Home » সংসদীয় সরকারের বৈশিষ্ট্য | মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের বৈশিষ্ট্য
সংসদীয় সরকারের বৈশিষ্ট্য, মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের বৈশিষ্ট্য,

সংসদীয় সরকারের বৈশিষ্ট্য | মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের বৈশিষ্ট্য

by Susmi
0 comment

সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের বৈশিষ্ট্য

সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

১. আইনসভার প্রাধান্য

সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারে আইনসভা সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভা শাসন কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়ী থাকেন। আইনসভার আস্থা হারালে মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করে।

২. ক্ষমতার একত্রীকরণ

সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থায় শাসন ও আইন বিভাগীয় ক্ষমতার একত্রীকরণ ঘটে। আইন পরিষদের একটি অংশ নিয়ে মন্ত্রিসভা বা শাসন বিভাগ গঠিত হয়। ফলে একই ব্যক্তির হাতে আইন প্রণয়ন ও শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা ন্যস্ত হয়।

৩. নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান

সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারে রাষ্ট্রপ্রধান নিয়মতান্ত্রিক শাসক। প্রকৃত ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার হাতে। রাষ্ট্রপ্রধান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার পরামর্শ ছাড়া সাধারণত কিছু করেন না।

গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করো

৪. প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব

সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। তার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। তিনি মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা নির্ধারণ করেন এবং মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন। সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মন্ত্রীগণ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ও অনুমোদন নিয়ে কাজ করেন। তিনি যেকোনো মন্ত্রীকে তার পদ থেকে অপসারণের পরামর্শ দিতে পারেন।

৫. দলীয় শাসনব্যবস্থা

সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থা মূলত দলীয় শাসনব্যবস্থা। আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলই সরকার গঠন করে। অন্য দলগুলো বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে থাকে। এ ব্যবস্থায় বিরোধী দলকে বিকল্প সরকার হিসেবেও অভিহিত করা হয়।

৬. দায়িত্বশীল শাসন

মন্ত্রিপরিষদ শাসিত বা সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় মন্ত্রিসভার সদস্যগণ ব্যক্তিগত ও যৌথভাবে আইন পরিষদের কাছে দায়ী। আইনসভার আস্থা হারালে মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হয়।

৭ . আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক

সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থায় আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা একই সাথে আইনসভা ও শাসন বিভাগের সদস্য। সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রীদের বাধ্যতামূলক আইনসভার সদস্য হতে হয়। এছাড়া মন্ত্রিসভা সহজেই আইনসভার আইন পাস করে নিতে পারে। কেননা আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্যরাই হলো মন্ত্রিসভার সদস্যগণ।

৮. সুপরিবর্তনীয় সংবিধান

সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থায় সংবিধান সাধারণত সুপরিবর্তনীয় হয়ে থাকে। আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোট সংবিধানের যেকোনো অংশ বা ধারাকে সহজে সংশোধন বা পরিবর্তন করতে পারে।

৯. বিরোধী দলের স্বীকৃতি

সংসদীয় সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো বিরোধী দলের ভূমিকা। একটি সুসংহত বিরোধী দলের অস্তিত্ব সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয়। এ ব্যবস্থায় নির্বাচনে যে দল পরাজিত হয় তারাও জনগণের একটি অংশের আস্থাভাজন বলে ধরে নেওয়া হয়। সংসদে বিরোধী দলের বক্তব্য ও সমালোচনা মনযোগ সহকারে শোনা এবং যথাযথ যত্নসহকারে তার জবাব দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিরোধীদল গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সরকারকে জনকল্যাণমূলক পথে শাসনকার্য পরিচালনা করতে বাধ্য করে এবং সরকারি দলের স্বৈরাচারিতার পথে বাধার সৃষ্টি করে। ওয়েড ও ফিলিপস মন্তব্য করেছেন, ‘Parliamentary governments work best when opposition is able to take concerted action.”

১০. নমনীয়তা

সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার সাধারণত নমনীয় প্রকৃতির হয়। কারণ আইনসভায় সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় যেকোনো নীতি ও সিদ্ধান্ত প্রণয়ন বা পরিবর্তন এবং অনাস্থা প্রস্তাব এনে সরকারের পতন ঘটানো যায়।

Related Posts