সংগঠনের সংজ্ঞা
সংগঠনের ভাষাগত অর্থ হচ্ছে প্রকৃষ্টরূপে গঠন। বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে সম্পর্কযুক্ত কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানকে সংগঠন বলা হয়। কারবার প্রতিষ্ঠানের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য হচ্ছে মুনাফা অর্জন। এ লক্ষ্যে কারবারি মালামাল, যন্ত্র, লোকবল, মূলধন ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হয়।
এল,এইচ, হেনি এর মতে, একাধিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বিশেষ বিশেষ অংশসমূহের সামঞ্জস্যপূর্ণ সমন্বয় বিধানকে সংগঠন বলা হয়।
ব্যবসায় সংগঠনের প্রকারভেদ আলোচনা কর |
ই-ই-মিলওয়ার্ড এর মতে, কর্মী ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ সমন্বয় সাধন প্রক্রিয়াকে সংগঠন বলে।
সুতরাং, কারবার সংগঠন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে উপকরণসমূহ সমন্বিত হয়ে কারবারের প্রার্থিত উদ্দেশ্য সাধিত হয়।
সংগঠনের উদ্দেশ্য
ব্যবসায় সংগঠন প্রতিষ্ঠার পিছনে যে সকল উদ্দেশ্য থাকে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
১. প্রশাসনিক কার্য সম্পাদন সহজতর করা
প্রাতিষ্ঠানিক কার্যাদি শনারুকরণ, শ্রেণিবিন্যাসকরণ, বিভাগীয়করণ, দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব অর্পণ ইত্যাদির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা ও কর্মীকে নিজ নিজ নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের ব্যবস্থা করে প্রশাসনিক কাজ সম্পাদন সহজতর করাই সংগঠনের মুখ্য উদ্দেশ্য।
২. প্রাতিষ্ঠানিক সম্প্রসারণ ও পরিবর্তনে সাহায্য করা
উত্তম ও শক্তিশালী সংগঠন কাঠামো কারবার প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ এবং যুগোপযোগীকরণে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধনে সাহায্য করে। ফলে প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্য অর্জিত হয়।
৩. উৎপাদনের উপাদানসমূহের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহার নিশ্চিত করা
উৎপাদনের অন্যান্য উপাদানসমূহ যেমন- ভূমি, মূলধন, শ্রম ইত্যাদির সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহার নিশ্চিত করা সুসংঘেবদ্ধ সংগঠনের আরেকটি উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্য সাধনের ফলে উৎপাদিকাশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায়।
৪. উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কার্য ও দায়িত্বভার লাঘব করা
সুষ্ঠু সংগঠন ব্যবহারের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের কার্য ও দায়িত্বভার অপেক্ষাকৃত নিম্নপদস্থ বা মধ্য স্তরের কর্মকর্তাগণের উপর অর্পণ করে প্রথমোক্তগণের কার্য ও দায়িত্বভার লাঘব করা সংগঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
৫. কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা
শিল্পবিপ্লবের পর সারা পৃথিবীর শিল্প ও ব্যবসায় ক্ষেত্রে নানারূপ আধুনিক যন্ত্রপাতি, উৎপাদন ও বণ্টন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হচ্ছে। বর্তমানে কম্পিউটারাইজেশনের মাধ্যমে এর আরও ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। একমাত্র আদর্শ সংগঠনের ব্যবহার দ্বারা এসব উন্নত প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব।
৬. সমন্বয় ও শৃঙ্খলা সংরক্ষণ
সুসংঘবদ্ধ সংগঠন ব্যবস্থায় প্রতিটি কর্মীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সুনির্দিষ্ট থাকে। ফলে কোনো কর্মী দায়িত্ব এড়াতে বা কর্তব্যে ফাঁকি দিতে পারে না। আবার সাংগঠনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক কার্যাবলিকে বিভাগ, উপবিভাগ, শাখা ইত্যাদিতে ভাগ করে সকলের কার্যের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা সংরক্ষণ করা আরেকটি উদ্দেশ্য।
ব্যবসায় সংগঠনের গুরুত্ব আলোচনা কর |
৭. নিয়ন্ত্রণ সহজতর করা
সংগঠন কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের বিস্তারিত সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা দেয়। ফলে কর্মীগণ তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব মোতাবেক কার্য সম্পাদনে বাধ্য থাকে। এতে স্বাভাবিকভাবেই সার্বিক নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
৮. কর্মীদের উচ্ছ্বাবনীশক্তি বৃদ্ধি করা
আদর্শ সংগঠন ব্যবস্থায় কর্মকর্তা ও কর্মীবৃন্দ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদনের সুযোগ পেয়ে থাকে। ফলে স্বীয় কার্য সম্পাদনে নিজস্ব চিন্তাভাবনা উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন নীতি পদ্ধতি উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও সদ্ব্যবহার সম্ভব হয়।
৯. কর্মীদের দক্ষতা ও গুণাবলির যোগ্য ব্যবহার নিশ্চিত করা
সংগঠনের মাধ্যমে কার্যবিভক্তি ও বিশেষায়নের দ্বারা কর্মীদের দক্ষতা ও ব্যক্তিগত গুণাবলির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা এর আর একটি উদ্দেশ্য। কার্যবিভক্তি ও বিশেষায়নের দ্বারা ব্যক্তির দক্ষতার যোগ্য ব্যবহার সম্ভব হয়। এ কারণে একজন কর্মী সকল কার্যে পারদর্শী নাও হতে পারে। যে যে কাজে পারদর্শী তাকে সে কাজ বণ্টন করলেই তার দক্ষতার পূর্ণ ব্যবহার সম্ভব হয়।
১০. কর্মীদের প্রেষণা দান করা
প্রশিক্ষণ, পুরস্কার, বেতন বৃদ্ধি, চিকিৎসা সুযোগ, বাসস্থান ব্যবস্থা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধার মাধ্যমে কর্মীদের সন্তুষ্ট করে তাদেরকে কাজে উৎসাহিত করার ব্যবস্থা করা আদর্শ সংগঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
সুতরাং বলা যায় যে, সংগঠনের উদ্দেশ্য বহুবিধ। এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য সংগঠন নিরলসভাবে কাজ করে যায়। উল্লিখিত উদ্দেশ্যগুলো ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের আরও অনেক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।