যেকোনো ব্যবসায় বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অবস্থান বলতে এর গঠন ও পরিচালনার জন্য যে নির্দিষ্ট স্থানের প্রয়োজন হয় সেই স্থানকে বুঝায়। ব্যবসায় জগতে বিভিন্ন ধরনের সংগঠন রয়েছে। এদের আকার ও আকৃতি এক নয়, কিছু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান আছে যার অবস্থান কেন্দ্রীভূত থাকে। এগুলো একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসে তাদের শাখার মাধ্যমে কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে। আবার ব্যাংক, বিমা, পরিবহন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলো দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে শাখা খুলে তার ব্যবসায়ী কার্যকলাপ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে যা একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থিত। এ ব্যবসায় কাজকর্ম ও সফলতা-ব্যর্থতা অবস্থানের উপর নির্ভর করে।
ব্যবসায়ের অবস্থান নির্ধারণে বিবেচ্য বিষয় সমূহ
ব্যবসায় হলো একটি সামাজিক প্রক্রিয়া। ব্যবসায়ের অবস্থান নির্ধারণ খুব সহজ কাজ নয়। ব্যবসায়ের অবস্থান নির্ধারণে যেসব বিষয় বিবেচনা করতে হয় তা হলো নিম্নরূপ:
১. ব্যবসায়ের প্রকৃতি
প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায়ের প্রকৃতির উপর এর অবস্থান নির্ভর করে থাকে। ছোট আকারের ব্যবসায় সাধারণত যেকোনো স্থানে গড়ে তোলা যেতে পারে, কিন্তু বৃহৎ আকৃতির ব্যবসায় যেকোনো স্থানে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এজন্য অনেক জায়গার প্রয়োজন হয়। পচনশীল জাতীয় দ্রব্যের ব্যবসায় আবাসস্থলের নিকটে, কিন্তু শিল্প-কারখানা আবাসস্থলের বাইরে গড়ে তুলতে হয়।
ব্যবসায়ের অবস্থান বলতে কি বুঝায়, কত প্রকার ও কি কি? |
২. উন্নত পরিবহন
পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে সেখানে শিল্প-কলকারখানা বেশি সংখ্যায় গড়ে তোলা সম্ভব। উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য সহজেই আনা-নেয়া করা যায়।
৩. সমজাতীয় ব্যবসায়
একই ধরনের পণ্য উৎপাদনে অথবা ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে একই জাতীয় পণ্যের সমাহার ঘটলে সেখানে অনেক বেশি পরিমাণ ব্যবসায়-বাণিজ্য বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। সমজাতীয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থাকলে ক্রেতাদের ভিড় হয় বেশি, কারণ তারা দরকষাকষি করে পণ্যের মূল্য স্থির করতে পারে।
৪. সহযোগী ব্যবসায়ের উপস্থিতি
অনেক ব্যবসায় আছে যেগুলোর মূল পণ্যের সাথে অন্যান্য উপজাত পণ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে পণ্য উৎপাদন করা হয়। যেমন- গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির জন্য চেইন, বোতাম ইত্যাদি উপজাত পণ্যের উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন। সুতরাং সহযোগী পণ্যের প্রাপ্তির উপর মূল ব্যবসায়ের প্রতিষ্ঠা নির্ভরশীল।
৫. কাঁচামালের সহজ যোগান
উৎপাদনকারী শিল্প-কারখানার জন্য সহজে কাঁচামাল পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। যেসব অম্বুলে কাঁচামাল স্বল্পমূল্যে ও সহজে পাওয়া যায়, সেখানে অধিক পরিমাণে শিল্প-কলকারখানা গড়ে ওঠে। তাই দেখা যায় কাঁচামালের সহজপ্রাপ্যতার উপরে এর অবস্থান নির্ভরশীল।
৬. ভাড়া ও অগ্রিম
যদি ব্যবসায়ীর নিজস্ব ভূমি না থাকে তাহলে অন্যের জমি ভাড়া করে সেখানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা করতে হয় এক্ষেত্রে ভাড়ার পরিমাণ এবং প্রার্থমিকভাবে অগ্রিম প্রদানের উপর ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা নির্ভর করে। কম মূল্যে জমি পাওয়া গেলেও ভাড়া কম হলে, অগ্রিম ভাড়া কম করে প্রদান করতে হলে সে এলাকায় বেশি পরিমাণে শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব।
৭. ভূমি
ব্যবসায়ের অবস্থান নির্বাচনে ভূমির সহজপ্রাপ্যতা একটি বিশেষ বিবেচ্য বিষয়। কারখানা স্থাপন, শ্রমিক-কর্মীদের আবাসস্থল নির্মাণ, পণ্যের জন্য গুদামঘর স্থাপন ইত্যাদির জন্য প্রচুর ভূমির প্রয়োজন। সুতরাং কম মূল্যে ভূমি পাওয়া গেলে সেখানে বেশি পরিমাণ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ান সম্ভব।
৮. সহজ গুদামজাতকরণ
পণ্য উৎপাদনের জন্য আনীত কাঁচামাল, উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ ইত্যাদি কাজের জন্য গুদামজাতকরণ অপরিহার্য। সহজে গুদামজাতকরণ করতে পারলে তার আশপাশে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ব। তাই শহর, বন্দর ও বাজারের নিকটবর্তী স্থানে অনেক গুদামঘর প্রতিষ্ঠা হতে দেখা যায়।
৯. সহজ জ্বালানি সরবরাহ
শিল্প-কলকারখানায় স্থাপনের জন্য পানি, বিদ্যুৎ, কয়লা, গ্যাস ইত্যাদির সহজপ্রাপ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এসব উপাদান ছাড়া শিল্প-কলকারখানা স্থাপন ও পরিচালনা অসচ্ছ। এগুলোর সহজপ্রাপ্তি কোনো স্থানে শিল্প-কলকারখানা স্থাপনের বিবেচ্য বিষয় হিসেবে কাজ করে।
সংগঠনের সংজ্ঞা দাও | সংগঠনের উদ্দেশ্য কি কি |
১০. ঘনবসতি
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অন্যতম নিয়ামক উপাদান হলো কোনো স্থানের জনবসতির ঘনত্ব। এর ঘনত্ব বেশি হলে উৎপাদিত পণ্যের বাজার পাওয়া সহজ হবে। কারখানার জন্য সস্তায় শ্রম পাওয়া যাবে। অর্থাৎ উভয় দিকে লাভবান হওয়া যাবে।
১১. ব্যবস্থাপনা ব্যয়
ব্যবসায়ের অবস্থান নির্বাচনে উপরিউক্ত বিষয়গুলোর সাথে এর পরিচালনা ব্যয়ও বিবেচনা করতে হয়। যে স্থানে পরিচালনা ব্যয় কম সেখানেই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বেশি সংখ্যায় গঠিত হতে দেখা যায়।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে যেকোনো ব্যবসায়ী তার ব্যবসায়ের অবস্থান নির্ধারণে কাজ করতে পারেন।