Home » ব্যবসায়ের আওতা ও পরিধি বর্ণনা কর
ব্যবসায়ের আওতা ও পরিধি বর্ণনা কর,

ব্যবসায়ের আওতা ও পরিধি বর্ণনা কর

by Susmi
0 comment

ব্যবসায়ের আওতা ও পরিধি

অভাব পূরণের প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা উৎপাদন, বণ্টন এবং বণ্টনের সহায়ক যাবতীয় কার্যাবলি ব্যবসায়ের অন্তর্ভুক্ত। এক কথায় উৎপাদনের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ হতে শুরু করে পণ্য বা সেবা ভোক্তার হাতে পৌছানো পর্যন্ত সকল কার্যাবলি ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত। এ দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবসায়ের আওতাকে প্রধানত শিল্প, বাণিজ্য, শিল্প ও বাণিজ্যের সহায়ক কার্যাবলি এবং প্রত্যক্ষ সেবা এ চারটি শ্রেণিতে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে। উল্লেখ্য যে, ব্যবসায়ের আওতা ব্যবসায়ের প্রকারভেদ হিসেরে বিবেচিত হয়। নিচে ব্যবসায়ের আওতা ও পরিধি আলোচনা করা হলো:

১. শিল্প (Industry)

শিল্প ব্যবসায়ের উৎপাদন কার্যের সাথে জড়িত। পণ্য উৎপাদনের যাবতীয় কার্যাবলিকে শিল্প বলা হয়। শিল্পের সমুদয় কার্যাবলিই ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত। শিল্পকে আবার কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

(i) প্রজনন শিল্প (Genetic industry): প্রজনন প্রক্রিয়ায় সম্পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে প্রজনন শিল্প বলে। যেমন- গাছ-গাছড়ার চারা আবাদ, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু পালন ইত্যাদি প্রজনন শিল্পের অন্তর্গত।

(ii) নিষ্কাশন শিল্প (Extractive industry): প্রকৃতিপ্রদত্ত সম্পদকে নিষ্কাশনের মাধ্যমে রূপগত উপযোগ সৃষ্টি করাকে নিষ্কাশন শিল্প বলে। যেমন- মৎস্য শিকার, খনিজ সম্পদ উত্তোলন ইত্যাদি।

ব্যবসায়ের কার্যাবলী আলোচনা কর

(iii) নির্মাণ শিল্প (Construction industry): বাসগৃহ, রাস্তাঘাট, সেতু, বাঁধ, রেলপথ প্রভৃতি নির্মাণ কাজে নিযুক্ত শিল্পই হলো নির্মাণ শিল্প।

(iv) উৎপাদন শিল্প (Manufacturing industry): কাঁচামালকে প্রক্রিয়াজাত করে রূপগত উপযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের ব্যবহারোপযোগী করে তোলা উৎপাদন শিল্পের কাজ। এ শিল্পকে যান্ত্রিক শিল্পও বলা হয়।

(v)সেবা পরিবেশক শিল্প (Service industry): মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ ও আরামপ্রদ করার জন্য যে শিল্প নিয়োজিত তাকে সেবা পরিবেশক শিল্প বলে। যেমন- বিদ্যুৎ, ‘গ্যাস, পানি, টেলিফোন ইত্যাদি বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান।

২. বাণিজ্য (Commerce)

বাণিজ্য ব্যবসায়ের বণ্টন ও বিনিময় সংক্রান্ত শাখা। উৎপাদিত পণ্য ও সেবাকর্ম উৎপাদকের নিকট থেকে ক্রয় বা সংগ্রহ করে ভোগকারী জনগণের নিকট পৌঁছানোর সকল কার্যাবলি বাণিজ্যের আওতাধীন। বাণিজ্যের কার্যক্ষেত্রকে আবার নিম্নোক্ত ছয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা:

(i) পণ্য বণ্টন (Products distribution): পণ্য বণ্টন ব্যবসায়-বাণিজ্যের ব্যক্তিগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে। এটি মূলত পণ্যদ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত। এর মাধ্যমে পণ্যের মালিকানা স্বত্ব এক ব্যক্তির কাছ থেকে অন্য ব্যক্তির নিকট স্থানান্তর করা হয়। এটি আবার দু’প্রকার। যথা:

(ক) অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (Home trade): দেশের অভ্যন্তরে পণ্য দ্রব্যাদির ক্রয়-বিক্রয় বা বণ্টন কার্যকে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলে। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য আবার দু’প্রকার। যথা:

(অ) পাইকারি ব্যবসায় (Wholesale business): উৎপাদনকারী বা আমদানিকারকের নিকট হতে অধিক পরিমাণে পণ্যসামগ্রী একত্রে ক্রয় করে তা খুচরা ব্যবসায়ীর নিকট বিক্রয় করাকে পাইকারি ব্যবসায় বলে।

