অংশীদারি ব্যবসায় চুক্তি পত্রের বিষয়বস্তু
অংশীদারগণের মধ্যস্থিত চুক্তির বিষয়বস্তু লিখিত হলে তাকে অংশীদারি চুক্তিপত্র বলে। চুক্তিপত্র মৌখিক বা লিখিত এবং নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত উভয় প্রকার হতে পারে। অংশীদারি ব্যবসায় আইনে নিবন্ধিত চুক্তিপত্র বাধ্যতামূলক না হলেও ব্যবসায়ের সুষ্ঠু পরিচালনা এবং অংশীদারগণের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার্থে তা নিবন্ধিত হওয়াই উত্তম। নিম্নে অংশীদারি ব্যবসায় চুক্তি পত্রের বিষয়বস্তু আলোচনা করা হলো-
১. ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা: অংশীদারি চুক্তিপত্রে প্রথম লিখিত বিষয় হলো ব্যবসায়ের নাম কী হবে এবং এর অবস্থান কোথায় হবে?
অংশীদারি ব্যবসায়ের প্রকারভেদ আলোচনা কর |
২. ব্যবসায়ের প্রকৃতি, উদ্দেশ্য ও আওতা: ব্যবসায় কী কী উদ্দেশে পরিচালিত হবে, এর প্রকৃতি কিরূপ হবে এবং আওতা কিরণ হবে তা চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকবে।
৩. অংশীদারগণের নাম, ঠিকানা ও পেশা: প্রত্যেক অংশীদারের পূর্ণাঙ্গ নাম, যোগাযোগের ঠিকানা ও তাদের পেশা উল্লেখ থাকবে।
৪. ব্যবসায়ের স্থান ও সম্ভাব্য এলাকা: ব্যবসায়ের প্রধান কার্যালয় ছাড়া অন্য কোথায় কোথায় এর শাখা থাকবে এবং সন্ধাব্য এলাকার উল্লেখ থাকবে।
৫. ব্যবসায়ের মেয়াদ: ব্যবসায় কি আজীবন চলতে থাকবে না নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থাপিত হবে তা চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকবে।
৬. মূলধনের পরিমাণ ও সংস্থান: ব্যবসায়ে মোট কত টাকা বিনিয়োগ করা হবে এবং প্রত্যেক অংশীদার কে কী পরিমাণ মূলধন সরবরাহ করবে তার বর্ণনা চুক্তিপত্রে থাকবে।
৭. মূলধনের উপর সুদ: অংশীদারি আইনে মূলধনের উপর সুদ দেওয়ার নিয়ম নেই। এক্ষেত্রে বিনিয়োজিত মূলধনের উপর সুদ দেওয়া হবে কিনা তা চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকবে।
৮. লাভ-লোকসান বণ্টন: ব্যবসায়ের লাভ ও লোকসান কীভাবে বণ্টিত হবে তা চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকবে। যদি এ বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ না থাকে অংশীদারগণ নিজেদের মধ্যে আলোচনাসাপেক্ষে লাভ-লোকসান বণ্টন করে নিবে।
১. ব্যবসায় পরিচালনা: ব্যবসায় পরিচালনায় কে, কিভাবে অংশগ্রহণ করবেন তার বিস্তারিত চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকবে।
১০. অংশীদারগণের বেতন: ব্যবসায় পরিচালনায় নিয়োজিত অংশীদারদের বেতন দেয়া হবে কিনা, দেয়া হলে কী পরিমাণ দেয়া হবে তা উল্লেখ থাকবে।
১১. হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থা: ব্যবসায়ের হিসাবপত্র কে, কিভাবে সংরক্ষণ করবেন তার বর্ণনা চুক্তিপত্রে থাকবে।
১২. অর্থ উত্তোলন: অংশীদারগণ ব্যবসায় হতে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন কিনা, পারলে কী পরিমাণ এবং এর উপর সুদ দিতে হবে কিনা, সুদ দিতে হলে কী হারে দিতে হবে তার বর্ণনা থাকবে।
১৩. ব্যাংক হিসাব: যে ব্যাংকে টাকা রাখা হবে তার নাম, ঠিকানা, হিসাবের ধরন ইত্যাদি চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকবে।
১৪. ব্যাংকের সাথে লেনদেন: যে বা যারা ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করবেন অর্থাৎ কে বা কারা চেক স্বাক্ষর করবেন তাদের নাম, ঠিকানা, পদবি ইত্যাদি উল্লেখ থাকবে।
১৫. নতুন অংশীদার গ্রহণ: ব্যবসায়ে কোনো নতুন অংশীদার গ্রহণ করা হবে কিনা, হলে এর শর্ত কী হবে তার বর্ণনা থাকবে।
১৬. অংশীদার বহিষ্কার: কোন পরিস্থিতিতে কোনো অংশীদার বহিষ্কৃত হবেন তার উল্লেখ থাকবে।
১৭. অংশীদারগণের অবসর গ্রহণ: ব্যবসায় হতে কোনো অংশীদারের অবসর গ্রহণ, মস্তিষ্ক বিকৃতি অথবা মৃত্যু হলে দায়-দায়িত্ব, অধিকার কী হবে তার সুস্পষ্ট বর্ণনা চুক্তিপত্রে থাকবে।
১৮. অধিকার ও দায়-দায়িত্ব: ব্যবসায়ে অংশীদারদের অধিকার ও দায়-দায়িত্বের বিস্তারিত বিবরণ থাকবে।
১৯. সালিশী: অংশীদারগণের মধ্যে বিরোধ বা মতানৈক্য দেখা দিলে তা কিভাবে মীমাংসা করা হবে তা চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকবে।
২০. ব্যবসায়ের আর্থিক বছর: ব্যবসায়ের আর্থিক বছরের শুরু ও শেষ সময় চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকবে।
২১. সুনামের মূল্যায়ন: ব্যবসায়ের সুনামের মূল্য নিরূপণের নিয়ম-নীতি চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকবে।
অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন না করার ফলাফল আলোচনা কর |
২২. চুক্তিপত্রের শর্তের পরিবর্তন: ব্যবসায়ের স্বার্থে অংশীদারি চুক্তিপত্রের কোনো ধারা বা ধারাসমূহের পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে হলে তার নিয়ম, পদ্ধতি চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকবে।
২৩. ব্যবসায়ের বিলোপসাধন: চুক্তিপত্রে ব্যবসায়ের বিলোপসাধন পদ্ধতি ও বিলোপের পর এর সম্পত্তি ও দায়-দায়িত্ব কীভাবে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বণ্টিত হবে তা উল্লেখ থাকবে।
উপসংহার
উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও অংশীদারগণ নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে যে কোনো আইনসিদ্ধ বিষয় অংশীদারি চুক্তিপত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। প্রয়োজনে সকল অংশীদারদের সম্মতিক্রমে চুক্তিপত্রের বিষয়বস্তুর পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংযোজন বা বিয়োজন করতে পারেন।
আশাকরি, এই ব্লগটি থেকে আপনারা অংশীদারি ব্যবসায় চুক্তি পত্রের বিষয়বস্তু সম্পর্কে যথাযথ তথ্য জানতে পেরেছেন।