মানবাধিকার রচনা এর সংকেত
মানবাধিকার রচনা এর সংকেত তথা পয়েন্টগুলো হলো-
সূচনা
মানবাধিকারের ইতিহাস
মানবাধিকার ধারণার পর্যায়ক্রম
সর্বস্তরের মানবাধিকার
জাতিসংঘের মানবাধিকার দলিল
বর্তমান বিশ্বে মানবাধিকার
উপসংহার
মানবাধিকার
সূচনা
সংক্ষেপে মানবাধিকার বলতে বুঝি, ন্যূনতম মৌলিক অধিকারগুলোর সমন্বয়ে সুন্দর, সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার যে অধিকার তাই হলো মানবাধিকার। মানুষ স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে সুন্দর ও সাবলীলভাবে নিজ জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে এটাই স্বাভাবিক, এটাই তার অধিকার। এক কথায় বলা যায় যে, আমাদের এ জগতে দেশে দেশে ও সময়ের বিবর্তনে মানুষের যে মৌলিক ও সর্বজনীন অধিকার স্বীকৃতি পেয়ে আসছে তা-ই হলো মানবাধিকার। একটি দেশে বিভিন্ন জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও গোত্রের বাস থাকতে পারে। উঁচু-নীচু যাই হোক না কেন সব মানুষেরই দেশের প্রতি একটি অধিকার থাকে। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ব পরিস্থিতি দেখা যায় যে, মানবাধিকার দিন দিন ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়ছে।
মানবাধিকারের ইতিহাস
মানবাধিকারের ইতিহাস নাতিদীর্ঘ নয়। প্রাচীনকাল থেকে বিশ্বের মানুষের মধ্যে যুদ্ধ ও হানাহানি হয়ে আসছে। জাতি- ধর্ম-বর্ণ-গোত্র ও ভাষার জন্য এর প্রভাব খুব বেশি দেখা যেত। জাতিতে জাতিতে, ধর্মে ধর্মে, গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রাচীনকাল থেকে এ পর্যন্ত দাঙ্গা-সংঘাত কম হয় নি। এ প্রভাব বিস্তারের ফলস্বরূপ পৃথিবীতে এ পর্যন্ত দুটি বিশ্বযুদ্ধ, স্নায়ুযুদ্ধ ও অর্থনৈতিক দ্বন্দে অনেক লোক প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। মানুষের অধিকার লঙ্ঘনের হাত থেকে পৃথিবীকে সুন্দর করার লক্ষ্যে মানুষে মানুষে শান্তি, মৈত্রী ও সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তুলতে হবে এবং সর্বোপরি সব মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। যদি সব মানুষ সমান অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, তবে সে অঞ্চলের মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে।
মানবাধিকার ধারণার পর্যায়ক্রম
সময়ের স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষ এক দুর্বিনীত আকর্ষণে ছুটছে। সময়ের ঢাকার তালে তালে মানুষ আজ সভ্য ও বৈজ্ঞানিক যুগে বাস করছে। এ যুগে মানুষ তার সঠিক অধিকার সম্পর্কে বুঝতে পারে। মানবাধিকার এখন কোনো গুপ্ত ঘটনা নয়। সব দেশেই সাংবিধানিক দিক দিয়ে মানবাধিকার আইনের আসনে অধিষ্ঠিত হচ্ছে। খ্রিস্টপূর্ব দুই ইহাজার বছর আগে ব্যাবিলনের রাজা হাম্বুরাবির নিয়মাবলিতে প্রথম মানবাধিকার সংক্রান্ত ধারণার পরিচয় পাওয়া যায়। খ্রিস্টীয় ৭ম শতকেও মদিনায় হযরত মুহম্মদ (স) কর্তৃক প্রণীত ‘মদিনা সনদে’ মদিনায় বসবাসকারী সব ধর্মভিত্তিক লোকদের সমান অধিকারের স্বীকৃতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ১২১৫ সালের ইংল্যান্ডে প্রণীত ‘ম্যাগনাকার্টা’কে মানবাধিকারের প্রথম চার্টার বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। যদিও পরবর্তীকালে ১৭৭৬ সালে আমেরিকার ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’, ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লবের মানবাধিকার সনদ এবং ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের বাণী আজও পৃথিবীর মাঝে মানবাধিকার আন্দোলনের মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সবদিক থেকে বিবেচনা করে দেখা যায় যে, সেই প্রাচীন মানবের সূচনালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে মানবিক দিক থেকে বিপর্যস্ত হয়ে আসছে। এসব বিপর্যয়ের কথা আমরা কার্ল মার্কস, জন লক, রুশো, হুগো প্রমুখ মনীষীদের রচনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
