প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি
সাধারণভাবে বলা চলে, যে যৌথ মূলধনী কোম্পানির সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা ৫০ জন এবং সর্বনিম্ন সদস্য সংখ্যা ২ জন মাত্র তাকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বলে।
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির সুবিধা
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির সুবিধাগুলো নিম্নরূপ:
১. সহজ গঠন: প্রাইভেট লি. কোম্পানির গঠন প্রণালি অন্যান্য কোম্পানি অপেক্ষা সহজতর। এরূপ গঠনগত সুবিধা এ কোম্পানিতেই পাওয়া সম্ভব।
২. চিরন্তন অস্তিত্ব ও কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা: এ ধরনের কোম্পানি নিবন্ধনের সাথে সাথে চিরন্তন অস্তিত্বসম্পন্ন ও কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তাবিশিষ্ট ব্যবসায় সংগঠনরূপে আইনগত অধিকার অর্জন করে।
৩. সীমিত দায়: এ কোম্পানির শেয়ার মালিকগণের দায় ক্রীত শেয়ারের আংশিক মূল্য দ্বারা সীমিত।
যৌথ মূলধনী কোম্পানির বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
৪. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সুবিধা: সদস্য সংখ্যা কম হওয়ায় ব্যবসায় পরিচালনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সুবিধা হয়।
৫. দক্ষ ব্যবস্থাপনা: পুঁজির স্বল্পতা না থাকায় অধিক বেতনে দক্ষ ব্যবস্থাপক নিয়োগ করে এ ব্যবসায়ে দক্ষ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যায়।
৬. কার্যারম্ভের সুবিধা: এ জাতীয় ব্যবসায় নিবন্ধনের পরই তার স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করতে পারে। কোনো কার্যারম্পের অনুমতি পত্র নিতে হয় না।
৭. বিবরণীপত্র প্রচার: এ ধরনের কোম্পানিকে শেয়ার বিক্রির জন্য বিবরণীপত্র প্রচার করতে হয় না। (ধারা-১৪২)।
৮. বিধিবদ্ধ সভা আহবান: কোম্পানি আইনের ৮৩ (১২) ধারা মতে, বিধিবদ্ধ সভা আহ্বান প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
৯. পরিচালনার সুবিধা: এরূপ ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিচালকমন্ডলী গঠন করা বাধ্যতামূলক নয়-সদস্যদের মধ্য থেকেই যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারে।
১০. আইনগত বাধ্যবাধকতা কম: এ ধরনের কোম্পানির গঠন, পরিচালন, নিয়ন্ত্রণ, হিসাবপত্র সংরক্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আইনগত বাধ্যবাধকতা অনেক কম।
১১. সদস্য তালিকা: কোম্পানি আইনের ৩৫ ধারা মতে এর সদস্যদের তালিকা প্রস্তুত করতে হয় না।
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির অসুবিধা
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির বিশেষ অসুবিধা রয়েছে। এ অসুবিধাগুলো নিম্নরূপ:
১. সীমিত সদস্য: এ কোম্পানির সদস্য সংখ্যা কমপক্ষে ২ জন ও সর্বোচ্চ ৫০ জনে সীমিত থাকায় প্রয়োজনে দক্ষ ব্যক্তিকে সদস্য হিসেবে গ্রহণ করা যায় না।
২. সীমিত পুঁজি: এর শেয়ার মালিকের সংখ্যা কম হওয়ায় পুঁজির পরিমাণও কম হয়। ফলে বৃহদায়তন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান করা কষ্টসাধ্য হয়।
৩. শেয়ার বা ঋণপত্র বিক্রয়: এ কোম্পানির শেয়ার বা ঋণপত্র জনগণের মধ্যে বিক্রি করা যায় না। ফলে আর্থিক সংকট মোকাবিলা করা কঠিন হয়।
৪. শেয়ার হস্তান্তর: প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার অবাধে হস্তান্তর করা যায় না।
৫. সম্প্রসারণে বিঘ্নতা: শেয়ার মালিকের ঊর্ধ্বে সংখ্যা সীমিত থাকায় পর্যাপ্ত পুঁজি বিনিয়োগ করে ব্যবসায় সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করা যায় না।
যৌথ মূলধনী কোম্পানির গঠন প্রণালী আলোচনা কর
৬. হিসাবপত্রে কারচুপির সম্ভাবনা: এ কারবারের হিসাবপত্র সনদপ্রাপ্ত নিরীক্ষক দ্বারা নিরীক্ষিত হয় না বলে কারচুপির সম্ভাবনা থাকে।
৭. মূলধনের অপর্যাপ্ততা: সদস্য সংখ্যা সীমিত হবার কারণে স্বভাবতই এরূপ কারবারের ক্ষেত্রে অধিক মূলধন যোগান দেয়া সম্ভব হয় না।
সর্বশেষে বলা যায় প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির উপরোক্ত অসুবিধাগুলো থাকা সত্ত্বেও এটি একযোগে বৃহদায়তন ব্যবসায় ও অংশীদারি কারবারের সব সুবিধাই ভোগ করে। ফলে অসুবিধাগুলোর গুরুত্ব অনেক হ্রাস পায়।