Home » সততা রচনা এসএসসি ও এইচএসসি (৮০০ শব্দ)
সততা রচনা

সততা রচনা এসএসসি ও এইচএসসি (৮০০ শব্দ)

by Susmi
0 comment

সততা

ভূমিকা

সততা হলো পরম ধন। এটা পৃথিবীর সব মনীষী ও শাস্ত্রকার নির্দেশ করে গেছেন। সততার চেয়ে পবিত্র, সততার মতো প্রবল শক্তি আর হতে পারে না। পবিত্র কুরআন শরিফে বারবার বলা হয়েছে, আল্লাহ মিথ্যাবাদীকে পছন্দ করেন না। প্রকৃত মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানোর জন্য যেসব মানবীয় গুণ প্রয়োজন, সততা তার মধ্যে সর্বপ্রধান। সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা; আর সত্যের আলোয় আলোকিত মানবীয় গুণের নামই সত্যবাদিতা। তাই সত্য থেকে ভ্রষ্ট হলে বিনষ্ট হতে হয়। চিন্তা-চেতনায়, কাজে-কর্মে জীবনের সব ব্যাপারে সত্যের মর্যাদা রক্ষা করে চললে শাশ্বত কল্যাণ লাভ করা যায়।

অন্যান্য রচনা:

নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ রচনা (৯০০ শব্দ) | এসএসসি ও এইচএসসি

অদম্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ রচনা এসএসসি ও এইচএসসি

বিশ্বকোষ রচনা ২০ পয়েন্ট | এসএসসি এইচএসসি

সততা কি

‘সততা’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ যদিও সাধুতা বা অকপটে সত্য কথা বলা, কিন্তু যাবতীয় সদগুণই এর অন্তর্গত। কোনো ঘটনার বিবরণ গোপন না করে অকপটে তা হুবহ প্রকাশ করাকেই বলা হয় সততা বা সত্যবাদিতা। সব সময় সত্য কথা বলা, সত্য গোপন না করা, কোনো কারণে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ না করা প্রভৃতি গুণাবলিকে সততা বলা হয়। এসব গুণাবলি যাদের মধ্যে নেই তাদেরকে বলা হয় মিথ্যাবাদি।

পাসপোর্ট টু গ্রামার: সাইফুর রহমান খান - Passport to Grammar: Saifur Rahman Khan

TK. 750 TK. 428

সততার বৈশিষ্ট্য

সব রকমের পাপ কাজ থেকে দূরে থেকে ন্যায় ও সত্যের প্রতিফলন ঘটিয়ে চরিত্রের বিকাশ ঘটাতে পারলেই নিজেকে সত্যবাদী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। জীবনের সব ক্ষেত্রে এ গুণটির মর্যাদা মানব হৃদয়ে অটুট রাখার মাধ্যমে এর প্রকৃত স্বরূপ তুলে ধরা যায়। সত্য অবলম্বন করে যে বৈশিষ্ট্য বিকশিত হয় তার নাম সততা। সত্যের মধ্যে কোনো গোপনীয়তা থাকে না। কোনোকিছু অপরের দৃষ্টির বাইরে রেখে আসল জিনিস সম্পর্কে মিথ্যা ধারণা দেওয়া সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছু নয়। সত্য জীবনের স্বরূপ বিকশিত করে, সত্যের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বা তথ্য সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। সত্য অবস্থা জানা থাকলেও কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে নির্বাহ হতে পারে। সত্যের মধ্যে মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই যুগে যুগে সত্যের সাধনা চলেছে। সত্যকে নম্রভাবে ধরে যে মানব, যে সমাজ, যে জাতি নিজেদের সংগ্রাম সাধনাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে, সে নিতাকে লাভ করেছে- তার ফধ্বংস নেই, সে শাশ্বত আলোকোন্ডাসিত জীবন পেয়েছে। যে সমাজে ত্যাগ, কল্যাণ মানবজীবনের আদর্শকে পবিত্র ও নিষ্ফলঙ্ক করার চেষ্টা হয়েছে, সে সমাজ লুপ্ত হয় নি। যুগ-যুগান্তরের অজ্ঞানান্ধকার ভেদ করে সত্যের আলোকে সারা বিশ্বের চতুর্দিকে বিচ্ছুরিত হয়ে যায়।

