Home » সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর
সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য,

সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর

by Susmi
0 comment

সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য

কারো কারো মতে, সমাজ ও রাষ্ট্র এক এবং অভিন্ন। যেমন এরিস্টটল সমাজ ও রাষ্ট্রকে এক করে দেখেছেন আবার হিটলার এবং মুসোলিনী সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে যে পার্থক্য আছে তা স্বীকার করেন নি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সমাজ ও রাষ্ট্র এক নয়। রাষ্ট্র এবং সমাজ ভিন্নধর্মী সংগঠন। মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে যে সংস্থার সৃষ্টি হয় সেটিই সমাজ। ম্যাকাইভারের মতে, সমাজ বলতে একটি সাধারণ প্রতিষ্ঠানকে বুঝায়, যা মানুষের সকল পারস্পরিক সম্বন্ধকে অন্তর্ভুক্ত করে। রাষ্ট্রের পূর্বে সমাজের সৃষ্টি। মানুষের রাজনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্র সম্পূর্ণ আলাদা। এ প্রেক্ষাপটে সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে কতিপয় পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

১. উৎপত্তিগত: রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে উৎপত্তির দিক থেকে ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। রাষ্ট্র গঠনের বহু পূর্বেই সমাজের উৎপত্তি হয়েছে। দার্শনিকদের মতে, রাষ্ট্র গঠনের পূর্বেই সমাজের জন্ম ও বিকাশ হয়েছে। কিন্তু সমাজ গঠনের পরে রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটেছে। সমাজ গঠনের পর মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য সমাজবদ্ধভাবে মানুষের প্রয়োজনে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে।

রাজনৈতিক ব্যবস্থা কাকে বলে? রাজনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি?

২. পরিধি: সমাজের পরিধি রাষ্ট্র অপেক্ষা বৃহত্তর। রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট ভূখণ্ড প্রয়োজন, সমাজের জন্য তা নয়। সমাজের পরিধি কয়েকটি রাষ্ট্র বা বিশ্বব্যাপী হতে পারে। সমাজের মধ্যে রাষ্ট্র অবস্থান করতে পারে। Barker-এর মতে, “The state exists for one greae but single purpose society for a number of purpose.” বি.বি. মজুমদারের মতে, “State exists within the society.”

৩. উদ্দেশ্যগত: উদ্দেশ্যগত দিক থেকে উভয়ের মধ্যে ভিন্নতা বিদ্যমান। সমাজের মূল উদ্দেশ্য হলো পারস্পরিক বন্ধন ও সহানুভূতি বৃদ্ধি করা। কিন্তু রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হলো সংঘবন্ধ মানুষের কল্যাণ সাধন। এছাড়া রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য অনেকটা সামাজিক। সমাজ মানব জীবনের সকল দিক নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু রাষ্ট্র ব্যক্তির নৈতিক দিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাই বলা যায়, বহু উদ্দেশ্য সামনে রেখে গঠিত হয় রাষ্ট্র। ব্যক্তির নৈতিকতার বিকাশ ঘটাতে সমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

৪. প্রতিষ্ঠানগত: আইনগত উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে রাষ্ট্র হলো একটি আইনগত প্রতিষ্ঠান। প্রত্যেক নাগরিকই কোন না কোনো রাষ্ট্রের সদস্য। কিন্তু সমাজ হলো বহু সংগঠনের সমষ্টি। তথা বহু সংগঠনের সমষ্টিগত রূপ। আর সমাজ হলো একটি শিথিল প্রতিষ্ঠান।

৫. সার্বভৌমত্ব: রাষ্ট্র একটি সার্বভৌম প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্র সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকারী। রাষ্ট্রের আদেশ সকলের জন্য অবশ্য পালনীয়। প্রয়োজনবশত রাষ্ট্র কাউকে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দিতে পারে। কিন্তু সমাজের এ ক্ষমতা নেই। সমাজের বন্ধন নৈতিক কিন্তু রাষ্ট্র শক্তি প্রয়োগ করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সমাজের সার্বভৌম কোনো ক্ষমতা নেই। বিশেষ আদর্শই সমাজের শক্তি।

৬. সংঘগত: সংঘের দিক থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র পৃথক পরিচয় বহন করে। বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সংঘের সমন্বয়ে সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সংঘের যাবতীয় সামাজিক কার্যাদি সমাজের অন্তর্ভুক্ত। অন্যান্য সংঘের মতো রাষ্ট্রও সমাজের একটি অন্যতম সংঘ। Willson-এর ভাষায়, “State is part of society, not whole of it”.

রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি ও কি কি? – বিস্তারিত আলোচনা

৭. রাজনীতিগত: রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও সমাজ ও রাষ্ট্র ভিন্নতার পরিচয় দেয়। রাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রভাব বেশি। রাষ্ট্র হচ্ছে একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। জনসমাজের রাজনৈতিক শক্তির উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠানটির জন্ম। কিন্তু সমাজে তেমন কোনো রাজনৈতিক প্রভাব দেখা যায় না। শক্তির ভিত্তিতে নয় বরং একই ধরনের উদ্দেশ্যে। পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সমাজ গড়ে ওঠে।

৮. সাংগঠনিক: রাষ্ট্রের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সুগঠন। রাষ্ট্র অনেকটা সুসংগঠিত। কিন্তু সমাজ সব সময় সুসংগঠিত নাও হতে পারে। রাষ্ট্রের জন্য সুগঠিত আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ থাকে কিন্তু সমাজের তা থাকে না। সরকার আছে বিধায় রাষ্ট্র সুসংগঠিত। অন্য দিকে সরকার না থাকায় সমাজ অনেকটা অসংগঠিত। সমাজের আয়তন বিশ্বব্যাপী। ফলে একে সুসংগঠিত করা যায় না।

Related Posts