Home » বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা | বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য রচনা
বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য রচনা, বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা

বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা | বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য রচনা

by Susmi
0 comment

বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা বা বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য রচনা প্রায়ই বিভিন্ন পরীক্ষায় এসে থাকে। প্রতিবার রচনাটি পড়ার জন্য বই খোলা অনেকের কাছে বিরক্তের হতে পারে। এখন স্মার্ট যুগ। আর তাই পড়ালেখাও স্মার্ট না হলে চলে? এখন ল্যাপটপ বা অ্যান্ড্রয়েড ফোনেই বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা বা বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য রচনা লিখে সার্চ দিলেই এই রচনাটি পড়তে পারবেন যেকোনো সময় যেকোনো জায়গা থেকে। চলুন তবে রচনাটি শুরু করি।

বাংলাদেশের ষড়ঋতু / বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য

ভূমিকা

ষড়ঋতুর দেশ হলো বাংলাদেশ। এর ছয়টি ঋতু গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্তের ধারাবাহিক আবর্তন বাংলাদেশকে করে তোলে বৈচিত্র্যময়। প্রত্যেকটি ঋতুরই রয়েছে নিজস্ব এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। এক এক ঋতু আমাদের জীবনে আসে এক এক রকম ফুল, ফল আর ফসলের সম্ভার নিয়ে। বাংলার প্রকৃতিতে ষড়ঋতুর পালাবদল অফুরন্ত সৌন্দর্যের আলপনা আঁকে। তাতে আমাদের চোখ জুড়িয়ে যায়, মন উদ্বেল হয়ে উঠে আনন্দে। গ্রীষ্মের দাবদাহ, বর্ষার সজল মেঘের বৃষ্টি, শরতের আলো-ঝলমল স্নিগ্ধ আকাশ, হেমন্তের ফসলভরা মাঠ, শীতের শিশিরভেজা সকাল আর বসন্তের পুষ্প সৌরভ বাংলার প্রকৃতি ও জীবনে আনে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া। আর ঋতুচক্রের এই আবর্তন বাংলাদেশকে সত্যিই রূপের রানীতে পরিণত করেছে।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী (ডিলাক্স): বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান - Oshomapto  Attojiboni (Deluxe): Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman

TK. 330 TK. 288

ঋতুচক্রের আবর্তন

বাংলাদেশের ঋতু পরিবর্তনের মূলে রয়েছে জলবায়ুর প্রভাব ও ভৌগোলিক অবস্থান। এ দেশের উত্তরে রয়েছ সুবিশাল হিমালয় পর্বতমালা, দক্ষিণে প্রবাহিত বঙ্গোপসাগর। বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে হাজার নদীর স্রোতধারা। মৌসুমি বায়ুর প্রবাহে সৃষ্টি হয় বৃষ্টি। বৃষ্টির ধারা এ দেশের মাটিকে উর্বর করে তোলে, যা বঙ্গ বুককে ফুল-ফসলে ভরে তোলে। এ দেশের বুক চিরে বয়ে চলা হাজারো নদীর স্রোত বয়ে আনে পলিমাটি। সে মাটির প্রাণরসে সজীব হয় বন-বনানী, শ্যামল শসালতা। তার সৌন্দর্যে এ দেশের প্রকৃতি হয়ে ওঠে অপরূপ। নব নব রূপে সজ্জিত হয়ে পর পর ছয়টি ঋতু আসে এ দেশে। এমন বৈচিত্র্যময় ঋতুর দেশ পৃথিবীর আর কোথাও নেই।

ঋতু পরিচয়

ক্যালেন্ডারের হিসেবে বছরের বারো মাসের প্রতি দুই মাসে এক এক ঋতু। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ দুই মাস গ্রীষ্মকাল, আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল, ভাদ্র-আশ্বিন শরৎকাল, কার্তিক-অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল, পৌষ-মাঘ শীতকাল এবং ফাল্গুন-চৈত্র বসন্তকাল। তবে সবসময় মাসের হিসেব মেনে ঋতুর পালাবদল চলে না। তা ছাড়া ঋতুর পরিবর্তন রাতারাতি বা দিনে দিনেও হয় না। অলক্ষে বিদায় নেয় একঋতু, আগমন ঘটে নিঃশব্দে নতুন কোনো ঋতুর। প্রকৃতির এক অদৃশ্য নিয়মে যেন বাঁধা ঋতুচক্রের এই আসা-যাওয়া।

গ্রীষ্ম

বাংলাদেশের ঋতুচক্রের প্রথম ঋতু গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মে বাংলাদেশের রূপ হয়ে ওঠে রুক্ষ ও শুষ্ক। প্রচণ্ড খরতাপ আর খাঁ খাঁ রোদ্দুরে মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির হয়। নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর শুকিয়ে যায়। কখনো তপ্ত বাতাসে যেন আগুনের ফুলকি ছুটতে থাকে। ক্লান্তি আর তৃষ্ণায় বুক শুকিয়ে আসে পথিকের। কখনো উত্তর-পশ্চিম আকাশের কোণে কালো হয়ে মেঘ জমে। হঠাৎ ধেয়ে আসে কালবৈশাখী ঝড়। বছরের পুরোনো সব আবর্জনা ধুয়ে মুছে যায়। জ্যৈষ্ঠ মাস আসে ফলের সম্ভার নিয়ে। আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, লিচু ইত্যাদি নানারকম মৌসুমি ফলের সমারোহ গ্রীষ্মঋতুকে করে তোলে রসময়।

