৩. সরকারের স্থায়িত্ব: জনগণের মতামত ছাড়া কোনো সরকারই স্থায়ী হতে পারে না। জনমতের আনুকূল্য সরকারকে স্থায়ী ও শক্তিশালী করে।
১৪. স্বেচ্ছাচারিতা রোধ: জনমতকে অস্বীকার করে স্বৈরাচারী শাসকগণ দীর্ঘকাল ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না। জনমতের চাপের মুখে পড়ে অনেক স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে। গণতন্ত্রে সদাজাগ্রত জনমত সরকারের স্বেচ্ছাচার রোধ করে গণতন্ত্রের স্বরূপ বজায় রাখে।
জনমত গঠনের বাহন সমূহ আলোচনা কর |
সুতরাং বলা যায়, বর্তমান বিশ্বে যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে জনমত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জনমত ব্যতীত গণতন্ত্র সফল ও স্থায়ী হয় না। এর সমর্থন ও সহযোগিতা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে। জনমত জনগণের রাজনৈতিক চিন্তাধারাকে বিকশিত করে। তাছাড়া এটি যুক্তিভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে দ্রুততার সাথে জাতীয় সমস্যার সমাধান করে থাকে।