(আ) খুচরা ব্যবসায় (Retail business): পাইকার বা আমদানিকারকদের নিকট হতে অধিক পরিমাণে পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লটে ভাগ করে ভোক্তাদের নিকট বিক্রয় করা হলে তাকে খুচরা ব্যবসায় বলে।

(খ) বৈদেশিক বাণিজ্য (Foreign trade): পণ্যদ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয় বা বণ্টন কার্য যখন এক দেশ থেকে অন্য দেশের মধ্যে সংঘটিত হয় তখন তাকে বৈদেশিক বাণিজ্য বলে। বৈদেশিক বাণিজ্য আবার তিন প্রকার। যথা:

(অ) আমদানি (Import): বিদেশ হতে পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে আনাকে আমদানি বলে। বর্তমান বিশ্বের সকল দেশই কমবেশি বিদেশ হতে পণ্য আমদানি করে।

(আ) রপ্তানি (Export): বিদেশে বা বিদেশি কোনো ব্যবসায়ীর নিকট পণ্য বিক্রয় করাকে রপ্তানি বলে। কোনো দেশের রপ্তানির পরিমাণ আমদানি অপেক্ষা বেশি হলে সে দেশ অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারে।

(ই) পুনঃরপ্তানি (Re-export): বিদেশ হতে পণ্যসামগ্রী আমদানি করে তা পুনরায় অন্য দেশে রপ্তানি করা হলে তাকে পুনঃরপ্তানি বলে।

(ঈ) পরিবহন (Transportation): পরিবহনের মাধ্যমে পণ্যের স্থানগত উপযোগের সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ এর মাধ্যমে একস্থান থেকে অন্যস্থানে পণ্য সরবরাহ করা যায়।

(ii) বিমা (Insurance): বিমা বাণিজ্যের ঝুঁকিগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে। পণ্যসামগ্রীর উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার কাছে পৌছানো পর্যন্ত যে কোনো ধরনের ঝুঁকিগত প্রতিবন্ধকতা বিমা কোম্পানি বহন করে।

(iii) গুদামজাতকরণ (Warehousing): গুদামজাতকরণ বাণিজ্যের সময়গত প্রতিবন্ধকতা দূর করে। একে সময়গত উপযোগ সৃষ্টি বলে। পণ্যসামগ্রী উৎপাদনের পর হতে ভোগের সময় পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে তা সংরক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। পণ্য উৎপাদন হয় এক সময়ে কিন্তু ভোগ হয় তার পরবর্তী অন্য আরেকটি সময়ে। এজন্য গুদামজাতকরণ প্রয়োজন।

(iv) ব্যাংকিং (Banking): বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এছাড়াও আর্থিক নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু লেনদেনের উপর ব্যবসায়-বাণিজ্যের উন্নয়ন নির্ভর করে। ব্যাংক ব্যবসায় অর্থসংসস্প্যানগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে। কেননা ব্যাংকসমূহ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে মূলধন সরবরাহ করে।

(v) বিজ্ঞাপন (Advertisement): বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জনগণকে পণ্য সম্পর্কে অবগত করিয়ে তাদেরকে পণ্য ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ করা হয়। সুতরাং বিজ্ঞাপনও বাণিজ্যের মধ্যে পড়ে।

৩. শিল্প ও বাণিজ্যের সহায়ক কার্যাবলি (Auxiliaries to industry and commerce)

শিল্প ও বাণিজ্যের সহায়ক বিভিন্ন প্রকার কার্যাবলি। যেমন- পণ্য ও বাজার গবেষণা, বিক্রয় উন্নয়ন কার্যক্রম ইত্যাদি যাবতীয় কার্যাবলি পণ্য বণ্টনের আওতাধীন।

ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য সমূহ আলোচনা কর

৪. প্রত্যক্ষ সেবা (Direct service)

অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে ও মানুষের অবস্থানগত সম্প্রষ্টি বিধানের জন্য যেসব প্রত্যক্ষ সেবামূলক কার্য ও পেশাগত শ্রম বিনিময় করা হয় সেগুলোও ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত। এগুলো হচ্ছে ডাক্তারের সেবা, নর্তকীর নৃত্য, গায়কের গান, আইনজীবীর আইনী পরামর্শ ইত্যাদি।

সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য নিয়ে বস্তুগত ও অবস্তুগত চাহিদা মেটানোর জন্য মানুষের সম্পাদিত যাবতীয় কাজ ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত।

আশাকরি, উপরের আলোচনা থেকে আপনারা ব্যবসায়ের আওতা ও পরিধি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সক্ষম হয়েছেন।

Related Posts