রাজনৈতিক সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য
রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংজ্ঞাগুলোর বিশ্লেষণ থেকে এর কতিপয় বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। নিচে এর বৈশিষ্ট্য গুলো উল্লেখ করা হলো:
১. রাজনৈতিক মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি: একটি দেশের মানুষ রাজনৈতিক বিষয়ে কীভাবে চিন্তা করে অর্থাৎ, তাদের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি কীরূপ তাই হচ্ছে উত্ত দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
২. রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি: রাজনৈতিক সংস্কৃতি হচ্ছে রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি। রাজনৈতিক সংস্কৃতির মাধ্যমে রাজনৈতিক উন্নয়নের মাত্রা হিসাব করা যায়।
৩. সুশৃঙ্খল: রাজনৈতিক সংস্কৃতি সুশৃঙ্খল, বিশৃঙ্খল নয়। কম বা বেশি, উন্নত বা অনুন্নত, সচেতন বা অসচেতন যাই হোক না কেন রাজনৈতিক সংস্কৃতি শৃঙ্খলাবদ্ধ।
রাজনৈতিক সংস্কৃতি কি | রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংজ্ঞা দাও |
৪. রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ফল: মানুষ জন্মলাভ করেই রাজনৈতিক সংস্কৃতির অধিকারী হয় না। অর্থাৎ রাজনৈতিক সংস্কৃতি জন্মলব্ধ কোনো বিষয় নয়। ব্যক্তির মধ্যে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়।
৫. অন্তর্নিহিত ভাব: রাজনৈতিক সংস্কৃতি সবসময় সুস্পষ্ট ও সচেতনভাবে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মধ্যে নাও পরিলক্ষিত হতে পারে। কারণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে রাজনৈতিক ব্যবস্থা তথা জনজীবনের ইতিহাস এবং মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের ইতিহাসের ভিত্তিতে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি যেহেতু রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়, তাই এটি অব্যস্তভাবেও গোষ্ঠী ও নাগরিকের মধ্যে বিদ্যমান থাকতে পারে।
৬. রাজনৈতিক জ্ঞান সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি: রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার রীতিনীতি, লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি, বিরোধ মীমাংসার অনুসৃত নীতি-পদ্ধতি, জাতীয় ও আন্তজাতিক বিষয়সমূহের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতি বিষয়ে ঐক্য ও সমঝোতাবিষয়ক জ্ঞানই হচ্ছে রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
৭. রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রকাশ: রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা বা পরিবর্তনের সম্ভাবনা সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবহিত হওয়া যায়।
৮. রাজনৈতিক সচেতনতা ও সক্রিয়তার মাত্রা: বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের মাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে দেশবাসীর রাজনীতি বিষয়ে সচেতনতা ও সক্রিয়তার মান অনুধাবন করা যায়।
৯. ভিন্নতা: বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক সংস্কৃতিরও ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। যেমন- পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে অনেক পার্থক্য হয়ে থাকে।
১০. জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা: জাতি গঠন বা জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মাইরন উইনার (Myron Weiner) ভারতের ক্ষেত্রে দেখিয়েছেন যে, ভারতে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিদ্যমান থাকার কারণে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব রয়েছে।
১১. রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ: রাজনৈতিক সংস্কৃতির সাথে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান। কারণ সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই ব্যক্তির মধ্যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রবেশ করে।
জনমতের গুরুত্ব আলোচনা কর |
এছাড়াও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সুশাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া গণতন্ত্র ফলপ্রসূ হতে পারে না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজন সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে সুসম্পর্ক, সরকারি সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচিতে বিরোধী দলের মতামত গ্রহণ করা। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য পোষণ করা এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করা। আর এ বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হলে প্রয়োজন শক্তিশালী জনমত।
অতএব, উপরের আলোচনা থেকে আপনারা রাজনৈতিক সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য সমূহ সম্পর্কে জানতে পারলেন।