বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামো স্তরভিত্তিক। এর দুটি প্রধান স্তর আছে। প্রথম স্তরটি হলো কেন্দ্রীয় প্রশাসন। দ্বিতীয় স্তরটি হলো মাঠ প্রশাসন। মাঠ প্রশাসনের প্রথম ধাপ হলো বিভাগীয় প্রশাসন। দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলার পরে আছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসন একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশের সব ধরনের প্রশাসনিক নীতি ও সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গ্রহণ করা হয়। আর কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গৃহীত নীতি ও সিদ্ধান্ত মাঠ প্রশাসনের মাধ্যমে সারা দেশে বাস্তবায়িত হয়। মাঠ প্রশাসন মূলত কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়ে থাকে।
রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন নিয়মতান্ত্রিক বা নামসর্বস্ব রাষ্ট্রপ্রধান। বাংলাদেশের শাসন বিভাগের সর্বোচ্চ ব্যক্তি তিনি। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং তাঁর নামে প্রজাতন্ত্রের সকল কাজ পরিচালিত হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির নিয়োগ ছাড়া অন্য সকল বিষয় তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে কার্য সম্পন্ন করেন। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সকল ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী: প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নিয়োগ করেন। মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করেন। তিনি মন্ত্রিসভার প্রধান হিসেবে শাসনকার্য পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা সকল কাজের জন্য যৌথভাবে জাতীয় সংসদের নিকট দায়ী থাকেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা কর |
মন্ত্রিসভা
সরকার পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিসভা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যেরূপ সংখ্যক প্রয়োজন মনে করেন, সেরূপ সংখ্যক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। মন্ত্রিসভার সদস্যগণ প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করেন। সচিবালয় সচিবালয় বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু। সচিবালয়কে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থা আবর্তিত হয়। সচিবালয় হল মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বিত রূপ। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে একজন সচিব থাকেন। সচিবালয়ে বাংলাদেশ সরকারের যাবতীয় নীতি প্রণীত হয়, পর্যালোচিত হয় এবং চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়।
মন্ত্রণালয়
মন্ত্রণালয় হচ্ছে সচিবালয়ের একটি সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক শাখা। কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ সচিবালয়। বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতা মন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে একজন সচিব আছেন। তিনি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক প্রধান এবং মন্ত্রীর প্রধান পরামর্শদাতা। বাংলাদেশে মন্ত্রণালয়গুলো নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করে। প্রত্যেক মন্ত্রণালয় এক বা একাধিক বিভাগে বিভক্ত।
বিভাগ
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রশাসনে মন্ত্রণালয়ের পরেই বিভাগের অবস্থান। মন্ত্রণালয়ের অধীনে এক বা একাধিক দপ্তর বা বিভাগ বিদ্যমান। মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি অনু বিভাগের জন্য একজন করে যুগ্ম সচিব থাকেন। তিনি সচিবকে বিভিন্ন কাজে সহায়তা করেন। দপ্তর বা বিভাগগুলো সচিবালয়ের নির্দেশে পরিচালিত হয়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো |
শাখাসমূহ
বাংলাদেশে প্রশাসনিক কাঠামোর আওতায় রয়েছে উপবিভাগ ও শাখাসমূহ। উপবিভাগের দায়িত্ব অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্ম সচিবের ওপর ন্যস্ত। কয়েকটি শাখার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন উপসচিব। আর একটি শাখার দায়িত্বে থাকেন ঊর্ধ্বতন সহকারী সচিব বা সহকারী সচিব।
বিভাগীয় প্রশাসন
বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের পরেই স্থানীয় বা মাঠ প্রশাসনের অবস্থান। মাঠ প্রশাসনের প্রথম (সর্বোচ্চ) ধাপ হলো বিভাগীয় প্রশাসন। বর্তমানে দেশে সাতটি বিভাগ রয়েছে। বিভাগীয় প্রশাসনের শীর্ষে আছেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন প্রবীণ কর্মকর্তা। তিনি বিভাগীয় কমিশনার নামে পরিচিত। তিনি তাঁর কাজের জন্য কেন্দ্রের নিকট দায়ী।
জেলা প্রশাসন
মাঠ বা স্থানীয় প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর হলো জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের প্রশাসনিক কার্যাবলি পরিচালিত, নিয়ন্ত্রিত ও আবর্তিত হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৬৪টি জেলা রয়েছে। জেলা প্রশাসনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন জেলা প্রশাসক। তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন অভিজ্ঞ সদস্য। তাকে কেন্দ্র করেই জেলার সকল সরকারি কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
উপজেলা প্রশাসন
স্থানীয় বা মাঠ প্রশাসনের সর্বনিম্ন স্তর হলো উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা। বাংলাদেশে মোট ৪৮৫টি প্রশাসনিক উপজেলা রয়েছে। উপজেলার প্রধান প্রশাসক হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (UNO) উপজেলার প্রশাসনিক কাজ তদারক করা তার অন্যতম দায়িত্ব। তিনি উপজেলা উন্নয়ন কমিটির প্রধান হিসেবে উপজেলার সকল উন্নয়নমূলক কাজ তদারক ও সরকারি অর্থের ব্যয় তত্ত্বাবধান করেন।
অতএব, উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনারা বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলেন। এরকম আরও তথ্য ও লেখা পেতে নিয়মিত ব্লগটি ভিজিট করুন।