ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ভারতীয় জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটতে থাকে। ভারতীয় জাতীয়তাবাদী চেতনা উন্মেষের প্রথম ফসল হলো ১৮৮৫ সালে ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’ প্রতিষ্ঠা। মূলত ব্রিটিশ সরকারের কাছে ভারতীয়দের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরার জন্য একটি প্লাটফর্ম বা রাজনৈতিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা থেকেই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের জন্ম হয়। ব্রিটিশ ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন থেকেই স্বাধিকার ও স্বাধীনতা লাভ সকল ক্ষেত্রে। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি বা কাকে বলে ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল |
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পটভূমি
ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৮৮৫ সালের ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাকে সর্বাপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা উপমহাদেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিকাশে এবং ভারতীয় জনগণের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে। আর সি মজুমদার-এর মতে, “A new era in the political life of India began with the foundation of the Indian National Congress towards the very end of the year 1885,” ব্রিটিশ ভারতে ভারতীয়দের প্রথম সুসংগঠিত রাজনৈতিক সংগঠন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (Indian National Congress, 1885)। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। ব্রিটিশ সরকারের শাসন ও শোষণনীতির ফলে ভারতবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। শুরু থেকেই ভারতীয় জনগণ ব্রিটিশ নীতির কারণে শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছিল। ভারতবর্ষে প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠন এবং স্বায়ত্তশাসনসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে উচ্চশিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জনগণের সচেতন ভূমিকার কারণে একটি স্থায়ী সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্র তৈরি হয়।
১৮৭৬ সালে ভারতসভা (Indian Association) নামে একটি সংগঠন গড়ে ওঠে যা ব্রিটিশ সরকারের সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণ আইন (Vernacular Press Act) Arms Act এর বিরোধিতা করে। এর ফলে ব্রিটিশদের সাথে ভারতীয়দের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এদিকে ১৮৮৩ সালে ইলবার্ট বিল পাস হলে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ভারতীয় জনগণের ঘৃণা ও অসন্তোষ বৃদ্ধি পেতে থাকে। পাশাপাশি ভারতীয় জাতীয়তা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ব্রিটিশ সরকার দমননীতির পাশাপাশি গণঅসন্তোষের শান্তিপূর্ণ সমাধানের উপায় খুঁজতে একজন ভারতদরদি ইংরেজ ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের প্রাক্তন কর্মকর্তা স্যার এলান অক্টোভিয়ান হিউম ১৮৮৩ সালে একটি খোলা চিঠির মাধ্যমে ভারতীয়দেরকে একটি স্থায়ী সংগঠন গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। এভাবে হিউম-এর উদ্যোগে ১৮৮৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর বোম্বে শহরে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে ‘সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’ (All India National Congress) নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। স্যার সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, দাদাভাই নওরোজী, উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ নেতৃবৃন্দের প্রচেষ্টায় ব্রিটিশ সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ভারতের ধনিক ও ব্রিটিশদের অনুগত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্ররূপে কংগ্রেস বিকশিত হতে থাকে। এভাবে কংগ্রেসের গড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী (মহাত্মা গান্ধী), মতিলাল নেহেরু, জওহরলাল নেহেরু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, মওলানা আবুল কালাম আজাদ, সুভাষ চন্দ্র বসু প্রমুখ নেতৃবৃন্দ কংগ্রেসে যোগ দিয়ে ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিশেষত স্বরাজ ও স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবিকে আরও বেগবান করে তুলেছিলেন।
সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর |
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
১৮৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর সর্বপ্রথম অধিবেশন বসে বোম্বে শহরে। উক্ত অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন কলকাতার প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কংগ্রেসের চারটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা ঘোষণা করেন।
তবে জাতীয় কংগ্রেস ভারতীয় জনগণের সুসংগঠিত একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম (Political Platform)। এ সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে ভারতীয় জনগণের অভাব- অভিযোগ দূর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার প্রতি ব্রিটিশ সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট করা, শাসনব্যবস্থায় জনগণের অংশীদারিত্ব অর্জন এবং বিভিন্ন প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য আবেদন জানানো। ১৯০৫-১৯০৬ সালের দিকে এসে কংগ্রেসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রধানত দুটি দাবিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতে থাকে। সেগুলো হলো-
১. স্বরাজ লাভের দাবি ও
২. পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি।