Home » রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি ও কি কি? – বিস্তারিত আলোচনা
রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি ও কি কি?

রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি ও কি কি? – বিস্তারিত আলোচনা

by Susmi
0 comment

রাষ্ট্রের উপাদান সমূহ

মানবীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি অতিবিকশিত ও সর্বাধুনিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে রাষ্ট্র। বিকাশের এ পর্যায়ে রাষ্ট্রের উপাদান হিসেবে চারটি বিষয়কে অত্যাবশ্যকীয় হিসেবে ধরা হয়। এগুলো হলো-

১. জনসংখ্যা (Population);

২. নির্দিষ্ট ভূখণ্ড (Territory);

৩. সরকার (Government) এবং

৪. সার্বভৌমত্ব (Sovereignty)

রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দাও

নিচে এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-

১ . জনসংখ্যা

রাষ্ট্রের প্রথম এবং প্রধান উপাদান হলো জনসমষ্টি। জনহীন রাষ্ট্র অকল্পনীয়। মানুষ সামাজিক জীব এবং রাষ্ট্র একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। সুতরাং রাষ্ট্রের কথা বলতে হলে প্রথমেই জনসমষ্টির উল্লেখ করতে হয়। রাষ্ট্র গঠনের জন্যে জনসংখ্যা অত্যাবশ্যক কিন্তু এর কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। চীনের জনসংখ্যা ১৪১ কোটির উপর, পাশাপাশি সানমেরিনো রাষ্ট্রের জনসংখ্যা ৩৩ সহস্রাধিক। জাতিসংঘের ১৮৯ তম সদস্য টুভালু এর জনসংখ্যা মাত্র ১১ হাজার। কোনো রাষ্ট্রের জনসংখ্যা কীরূপ হওয়া উচিত, এ প্রশ্ন নিয়ে প্রাচীন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট তর্ক-বিতর্ক আছে। প্লেটোর মতে, আদর্শ নগর রাষ্ট্রের জনসংখ্যা ৫,০৪০ জনের বেশি হওয়া উচিত নয়। রুশোর মতে, আদর্শ রাষ্ট্রের জনসংখ্যা ১০,০০০ হবে। অ্যারিস্টটলের মতে, জনসংখ্যা খুব কম হলে রাষ্ট্র আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে না, আবার খুব বেশি হলে সুশাসনের অসুবিধা হবে। তবে জনসংখ্যা এমন হলে ভালো হয় যাতে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার করা যায়।

২. নির্দিষ্ট ভূখণ্ড

রাষ্ট্র গঠনের দ্বিতীয় প্রয়োজনীয় উপাদান হলো নির্দিষ্ট ভূখণ্ড। ভূখণ্ড রাষ্ট্রের দেহতুল্য। রাষ্ট্র মূলত ভৌগোলিক প্রতিষ্ঠান। মহাসমুদ্রে বা মহাশূন্যে রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। তাই রাষ্ট্রের অপরিহার্য উপাদানের মধ্যে ভূখণ্ড একটি। রাষ্ট্রের ভূখণ্ড বলতে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ভূমিভাগকেই বুঝায় না। মাটির অভ্যন্তরীণ সম্পদ, নদ-নদী, জলাশয় এবং সমুদ্রের উপকূলের অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রের সীমানা সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত থাকলে সমুদ্রতীর থেকে তিন মাইল পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের ভূখণ্ড বলে গণ্য করা হয়। এখন এ সীমানা বাড়িয়ে ১২ মাইল করা হয়েছে এবং ২০০ মাইল অর্থনৈতিক এলাকা বলে স্থির হয়েছে। রাষ্ট্রের এলাকাধীন উপরিভাগের বায়ুমণ্ডল সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের ভূখণ্ডের অন্তর্গত।

রাষ্ট্রের আয়তন নিয়ে কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। গ্রিক পণ্ডিতগণ রাষ্ট্রের আয়তন নগরের পরিধির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পক্ষপাতী ছিলেন। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে রাষ্ট্রের আয়তন নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই। যেমন- ক্ষুদ্র রাষ্ট্র মোনাকোর আয়তন ১.৯৫ বর্গ কি.মি.। আবার রাশিয়ার আয়তন ১,৭০,৭৫,৪০০ বর্গ কি.মি.। রাষ্ট্রের ভূখণ্ডের আয়তন সম্পর্কে কোনো সর্বজন স্বীকৃত মান নেই। তবে ভূখণ্ডের আয়তন এবং অর্থনৈতিক সম্পদের তুলনায় যদি জনসংখ্যা বেশি হয় তাহলে দেশে জনাধিক্য ও তাঁর আনুষঙ্গিক কুফল দেখা দেবে। পক্ষান্তরে যদি জনসংখ্যা আয়তনের তুলনায় অর্থনৈতিক সম্পদের পরিমাণ বেশি হয় তাহলে জনসংখ্যার অভাবে এর কাম্য ব্যবহার সম্ভব হবে না।

৩. সরকার

রাষ্ট্র গঠনের তৃতীয় উপাদান হলো সরকার। সরকারকে রাষ্ট্রের মস্তিষ্ক বলে অভিহিত করা হয়। সরকার রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্র। এটা রাষ্ট্রের ইচ্ছাকে কাজে পরিণত করে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করে। যেখানে সরকার নেই, সেখানে শাসন নেই, যেখানে শাসন নেই, সেখানে রাষ্ট্র নেই। রাষ্ট্র না থাকলে সমাজে অরাজকতা দেখা দেবে। সরকারবিহীন অবস্থায় যে অরাজকতা দেখা দেয় প্রাচীন ভারতে তাকে ‘মাৎস্য ন্যায়’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। গার্নার বলেন, ‘সরকারবিহীন জনগণ অসংলগ্ন, অসংগঠিত এবং অরাজক যার কোনো সম্মিলিত শক্তি নেই।”

রাজনৈতিক ব্যবস্থা কাকে বলে? রাজনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি?

যারা সমষ্টিগতভাবে রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনা করে ব্যাপক অর্থে তাদের সরকার বলে। সংকীর্ণ অর্থে সরকার বলতে আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের বুঝায়। এক কথায় দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হতে গ্রাম্য চৌকিদার পর্যন্ত সকলেই সরকারের অন্তর্ভুক্ত। সীলির মতে, রাষ্ট্র এমন এক সমাজ যা সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য সরকারের মধ্য দিয়ে বাস্তবে রূপ গ্রহণ করে। সুতরাং সরকার হলো রাষ্ট্রের এরূপ একটি অঙ্গ যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য, কার্যাবলি এবং জনগণের ইচ্ছা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রণীত, প্রকাশিত ও বাস্তবায়িত হয়।

৪. সার্বভৌমত্ব

রাষ্ট্র গঠনের চতুর্থ এবং সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয় উপাদান হলো সার্বভৌমত্ব। সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের প্রাণস্বরূপ। সার্বভৌমত্ব হলো রাষ্ট্রের চরম ক্ষমতা- যে ক্ষমতার ঊর্ধ্বে আর কোনো ক্ষমতা নেই। এ ক্ষমতা কোনো এক ব্যক্তির হাতে অথবা মুষ্টিমেয় ব্যক্তিবর্গের হাতে ন্যস্ত থাকতে পারে। সার্বভৌমত্বের দুটি দিক আছে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক। অভ্যন্তরীণ চরম ক্ষমতা বলতে বুঝায় রাষ্ট্রের ভেতর এমন কোনো ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠান থাকবে না, যা রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব বা আইন উপেক্ষা করতে পারে। রাষ্ট্রের আদেশ অমান্য করলে শাস্তি পেতে হয়। বাহ্যিক দিক থেকে সার্বভৌমত্বের অর্থ হলো রাষ্ট্র কোনো বিদেশি শক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে না। বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন থাকলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লোপ পায়। সার্বভৌম ক্ষমতা ব্যতীত কোনো রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। সার্বভৌম ক্ষমতা অনমনীয়, অবিভাজ্য, হস্তান্তর অযোগ্য, একক ও স্থায়ী।

এগুলো ছাড়াও কেউ কেউ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও স্থায়িত্বকে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় উপাদান বলে মনে করেন।

Related Posts