সততার সাধনা

মিথ্যার কুজ্ঝটিকা অপসারিত করে সত্যের সূর্যালোক লাভ করা সহজ নয়। এর জন্য কঠোর সাধনা প্রয়োজন। মিথ্যার মনোহর মূর্তি আমাদের চারদিকে অসংখ্য ইন্দ্রজাল বিস্তার করে আছে। যে মহামন্ত্র বলে ইন্দ্রজালের কুহক ভেঙে আমরা সত্যের পথ সন্ধান করতে পারব, তা হলো ভক্তি ও বিশ্বাস। জগতে দেখা গেছে, প্রত্যেক খোদাভক্ত ব্যক্তিই সত্যপ্রিয় এবং যে ব্যক্তির নিজের প্রতি অগাধ বিশ্বাস আছে সে-ই সত্যকে লাভ করেছে। চিন্তা ও কল্পনাকে সৃষ্টিকর্তার আসন-প্রান্তে নিত্য প্রতিষ্ঠিত রাখায়, আপনাকে জগতের ক্ষুদ্র লাভ ক্ষতির বহু উর্ধ্বে তুলে ধরে যে ব্যক্তি সংসার ক্ষেত্রে সদর্পে বিচরণ করতে পারেন তিনিই সত্যকে লাভ করতে পারেন। জগতে এ সত্যের পথ অতি বন্ধুর, অতি কণ্টকময়। এ দুর্গম পথে নির্ভয়ে যে অগ্রসর হতে পেরেছে সে-ই সত্যকে জয় করেছে। কঠোর সাধনা ছাড়া সততার পথে জয়ী হওয়া যায় না।

সততার প্রভাব

জীবনকে সৌন্দর্য আর সুষমায় সমৃদ্ধ করতে সততার কোনো বিকল্প নেই। সত্যের অন্তহীন সাধনাই জীবনে সার্থকতা এনে দিতে পারে। যুগে যুগে মহাপুরুষরা সত্যের অনুসরণে তাঁদের জীবনের মহান সাধনাকে সফল করেছেন। সততার জন্য যেমন তাঁরা লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়েছেন, তেমনই সত্যের বলে বলীয়ান হয়ে তাঁরা প্রবল শত্রুকেও পরাজিত করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করেছেন। তাঁদের সামনের সব বাধা সত্যের জোরে জয় করা হয়েছে। শত দুঃখকষ্টের পর সত্যের জন্যই সাধারণ মানুষ বিজয়ী হয়ে ওঠে। সততা চরিত্রের স্বরূপ প্রকাশ করে বলে স্বার্থান্ধ মানুষ অনেক সময় নিজের সুবিধার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেয়। নিজের লোভী মন অপরের ক্ষতি সাধনে তৎপর হয় তখন সত্যের অমর্যাদা করা হয়ে থাকে। মিথ্যার ছলনায় মানুষ নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে নেয়। আপাত দৃষ্টিতে মিথ্যার জয় প্রতীয়মান হলেও তা স্থায়ী নয়। বরং সত্যের প্রকাশ এক সময় অনিবার্য হয়ে ওঠে এবং পরিণামে সত্যের বিজয় ঘোষিত হয়। সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে কেউ কখনো প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এমন দৃষ্টান্ত দেখা যায় না। বরং সত্যকে আঁকড়ে থাকার ফলে জীবনে সাফল্য আসে। সত্যের জয় অবশ্য সাধিত হয়। সত্যবিশ্বাসীরা পরম ধৈর্যের সাথে সত্যের অনুসরণ করে এবং পরিণামে জয়লাভ করে।

সততার দৃষ্টান্ত

সত্যের সাধনায় মহাপুরষরা জীবনকে যেভাবে গৌরবান্বিত করে গেছেন তা মানুষের কাছে মহান আদর্শ হিসেবে যুগ যুগ ধরে প্রেরণা দেয়। সত্যকে যারা মর্যাদা দেয় না তারা উদার হতে পারে না। তাদের যনে চিরদিন ভয় বিরাজ করে। মানবজাতিকে সত্যের পথে পরিচালিত করার জন্য যুগে যুগে এ পৃথিবীতে বিভিন্ন ধর্মের উদ্ভব হয়েছে। পৃথিবীতে সব ধর্মেই মানুষকে সত্যবাদী হওয়ার আহবান জানানো হয়েছে। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহম্মদ (স) নিজে সত্যবাদী ছিলেন এবং সারা জীবন সত্যের বাণী প্রচার করে গেছেন। এর জন্য তিনি দুষ্ট লোক দ্বারা নানাভাবে অত্যাচারিত হয়েছেন, কিন্তু তবু সত্যের পথ ও নিজের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হন নি। ধর্ম প্রবর্তক ছাড়াও যুগে যুগে যেসব মহামানব অমর হয়ে আছেন, তাঁরা সবাই সত্যবাদী ছিলেন।

উপসংহার

সততা মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ মহৎ গুণ। এ গুণটি অর্জনের জন্য শৈশব কিংবা ছাত্রজীবন থেকেই সাধনা করতে হয়। সত্যবাদী মানুষের মনে কোনো ভয় থাকে না, তারা নির্ভীক হয়, তাদের জীবন হয় সুন্দর ও সুখময়।

Related Posts