বর্ষা

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহের পর আসে বর্ষা। আকাশে দেখা দেয় ঘন কালো মেঘ। তারপর অঝোর ধারায় নামে বৃষ্টি। স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ে ঘরে ঘরে। আষাঢ়-শ্রাবণের বর্ষণে জেগে ওঠে বৃক্ষলতা। কখনো একটানা বৃষ্টিতে খাল-বিল, পুকুর-নদী সব কানায় কানায় ভরে ওঠে। বর্ষার পল্লিপ্রকৃতি তখন এক অপরূপ সৌন্দর্যে ভরে ওঠে। এমন সৌন্দর্যে মোহিত রূপ ফুটে ওঠে রবীন্দ্রনাথের কবিতায়-

“নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে
ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।
বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর
আউশের খেত জলে ভরভর
কালি-মাখা মেঘে ওপারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ চাহি রে।”

বর্ষা সবসময় রূপের সৌন্দর্য দেখায় না। একটানা বৃষ্টিতে বাংলাদেশের নিচু এলাকাগুলো পানিতে ডুবে যায়। নদীতে দেখা দেয় ভাঙন। বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দেয় বন্যা। এমনকি শহরাঞ্চলও জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বর্ষায় গরিব মানুষের দুঃখ-কষ্ট বেড়ে যায়। মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়।

আরও পড়ুন:   বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য রচনা

শরৎ

এক ঝলমলে ঋতু হলো শরৎ। বর্ষার বৃষ্টি-ধোয়া আকাশ শরতে হয়ে ওঠে নির্মল। তাই শরতের আকাশ থাকে নীল। শিমুল তুলোর মতো সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায় আকাশে। এ সময় শিউলি ফুল ফোটে, নদীর তীরে ফোটে সাদা কাশফুল। নির্মল আকাশে শরতের জ্যোৎস্না হয় অপরূপ ও মনোলোভা। ঘাসের বুকে শিশিরের মৃদু ছোঁয়ায় স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে শরতের সকাল।

হেমন্ত

হেমন্ত বাংলাদেশের ফসল-সমৃদ্ধ ঋতু। এসময় সোনালি ফসলে ভরে থাকে সারা মাঠ। কৃষকের মুখে থাকে হাসি। কাস্তে হাতে পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত থাকে কৃষক। নতুন ফসল ওঠায় ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্নের উৎসব। পাকা ধানের সোনালি দৃশ্য সত্যি মনোমুগ্ধকর। সন্ধ্যা ও সকালে চারদিকে ঘন হয়ে কুয়াশা নামে। এসময় থেকে শীতের আমেজ পাওয়া যায়।

শীত

বাংলাদেশের হিমশীতল ঋতু শীত। শীত আসে কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে। শীতে বিবর্ণ হয়ে গাছের পাতা ঝরে পড়ে। সকাল হলেও অনেক সময় সূর্যের মুখ দেখা যায় না। শীতে জড়সড় হয়ে যায় মানুষ ও প্রাণিকুল। এসময় শীতের প্রচণ্ডতা থেকে রক্ষা পেতে সবাই গরম কাপড় পরে। দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীতের প্রকোপ থাকে সবচেয়ে বেশি। স্বচ্ছল মানুষদের জন্য শীত তেমন কষ্টের না হলেও আশ্রয়হীন, শীতবস্ত্রহীন দরিদ্র মানুষ এসময় খুব কষ্টে থাকে। শীত কেবল যে হিমশীতল বিবর্ণ ঋতু তা নয়। শীতকালের প্রকৃতি নানারকম শাকসবজির সম্ভার নিয়ে আসে। গ্রামবাংলায় এ সময় খেজুর রস ও পিঠা-পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে যায়।

বসন্ত

বসন্তকে বল হয় ঋতুরাজ। শীতের রুক্ষ, বিবর্ণ দিনগুলোর অবসান ঘটিয়ে বসন্ত আসে বর্ণিল ফুলের সম্ভার নিয়ে। বাংলার নিসর্গলোক এ সময় এক নতুন সাজে সজ্জিত হয়। পুষ্প ও পল্লবে ছেয়ে যায় বৃক্ষশাখা, গাছে গাছে আমের মুকুল আর ফুলে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন শোনা যায়। মৃদুমন্দ দখিনা বাতাস আর কোকিলের কুহুতান বসন্তের এক অপরূপ মাধুর্য সৃষ্টি করে।

উপসংহার

বাংলাদেশ বিচিত্র সৌন্দর্যের লীলাভূমি। ষড়ঋতুর ধারাবাহিক পরিক্রমায় এখানে দেখা যায় বৈচিত্র্যময় রূপ। গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতি, বর্ষার জলসিক্ত জীবন, শরতের কাশফুল, হেমন্তের নবান্নের উৎসব, শীতের কুয়াশামাখা সকাল আর বসন্তের পুষ্প-পল্লব, সর্বোপরি বাংলাদেশের ষড়ঋতু এর ভিন্ন ভিন্ন রূপ বাংলাদেশকে করেছে বিচিত্ররূপিণী। প্রকৃতির এমন বৈচিত্র্যময় রূপ পৃথিবীর আর কোথাও কি আছে?

আরও পড়ুন:   বাংলা নববর্ষ রচনা । পহেলা বৈশাখ রচনা

Related Posts