Home » মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি বা প্রেক্ষাপট এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি, মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট,

মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি বা প্রেক্ষাপট এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

by Susmi
0 comment

মুসলিম লীগ

১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারতের জাতীয় কংগ্রেস অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও অল্পকালের মধ্যে তা সাম্প্রদায়িক সংগঠনে পরিণত হয় এবং কেবল হিন্দুদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্বের দিকে ঝুঁকে পড়ে। যার ফলে ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখা দেয়। মুসলমানদের স্বার্থ উপেক্ষিত হওয়ায় তারা একটি স্বতন্ত্র সংগঠনের মাধ্যমে স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন অনুভব করে। এক পর্যায়ে ১৯০৬ সালে কতিপয় মুসলিম নেতৃবৃন্দের প্রচেষ্টায় ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ’ নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের জন্ম হয়।

বঙ্গভঙ্গ রদের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর

মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি বা প্রেক্ষাপট

মুসলিম লীগ একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মুসলমানদের বিভিন্ন দাবি- দাওয়া নিয়ে এ সংগঠনের জন্ম হয়। এ সংগঠনের আবির্ভাবের পেছনে যেসব ঘটনা ও কারণ নিহিত ছিল তা নিচে তুলে ধরা হলো-

১. কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা

১৮৮৫ সালে All India National Congress অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠলেও তাতে মুসলমানদের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। মূলত কংগ্রেস ছিল একটি হিন্দু রাজনৈতিক সংগঠন। কংগ্রেসের নেতৃত্বে ছিলেন শীর্ষস্থানীয় হিন্দু নেতৃবৃন্দ। ফলে তারা ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় একক প্রভাব-প্রতিপত্তি বজায় রাখত। এমনকি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্যও মুসলমানদেরকে স্থানীয় হিন্দু নেতাদের দ্বারস্থ হতে হতো। এরূপ অবস্থায় মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সংগঠনের প্রয়োজন দেখা দেয়।

২. স্যার সৈয়দ আহম্মদ খানের ভূমিকা

ঐতিহাসিক আলীগড় আন্দোলনের নেতা এবং উপমহাদেশের বিশিষ্ট ইসলামি ব্যক্তিত্ব স্যার সৈয়দ আহম্মদ খান ভারতীয় মুসলমানদের রাজনৈতিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অনেক আন্দোলন-সংগ্রামে নিজেকে ব্যাপৃত রাখেন। তিনি মুসলমানদের ভারতীয় কংগ্রেসে যোগদানের বিরোধিতা করেন। কারণ তিনি অনুভব করেন যে কংগ্রেসের মাধ্যমে মুসলমানদের স্বার্থের প্রতিফলন ঘটবে না। আবার কংগ্রেসের কতিপয় মুসলমান বিরোধী কর্মকাণ্ডের ফলে কংগ্রেসে মুসলমানদের যোগদান আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পায়।

৩. বঙ্গভঙ্গের প্রতিক্রিয়া

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কারণে ব্রিটিশ সরকার Divide and Rule নীতির ভিত্তিতে বাংলাকে বিভক্ত করে দুটি প্রদেশের সৃষ্টি করলে ভারতের হিন্দু সমাজ এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু করে। স্বদেশী আন্দোলন, ব্রিটিশ পণ্য বর্জন ইত্যাদি কর্মসূচির মাধ্যমে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। বঙ্গভঙ্গের ফলে মুসলমানদের মধ্যে আশার সঞ্চার হলেও তাদের কোনো স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন না থাকায় কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি, ফলে ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ গঠনের মাধ্যমে মুসলমানরা আন্দোলন গড়ে তোলে।

বঙ্গভঙ্গের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর

৪. সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা

রাজনৈতিক স্বার্থ এবং সামাজিক অবস্থানগত কারণে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে কারণে-অকারণে বারংবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি হয়েছে যাতে বহু প্রাণহানি ও বিপুল সম্পদের ক্ষতিসাধন হয়েছে। এজন্য মুসলমানগণ স্বতন্ত্র সংগঠনের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালায়।

৫. মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন নীতি স্বীকৃত

১৯০৬ সালের অক্টোবর মাসে আগাখানের নেতৃত্বে কতিপয় মুসলমান প্রতিনিধি ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেলের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তারা মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের দাবি জানান। গভর্নর জেনারেল সহানুভূতির সাথে উক্ত দাবি বিবেচনা করেন। এতে উৎসাহিত হয়ে মুসলমানগণ একটি মুসলিম সংগঠন প্রতিষ্ঠার সংকল্প করেন।

৬. সর্বভারতীয় শিক্ষা সম্মেলন ও মুসলিম লীগের জন্ম

১৯০৬ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে ঢাকায় All India Muslim Education Conference অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে মুসলমানদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। সম্মেলন শেষে নবাব ভিখারুল মূলক-এর সভাপতিত্বে একটি রাজনৈতিক সভার আয়োজন করা হয়। উক্ত সভায় ভাষণে তিনি বলেন, “মুসলমানদের প্রতি হিন্দুদের দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষ করে ভারতীয় কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গি তারা লক্ষ করেছেন এবং তা বঙ্গভঙ্গের সময় সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়। মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন প্রয়োজন এবং ব্রিটিশ সরকার তা দিতেও সম্মত হয়েছেন; কিন্তু এর পূর্বে যা প্রয়োজন তা হলো একটি সংগঠন গড়ে তোলা।”

এ ভাষণের পর নবাব সলিমুল্লাহ একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। উক্ত প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয় ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় আগত সদস্যদের এ সভা স্থির করে যে, All India Muslim League নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলা হবে। প্রস্তাবটি সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। অতঃপর ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় All India Muslim League প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এ সংগঠনের মাধ্যমেই মুসলমানগণ দাবি-দাওয়া আদায়ে সোচ্চার হয়।

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পটভূমি এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

প্রতিষ্ঠালগ্নেই All India Muslim League যেসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্থির করে তা হলো-

১. ব্রিটিশ সরকারের প্রতি মুসলমানদের আনুগত্য বৃদ্ধি করা এবং সরকারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সকল ভুল বোঝাবুঝির অবসান করা।

২. মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার ও স্বার্থরক্ষা করা এবং এ লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকারের কাছে মুসলমানদের দাবি ও আশা-আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরা।

৩. উপরিউক্ত দুটি লক্ষ্য ব্যাহত না করে ভারতের অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখা।

Related Posts