দ্বৈত শাসন
ভারতীয়দের দাবি-দাওয়ার প্রেক্ষিতে এবং ভারতের শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা নিরসনকল্পে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে মন্টেগু এবং চেমসফোর্ড-এর নেতৃত্বে ১৯১৮ সালে যে শাসনতান্ত্রিক সংস্কার রিপোর্ট (Report on the Constitutional Reforms) প্রণয়ন করা হয় তার ওপর ভিত্তি করে ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন প্রবর্তিত হয়। এ আইনের একটি আকর্ষণীয় এবং সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো প্রদেশে দ্বৈত শাসন (Dyarchy)। এ দ্বৈত শাসনের মূল লক্ষ্য ছিল প্রদেশে দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন- যার মাধ্যমে নির্বাচিত সদস্যগণ বিশেষ করে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যগণ তাদের যাবতীয় দায়িত্বের জন্য আইনসভার নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকেন। তবে এ ব্যবস্থা সফল হতে পারেনি।
১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন ও এ আইনের বৈশিষ্ট্য সমূহ |
‘দ্বৈত শাসন’-এর ইংরেজি প্রতিশব্দ Dyarchy, এটি গ্রিক Di এবং archei থেকে এসেছে। Di অর্থ Twice বা দু বার এবং archei অর্থ To Rule বা শাসন করা। সুতরাং আক্ষরিক অর্থে দ্বৈতশাসন বলতে দু ধরনের শাসনব্যবস্থাকে বোঝায়।
সংক্ষেপে বলা যায়, প্রাদেশিক সরকারের বিষয়সমূহ দুভাগে ভাগ করে দেওয়া হয় বলে একে দ্বৈতশাসন বলে অভিহিত করা হয়। প্রাদেশিক সরকারের বিষয়কে যে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয় তা হলো-
ক. হস্তান্তরিত বিষয় (Transferred): শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প ও স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত বিষয়কে হস্তান্তরিত তালিকাভুক্ত করা হয়। গভর্নর প্রাদেশিক মন্ত্রীদের সহায়তা ও পরামর্শক্রমে এ বিষয়গুলো পরিচালনা করতেন।
খ. সংরক্ষিত বিষয় (Reserved): পক্ষান্তরে আইনশৃঙ্খলা, ভূমি রাজস্ব, পানি সেচ, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জেল ইত্যাদি সংরক্ষিত বিষয়ে গভর্নর ও তাঁর শাসন পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত হতো।
মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি বা প্রেক্ষাপট এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য |
সুতরাং প্রদেশের শাসনক্ষেত্রে উল্লিখিত দুটি কর্তৃপক্ষ বিদ্যমান থাকায় একে দ্বৈত শাসন বলে অভিহিত করা হয়। মূলত যে উদ্দেশ্যে এরূপ দ্বৈতশাসন প্রবর্তন করা হয় তা সফল হয়নি।