Home » প্রবন্ধ কাকে বলে? প্রবন্ধ লেখার ‍নিয়ম বা কৌশল আলোচনা কর
প্রবন্ধ কাকে বলে প্রবন্ধ লেখার নিয়ম বা কৌশল

প্রবন্ধ কাকে বলে? প্রবন্ধ লেখার ‍নিয়ম বা কৌশল আলোচনা কর

by Susmi
1 comment

প্রবন্ধ কাকে বলে?

চিন্তার ‘প্রকৃষ্টবন্ধনযুক্ত’ রচনাকর্মকে সংস্কৃততে প্রবন্ধ আখ্যা দেয়া হতো। প্রবন্ধের প্রকৃতি প্রত্যয়গত অর্থ হলো ‘প্রকৃষ্ট বন্ধন’। অর্থাৎ, প্রকৃষ্ট রূপের বন্ধনই হলো প্রবন্ধ। প্রবন্ধের ইংরেজি শব্দ হলো ‘Essay’ । তবে প্রবন্ধের আরো একাধিক সমার্থক ইংরেজি শব্দ হতে পারে। যেমন- Article, Paper ইত্যাদি।

বাংলা প্রবন্ধের ইতিহাস

মানব সমাজে চিন্তার বিকাশের ইতিহাসের সঙ্গে প্রবন্ধের বিস্তার ও বিকাশের ইতিহাস পরস্পর বিজড়িত ও সংলগ্ন। মানুষ তার কথাগুলো যখনই অন্যকে বলতে চেয়েছে বা অন্যকে তার মত করে বুঝাতে চেয়েছে তখনই সে আবিষ্কার করেছে প্রবন্ধের রীতি। সে বুঝেছে এই মাধ্যমটির সাহায্যে সে সরাসরি তার বলবার কথাগুলো অন্যকে বুঝাতে বা অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে পারবে।

ইংরেজি ভাষায় প্রবন্ধের সূত্রপাত হয়েছে এখন থেকে প্রায় তিনশত বছর আগে। ফরাসি লেখক মঁতেন এর অনুসরণে ফরাসিতে এবং ফ্রান্সিস বেকনের অনুসরণে ইংরেজিতে প্রবন্ধ সাহিত্যের ধারা গড়ে উঠেছিল। ঐ দুই ভাষার প্রবন্ধ সাহিত্য আজ সমৃদ্ধির চরম শিখরে পৌঁছেছে। 

বাংলা ভাষায় প্রবন্ধ রচনার সূত্রপাত হয়েছে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে। বাংলাদেশে তখন সমাজ সংস্কার আন্দোলনের জোয়ার চলছে। রাজা রামমোহন রায় তাঁর একেশ্বরবাদী ধর্ম প্রবর্তনের মাধ্যমে বাঙালি সমাজে একটা প্রবল আন্দোলনের সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি তাঁর ধর্ম মতের এবং সমাজ সংস্কার আন্দোলন, বিশেষ করে সতীদাহ প্রথা নিবারণের বিষয় নিয়ে নিয়মিত প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। আর সেগুলো প্রকাশ করেছিলেন ‘সম্বাদ কৌমুদী’ ও তৎকালের অন্যসব পত্র-পত্রিকায়।

আরও পড়ুন:   বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য রচনা

রাম মোহন প্রবর্তিত ধর্মমত যেহেতু সংস্কারাবদ্ধ হিন্দু সমাজে প্রবল অভিঘাত সৃষ্টি করেছিল ফলে গোঁড়া হিন্দুরা গড়ে তুলেছিল রাম মোহনের বিরুদ্ধে শক্ত সমর্থ বিরোধী পক্ষ। তাঁরাও রামমোহনের সংস্কার আন্দোলন এবং ধর্ম মতকে অসার প্রমাণের জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন। এবং নিজেদের মতের সপক্ষে পত্রিকায় লিখে চলেছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বাঙালি সমাজে যে তর্ক-বিতর্ক, উত্তর-প্রত্যুত্তরের সাহিত্য রচিত হতে শুরু করেছিল তার ওপর ভিত্তি করেই মূলত বাংলা ভাষায় প্রবন্ধের সূত্রপাত ঘটে।

রাজা রামমোহনের পর অক্ষয়কুমার দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এঁদের চিন্তাশীল রচনার মধ্যদিয়ে বাংলা ভাষায় প্রবন্ধ রচনার একটি প্রতিষ্ঠিত ভিত্তি তৈরি হয়। পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু প্রমুখের রচনার মধ্য দিয়ে বাংলা প্রবন্ধ পুষ্প শোভিত হয়ে ওঠে। আজ বাংলা ভাষায় রচিত প্রবন্ধ সাহিত্য পৃথিবীর যে কোন ভাষায় রচিত প্রবন্ধের সমান মর্যাদা ও সমৃদ্ধির সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে।

