Home » যৌথ মূলধনী কোম্পানির গঠন প্রণালী আলোচনা কর
যৌথ মূলধনী কোম্পানির গঠন প্রণালী,

যৌথ মূলধনী কোম্পানির গঠন প্রণালী আলোচনা কর

by Susmi
0 comment

যৌথ মূলধনী কোম্পানির গঠন প্রণালী

বাংলাদেশে ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন অনুযায়ী নিবন্ধিকরণের মাধ্যমে কোম্পানি গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই কোম্পানি গঠন করতে হলে উক্ত আইনে বর্ণিত ধারায় অগ্রসর হতে হয়। নিম্নে যৌথ মূলধনী কোম্পানির গঠন প্রণালী বা পদক্ষেপসমূহ বর্ণনা করা হলো:

১. উদ্যোগ গ্রহণ

কোম্পানি গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে একাধিক ব্যক্তি কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং ব্যবসায়ের প্রকৃতি, সম্ভাবনা ও সাফল্য এবং এর বিভিন্ন দিক বিচার বিশ্লেষণ করে ব্যবসায় সংস্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২ জন এবং পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৭ জন উদ্যোক্তার প্রয়োজন হয়। যে সকল ব্যক্তি কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকেন তাদেরকে উদ্যোক্তা বা প্রবর্তক বলা হয়।

যৌথ মূলধনী কোম্পানি কাকে বলে এবং সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর

২. পরিকল্পনা প্রণয়ন

এ পর্যায়ে উদ্যোক্তাগণ কোম্পানি গঠনের জন্য একটি আদর্শ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। কোম্পানির নাম, প্রয়োজনীয় প্রাথমিক মূলধন, সম্ভাব্য প্রাথমিক খরচ, প্রয়োজনীয় শ্রমিক সংখ্যা, শেয়ারের সংখ্যা, শেয়ার মূল্য, সম্ভাব্য মুনাফার পরিমাণ ইত্যাদি বিষয় পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

৩. দলিলপত্র প্রস্তুত

পরিকল্পনা প্রণয়নের পর প্রস্তাবিত কোম্পানি নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় দলিলপত্র প্রস্তুত করতে হয়। যেমন- (ক) সংঘ স্মারক বা স্মারকলিপি বা পরিমেল বন্ধ। (খ) সংঘবিধি বা পরিমেল নিয়মাবলি।

(ক) সংঘ-স্মারক বা স্মারকলিপি বা পরিমেলবন্ধ: সংঘ-স্মারক বা পরিমেলবন্ধকে কোম্পানির মূল দলিল বলা হয়। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী সংঘ-স্মারক বা পরিমেল বন্ধে কোম্পানির নাম, কার্যালয়ের ঠিকানা, উদ্দেশ্য, মূলধন, দায় ইত্যাদি বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ থাকবে।

(খ) সংঘবিধি বা পরিমেল নিয়মাবলি: এটি কোম্পানির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এতে কোম্পানির দৈনন্দিন অভ্যন্তরীণ কার্যাবলির বিবরণ থাকে। অর্থাৎ কোম্পানি কিভাবে পরিচালিত হবে তা এই দলিলে উল্লেখ থাকে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সংঘবিধি বা পরিমেল নিয়মাবলি থাকতে হবে। তবে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে এটি থাকা বাধ্যতামূলক নয়। এক্ষেত্রে তফসিল-১ এ উল্লিখিত প্রবিধানসমূহ গ্রহণ করতে হয়।

৪. নিবন্ধনের পদক্ষেপ গ্রহণ

এ পর্যায়ে উদ্যোক্তাগণকে কোম্পানি নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করে নিবন্ধকের নিকট হতে আবশ্যকীয় ফরম ও অন্যান্য কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হয়। সংগৃহীত ফরম ও অন্যান্য কাগজপত্র যথাযথভাবে পূরণ করে উদ্যোক্তারা কোম্পানি নিবন্ধনের জন্য আবেদন পত্রের সাথে নিম্নোক্ত দলিলপত্র নিবন্ধকের নিকট দাখিল করেন:

(ক) প্রস্তাবিত কোম্পানির সংঘ-স্মারক ১ কপি। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হলে সর্বনিম্ন ২ জন এবং পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হলে সর্বনিম্ন ৭ জন সদস্যকে উক্ত সংঘ-স্মারকে স্বাক্ষর করতে হয়।