সর্বস্তরের মানবাধিকার
মানবাধিকার শুধু মুষ্টিমেয় জনগণের জন্য নয়। এটি সর্বস্তরের সব মানুষের জন্য সমান। এ সুন্দর পৃথিবীতে সবাই সুখে-শান্তিতে সমান অধিকারের ভিত্তিতে বেঁচে থাকতে চায়। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী কুচক্রী লোক তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মানুষকে বিপথে পরিচালিত করে। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সালে ফ্যাসিবাদী জার্মানি ও ইতালি জাতিগত বিদ্বেষ সৃষ্টি করে সমাজে এক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এদেরই নৃশংসতা ও বর্বরতায় বন্দীশিবিরের লাখ লাখ ইচুদি হত্যা করে, ফলে সারাবিশ্বে মানবাধিকার ব্যাপকহারে বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে। এ নৃশংস ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে বিশ্বের বিবেকবান লোক মানবাধিকার লঙ্ঘন রক্ষার্থে সোচ্চার হয়ে ওঠে। এ প্রেক্ষিতে ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মত বিপর্যয় এড়াতে সানফ্রানসিসকো শহরে জাতিসংঘ সৃষ্টি করা হয়। এজন্য তারা একটি সনদ প্রকাশ করে এবং এ সনদই হলো সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও গৃহীত বিশেষ দলিল। যে দলিলের মূল লক্ষ্য হলো পৃথিবীতে মানুষ আগে রাষ্ট্র নয়। তাই মানুষের অধিকার আদায় ও অধিকার বিপর্যয়ের হাত থেকে তাদেরকে মুক্ত করতে হবে। তাদের দিতে হবে সমান অধিকার ও স্বাধীনতা। তবে ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর ফ্রান্সের প্যারিস শহরে জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা গৃহীত হওয়ার পর থেকেই বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার প্রাতিষ্ঠানিক দিক দিয়ে মর্যাদা লাভ করে। মানবাধিকারের ৩০টি ধারা সম্বলিত স্বীকৃতিপত্রে ১৯টি ধারা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে এবং ৬টি ধারা মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কে। অর্থাৎ সমাজে বাস করতে হলে প্রত্যেক মানুষেরই সামাজিক দিক থেকে সবার সমান অধিকার ভোগ করতে হবে। কোনো মানুষই অবহেলার পাত্র নয়। প্রত্যেককেই তার ন্যায্য দাবি পূরণ করতে দিতে হবে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দলিল
জাতিসংঘ মানবাধিকার রক্ষার্থে যে ঘোষণাপত্র পেশ করেছেন তা সবার জন্য সমান। ঘোষণাপত্রটি ভালোভাবে ও বিচক্ষণতার সাথে লক্ষ করলে দেখা যায় যে, মানবাধিকারে কিছু মৌলিক দিক তুলে ধরা হয়েছে। মৌলিক দিকগুলো হলো-
১. মানুষ জন্মগতভাবে সমমর্যাদা ও সমঅধিকার ভোগ করার অধিকারী।
২. জাতি-ধর্ম ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষেরই বিয়ে ও পরিবার গঠনের, সম্পত্তি অর্জনের ও সংঘবদ্ধ হওয়ার অধিকার আছে।
৩. প্রত্যেক মানুষের স্বাধীনভাবে ধর্ম চর্চা, ভোট প্রদান, চিন্তা ও বাক্-স্বাধীনতার অধিকার আছে।
৪. প্রতিটি মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা, বিশ্রাম, বিনোদন, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার অধিকার আছে।
৫. সমাজ ও রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকেরই তার কর্মের উপযুক্ত পারিশ্রমিক লাভের অধিকার আছে।
৬. প্রত্যেক মানুষের শিক্ষা ও সংস্কৃতি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করার অধিকার রয়েছে।