প্রবন্ধ লেখার নিয়ম বা কৌশল

যে কোন বিষয়ে প্রবন্ধ লেখার শুরুতেই রচনাকারীকে বিষয়বস্তুটি ভালভোবে লক্ষ্য করতে হয়। বিষয়টির গুরুত্ব ও তাৎপর্য নির্ধারণ করতে হয় তারপরই। তারপর প্রবন্ধকার বিষয় সম্পর্কে নিজের বক্তব্যগুলো নির্ধারণ করবেন। অর্থাৎ প্রবন্ধের বিষয় সম্পর্কে তার কী বলবার অছে সেগুলোকে নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় নোট সংগ্রহ করবেন। তারপর তিনি কোন পদ্ধতিতে তার যুক্তিগুলো উপস্থাপন করবেন তা নির্ধারণ করবেন। কারণ তথ্য ও যুক্তির পারম্পর্য সফল ও সার্থক প্রবন্ধের পূর্বশর্ত।

প্রবন্ধকে তিনটি অংশে বিভাজন করে নেয়া প্রয়োজন; সূচনা, মূলবক্তব্য ও উপসংহার। সূচনা অংশে প্রবন্ধকার তাঁর বিষয়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করবেন। কেন তিনি বিষয়টি নিয়ে একটি প্রবন্ধ রচনা করতে যাচ্ছেন তার কার্যকারণ ব্যাখ্যা করবেন। মূল বক্তব্য অংশে প্রবন্ধকার তাঁর যুক্তিজাল বিস্তার করবেন এবং ধাপে ধাপে তাঁর বক্তব্যকে সুশৃঙ্খলভাবে উপস্থাপন করবেন। এ অংশে তিনি বিষয়ের পক্ষে ও বিপক্ষে যত ‍যুক্তি ও পাল্টা যুক্তি অর্থাৎ রেফারেন্স ও ক্রস রেফারেন্স প্রদান করবেন। এবং সেই সঙ্গে পক্ষে-বিপক্ষের যুক্তিগুলোকে আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে একটি সাধারণ সত্যে উপনীত হবার চেষ্টা করবেন। আর উপসংহার অংশে প্রবন্ধকার তাঁর মতামতসহ সমগ্র বক্তব্যের একটি সংক্ষিপ্তসার উপস্থাপন করবেন। কোন কোন ক্ষেত্রে এ অংশে প্রবন্ধকার বিষয়বস্তুর দাবী অনুযায়ী আলোচনালব্ধ পরামর্শ ও সুপারিশ প্রদান করতে পারেন।

প্রবন্ধের যে তিনটি অংশের কথা বলা হল, তা যেন একটি জৈবিক ঐক্যে গ্রথিত হয়। অর্থাৎ, সূচনা, মূলবক্তব্য ও উপসংহার অংশ তিনটি যেন পরস্পর পরস্পরের সম্পূরক হয়- সেগুলো যেন কোনভাবেই তিনটি বিচ্ছিন্ন অংশে পরিণত না হয়। মনে রাখা দরকার, সূচনা অংশেরই বিবর্ধিত রূপ পাওয়া যাবে মূল বক্তব্য অংশে। আবার একইভাবে, উপসংহার অংশে থাকতে হবে সূচনা ও মূলবক্তব্য অংশের অর্থাৎ সমগ্র অংশের সংক্ষিপ্ত সার।

প্রবন্ধ মূলত ভাষা ও যুক্তির শিল্পরূপ। এ কারণে রচনাকারের ভাষাগত দক্ষতা ও সাবলীলতা একটি আকর্ষণীয় প্রবন্ধ লেখার পূর্বশর্ত। আর ভাষাগত দক্ষতা ও সাবলীলতা অর্জিত হয় ভাষার নিয়মিত ও পর্যাপ্ত অনুশীলনের মাধ্যমে। এজন্য সার্থক প্রবন্ধকার হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে নিয়মিত ভাষার অনুশীলন করতে হবে।

এবং আসুন প্রবন্ধ লেখার নিয়ম বা কৌশলগুলো সূত্রাকারে উপস্থাপন করি-

ক) প্রবন্ধ রচনার শুরুতে মূল বক্তব্য স্থির করতে হবে;

খ) বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ের নোট সংগ্রহ করতে হবে;

গ) যুক্তির পারস্পর্য সাজিয়ে নিতে হবে;

ঘ) প্রবন্ধটি তিনটি অংশে বিভক্ত করতে হবে;

ঙ) প্রবন্ধের তিনটি অংশ জৈবিক ঐক্যে সংগ্রথিত হতে হবে;

চ) প্রবন্ধের ভাষা নির্ধারিত হবে বিষয়বস্তু অনুসারে;

ছ) প্রবন্ধে ব্যবহৃত তথ্য ও তত্ত্বের যথাযথ সূত্র নির্দেশ করতে হবে; এবং

জ) রচনারীতির ব্যাপারে লেখকের বিবেচনা বোধ প্রখর হতে হবে।

 

Related Posts

1 comment

Comments are closed.