(খ) কোম্পানির সংঘবিধি ১ কপি সংঘস্মারকে যারা স্বাক্ষর করেন সংঘবিধিতেও তাদের স্বাক্ষর থাকতে হয়। তবে কোম্পানি আইনের তফসিল-১-এ বর্ণিত প্রবিধানসমূহকে সংঘবিধি হিসেবে গ্রহণ করা হলে সেক্ষেত্রে এই মর্মে একটি ঘোষণাপত্র উদ্যোক্তাগণকে দাখিল করতে হয়।

(গ) কোম্পানির পরিচালক হবার জন্য সম্মতিদানকারী ব্যক্তিপণের নামের তালিকা। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে এ তালিকা সংযুক্ত করতে হয় না।

(ঘ) পরিচালক হিসেবে কাজ করার জন্য একটি লিখিত সম্মতিপত্রে নিজের স্বাক্ষরযুক্ত ঘোষণাপত্র অথবা লিখিতভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রদত্ত ঘোষণাপত্র।

(ঙ) পরিচালক হিসেবে কোম্পানির নিকট থেকে যোগ্যতাসূচক শেয়ার গ্রহণ এবং তার মূল্য পরিশোধ করার নিমিত্তে একটি লিখিত চুক্তিপত্র।

যৌথ মূলধনী কোম্পানির গুরুত্ব আলোচনা কর

(চ) পরিচালক কর্তৃক তার যোগ্যতাসূচক শেয়ারের কম নয় এমন সংখ্যক শেয়ার তার নামে নিবন্ধিত করা হয়েছে এই মর্মে একটি এফিডেভিট।

(ছ) কোম্পানি আইনের যাবতীয় শর্ত বা প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়েছে এই মর্মে হাইকোর্টের একজন আইনজীবী বা কোম্পানির সংঘবিধিতে স্বাক্ষরদাতা পরিচালক বা সচিব হিসেবে যার নাম উল্লিখিত আছে এমন ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত ঘোষণা পত্র।

৫. নিবন্ধন পত্র সংগ্রহ

উপরোল্লিখিত দলিলপত্রসহ আবেদন পত্র নিবন্ধকের নিকট দাখিল করার পর নিবন্ধক যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, কোম্পানি আইনের বিধানগুলো ঠিকমতো পালন করা হয়েছে তাহলে তিনি প্রস্তাবিত কোম্পানির নাম নিবন্ধন বহিতে লিপিবদ্ধ করেন এবং নিবন্ধন পত্র প্রদান করেন। এই নিবন্ধনপত্র প্রাপ্তির পরই প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি ব্যবসায় শুরু করতে পারে। কিন্তু পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিকে ব্যবসায় শুরু করতে হলে কোম্পানির নিবন্ধকের নিকট হতে কার্যারাষ্ট্রে অনুমতি পত্র সংগ্রহ করতে হয়।

৬. কার্যারাম্ভের অনুমতিপত্র

এ পর্যায়ে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির পরিচালকগণকে ন্যূনতম মূলধন সংগ্রহের লক্ষে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে শেয়ার বিক্রয়ের বিবরণপত্র তৈরি ও প্রচার করতে হয়। কোম্পানিকে ব্যবসায় আরম্ভের অনুমতি পত্র সংগ্রহের জন্য নিম্নোক্ত বিধানগুলো পালন করতে হয়:

(ক) কোম্পানিকে দেখতে হবে যে-

i. ন্যূনতম মূলধন সংগৃহীত হয়েছে,

ii. প্রত্যেক পরিচালক তার ক্রীত শেয়ারের অর্থ প্রদান করেছেন।

(খ) সব শর্ত পালিত হয়েছে এই মর্মে পরিচালকের প্রত্যয়নসহ ঘোষণা পত্র দাখিল করতে হবে।

(গ) কোম্পানি জনসাধারণের উদ্দেশ্যে প্রসপেকটাস বা বিবরণপত্র প্রচার না করে থাকলে বিবরণ পত্রের পরিবর্তে বিবৃতি বা প্রস্পেকটাসের বিকল্প বিবরণী নিবন্ধকের নিকট দাখিল করতে হয়।

উপরোক্ত কাগজ পত্রগুলো নিবন্ধক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সন্তুষ্ট হলে তিনি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিকে ‘কার্যারাম্পের অনুমতিপত্র প্রদান করে থাকেন। এ অনুমতি পত্র প্রাপ্তির পর কোম্পানি ব্যবসায় শুরু করতে পারে এবং উপরোক্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই যৌথ মূলধনী কোম্পানির গঠন পদ্ধতি বা প্রণালি সম্পন্ন হয়ে থাকে।

Related Posts