৭. কোনো দেশের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অন্য দেশের অধিকার নেই।
জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের বিশিষ্ট দিকগুলো লক্ষ করলে বলা যায়, কারো অধিকার কারো লঙ্ঘন করা উচিত নয়। কেউ লঙ্ঘন করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। “অন্যের অধিকার অন্যের থাক, আমার অধিকারে আমি”- এ মূলমন্ত্রে সবাইকে এগিয়ে চললে বিশ্বজগতে শান্তির ফোয়ারা ঝরবে। দেশে দেশে কত যুদ্ধ, কত সংঘাত এ তো মানবাধিকার লঙ্ঘনেরই এক জঘন্যতম অপরাধ। দূর হোক মানবাধিকার লঙ্ঘন।
মানবাধিকার রচনা এর পাশাপাশি অন্যান্য রচনা
সততা রচনা এসএসসি ও এইচএসসি (৮০০ শব্দ)
নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ রচনা (৯০০ শব্দ) | এসএসসি ও এইচএসসি
বিশ্বকোষ রচনা ২০ পয়েন্ট | এসএসসি এইচএসসি
বর্তমান বিশ্বের মানবাধিকার
বর্তমান বিশ্ব এক ক্রান্তিময় লগ্ন। মানুষ যত সভ্য হচ্ছে তত তারা বিশ্বমানবতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে চাইছে। আধুনিক এ বিজ্ঞানের যুগে দিন দিন মানুষ যন্ত্রময় দানব হয়ে যাচ্ছে। মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসা তারা দিন দিন যেন হারিয়ে ফেলছে। নারী-নির্যাতন, শিশু-নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, যুদ্ধবাজদের যুদ্ধ এ যেন মানবাধিকার লঙ্ঘনের হীন পর্যায়ে এসে পৌছে গেছে। বিশেষত বিবেকবান মানুষ এগুলো চায় না। কিন্তু ক্ষমতার দাপট, শত্রুতা, বর্ণ বৈষম্য, জাতিভেদ, অন্যের সম্পদের প্রতি লোভ মানুষকে নিচু পর্যায়ে ধাবিত করছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসি মনোভাবে আফগানিস্তান ও ইরাকের মতো দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রে যুদ্ধের নামে নিরীহ নরনারী ও শিশু হত্যা করে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। বিশ্বের সব সচেতন ও বিবেকবান মানুষের বিক্ষোভের তোয়াক্কা না করে বুশ প্রশাসন ও তার দোসর ব্রিটিশ প্রশাসন যে মানবতা বহির্ভূত কাজ করেছে তা সত্যিই ধিক্কারযোগ্য। আজ যুদ্ধ বিপর্যস্ত দেশ দুটি পঙ্গু ও অথর্বের মতো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। প্রতিবেশী ভারতে হিন্দু সাম্প্রদায়িকবাদীদের দ্বারা মুসলিম নিধন ও বাবরি মসজিদ ধ্বংসও মানবাধিকার লংঘনের মতো গুরুতর অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। যারা জাতিসংঘের প্রধান সারির দল তারাই যদি মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তাহলে বিশ্ব পরিস্থিতি কতটা হুমকির মুখে, তা অনুমেয়।
উপসংহার
মানুষ যা পেতে চায় বা তার যা পাওয়া উচিত তা-ই হলো তার অধিকার। যদি সে তার সে পাওনা থেকে বঞ্চিত হয় অথবা বঞ্চিত করা হয় তবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে। নিরাশার ঘরেও সলতের প্রদীপ নিবু নিবু জ্বলে। আমরা আজ নিরাশার ঘরে বাস করছি। মানুষের দিন দিন সচেতনতা বৃদ্ধিই হলো আমাদের সলতের আলো। আমাদের একটাই আশা- মানুষ একদিন নিজেকে বুঝতে শিখবে, অপরের অধিকার সম্পর্কে বুঝতে পারবে। নারী-শিশু ও ভাগ্যহতদের প্রতি সবার সহানুভূতি বৃদ্ধি পাবে। মানবাধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি সবার মাঝে সমানভাবে বণ্টন করে সবার অধিকারকে নিশ্চিত করতে হবে। তবেই পৃথিবীময় একটি সুন্দর ও প্রীতিময় পরিবেশের সৃষ্টি হবে এটাই সব শান্তিপ্রিয় সচেতন মানুষের কাম্য।
মানবাধিকার রচনা তো জানলে। আশাকরি রচনাটি তোমাদের অনেক উপকারে আসবে। এরপর আরও কোন কোন বিষয়ে রচনা পেতে চাও অবশ্যই কমেন্টে জানাবে।
1 comment
[…] মানবাধিকার রচনা (১০৫০ শব্দের) […]
Comments are closed.