সরকারের অঙ্গ কয়টি?
জনকল্যাণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের সৃষ্টি। জনগণের কল্যাণ সাধনের জন্য রাষ্ট্রকে বিভিন্ন রকম কাজ সম্পাদন করতে হয়। রাষ্ট্রের পক্ষে সরকার এ কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে। রাষ্ট্রের চারটি উপাদানের মধ্যে সরকার গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। রাষ্ট্রের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও বিধিবিধান যে প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করে তাকেই সরকার বলে। সরকারের কার্যাবলিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১. আইন সংক্রান্ত কাজ, ২. শাসন সংক্রান্ত কাজ, ৩. বিচার সংক্রান্ত কাজ। উল্লিখিত তিন ধরনের কাজ সরকারের তিনটি অঙ্গ বা বিভাগের হাতে ন্যস্ত থাকে। তাই মূলত সরকারের অঙ্গ তিনটি। এগুলো হলো-
১. আইন বিভাগ: আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত কাজ করে।
২. শাসন বিভাগ: শাসন সংক্রান্ত কাজ করে।
৩. বিচার বিভাগ: বিচার সংক্রান্ত কাজ করে।
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সাফল্যের শর্তাবলী আলোচনা কর |
আইনসভা কি?
রাষ্ট্রের শাসনকাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সরকারের যে বিভাগ প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করে এবং বিদ্যমান আইন সংশোধন ও পরিবর্তন করে তাকে আইনসভা বলে। আইনসভা প্রণীত আইন বাস্তবায়ন ও সুরক্ষার জন্য শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সরকারের সব কাজের জন্য আইনসভার অনুমোদন প্রয়োজন। সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী বিভাগ হলো আইন বিভাগ। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে আইনসভা গঠিত হয়। জনপ্রতিনিধিত্বশীল হওয়ার কারণে এ বিভাগের কাছে জনগণের অনেক প্রত্যাশা থাকে। আইন প্রণয়ন করা আইনসভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিভিন্ন দেশের আইনসভা বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন- বাংলাদেশের আইনসভার নাম জাতীয় সংসদ, ভারতের সংসদ, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভার নাম কংগ্রেস।
আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণ | আইন বিভাগের ক্ষমতা হ্রাসের কারণ |
আইনসভার গঠন
আধুনিককালে আইনের প্রধান উৎস হলো আইনসভা। আইনসভার সদস্যরা জনমতের ভিত্তিতে আইন প্রণয়ন করেন এবং সে আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। বিশ্বের সব দেশের আইনসভার গঠন একরকম নয়। গঠনকাঠামো, সদস্যসংখ্যা, সদস্যপদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, নির্বাচন পদ্ধতি, কার্যকাল বা মেয়াদ ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন দেশের আইনসভার মধ্যে পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
গঠনকাঠামোর দিক থেকে আইনসভা প্রধানত দুই ধরনের। যথা: এক কক্ষবিশিষ্ট এবং দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা।
ক. এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা (Unicameral Legislature)
কোনো দেশের আইনসভা যখন কেবল একটি কক্ষ বা পরিষদ নিয়ে গঠিত হয় তখন তাকে এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বলা হয়। এ ধরনের আইনসভার সদস্যরা সাধারণ ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় বাংলাদেশ, মিসর, তুরস্ক প্রভৃতি রাষ্ট্রের আইনসভা এক কক্ষবিশিষ্ট।
খ. দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা (Bi-Cameral Legislature)
কোনো দেশের আইনসভা যখন দুটি কক্ষ বা পরিষদ নিয়ে গঠিত হয় তখন তাকে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বলা হয়। দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রথম কক্ষকে নিম্নকক্ষ (Lower House) এবং দ্বিতীয় কক্ষকে উচ্চকক্ষ (Upper House) বলে। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বেশি দেখা যায়। ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি দেশের আইনসভা দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট।
নিচে চিত্রের মাধ্যমে আইনসভার গঠন কাঠামো দেখানো হলো:
এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয় বলে এর জনপ্রিয়তা বেশি। অপরদিকে, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার উচ্চকক্ষ নির্বাচন, মনোনয়ন বা উত্তরাধিকারসূত্রে গঠিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আইনসভা এক কক্ষবিশিষ্ট এবং এর সদস্যরা সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়ে থাকেন।
আবার যুক্তরাজ্যের আইনসভায় রয়েছে উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ। উচ্চকক্ষের নাম হাউজ অব লর্ডস (House of Lords) যা উত্তরাধিকার সূত্রে ও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রানির নিযুক্ত সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত। যুক্তরাজ্যের লর্ডসভা বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন আইন পরিষদ। ব্রিটিশ আইনসভার নিম্নকক্ষের নাম হাউজ অব কমন্স (House of Commons) যা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভার উচ্চকক্ষ সিনেট (Senate) নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত। তবে প্রতিটি অঙ্গরাজ্য থেকে মাত্র দুই জন করে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন। নিম্নকক্ষের নাম হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভস (House of Representatives) বা প্রতিনিধি পরিষদ। এটি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত।