অংশীদারি ব্যবসায়
সহজ অর্থে একের অধিক ব্যক্তি মুনাফা অর্জনের উদ্দেশে অংশীদারিত্ব বা শরিকানার ভিত্তিতে যে ব্যবসায় গঠন করেন তাকে অংশীদারি ব্যবসায় বলে।
১৯৩২ সালে অংশীদারি আইন অনুযায়ী সকলের দ্বারা বা সকলের পক্ষে একজনের দ্বারা পরিচালিত কারবারের মুনাফা নিজেদের মধ্যে বণ্টনের নিমিত্তে কতিপয় ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থিত চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ককে অংশীদারি ব্যবসায় বলে।
অধ্যাপক থমাস এর মতে, “অংশীদারি ব্যবসায় হচ্ছে কতিপয় ব্যক্তির একটি সংঘ যার উদ্দেশ্য হচ্ছে সম্মিলিতভাবে ব্যবসায় করে মুনাফা অর্জন করা।”
একমালিকানা ব্যবসায় কাকে বলে? একমালিকানা ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি? |
অংশীদারি ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য
অংশীদারি ব্যবসায়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. সহজ গঠন: অংশীদারি কারবার গঠন করা বেশ সহজসাধ্য। এ ব্যবসায় গঠনে কোনো বিশেষ জটিলতা নেই। কেননা পারস্পরিক স্বেচ্ছাসম্মত চুক্তির মাধ্যমে এ ব্যবসায় গঠিত হয়।
২. চুক্তি: চুক্তিই অংশীদারি কারবারের ভিত্তি। চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কের ভিত্তিতেই এ ব্যবসায় গঠিত ও পরিচালিত হয়। চুক্তি লিখিত বা মৌখিক হতে পারে। তবে চুক্তি নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়।
৩. আইনসঙ্গত উদ্দেশ্য: অংশীদারি কারবারের উদ্দেশ্য অবশ্যই আইনসিদ্ধ হতে হবে। অবৈধ কোনো কিছু করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হলে তাকে অংশীদারি ব্যবসায় বলা যাবে না।
৪. সদস্য সংখ্যা: অংশীদারি ব্যবসায়ে কমপক্ষে ২ জন ও সর্বোচ্চ ২০ জন সদস্য প্রয়োজন। কিন্তু ব্যাংকিং অংশীদারি কারবারের ক্ষেত্রে ১০ জন।
৫. সদস্যদের যোগ্যতা: যে কোনো লোক ইচ্ছা করলে অংশীদারি ব্যবসায় গঠন করতে পারেন না। কেননা সবার চুক্তি সম্পাদন করার যোগ্যতা থাকে না। কেবলমাত্র চুক্তি সম্পাদনে যোগ্য ব্যক্তিরাই অংশীদারি কারবার গঠন করতে পারবেন।
৬. মূলধন সরবরাহ: চুক্তিতে উল্লিখিত শর্ত অনুযায়ী অংশীদাররা ব্যবসায়ে মূলধন সরবরাহ করে থাকেন। অবশ্য চুক্তিতে উল্লেখ থাকলে কেউ মূলধন ছাড়াও কারবারের অংশীদার হতে পারেন।
৭. অসীম দায়: এ ব্যবসায়ে অংশীদারদের দায় অসীম। কারবারের যে কোনো দেনার জন্য অংশীদারদের মূলধন ছাড়াও ব্যক্তিগত সম্পত্তি দায়ী থাকে।
৮. লাভ-ক্ষতি বণ্টন: চুক্তি অনুযায়ী এক্ষেত্রে অংশীদারগণের মধ্যে লাভ-ক্ষতি বণ্টিত হয়। চুক্তিপত্রে এ সম্পর্কে কোনো উল্লেখ না থাকলে সেক্ষেত্রে সমান হারে অংশীদারদের মধ্যে লাভ-ক্ষতি বণ্টন করা হয়ে থাকে।
১. পারস্পরিক সম্পর্ক: অংশীদারি ব্যবসায়ে অংশীদারদের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। এ চুক্তিই তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক, পদমর্যাদা ও আচার-আচরণ নির্ধারণ করে থাকে।
১০. প্রতিনিধিত্ব: প্রত্যেক অংশীদারই প্রত্যেক অংশীদারের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক অংশীদারই প্রত্যেকের প্রতিনিধি ও মুখ্য ব্যক্তি হিসেবে গণ্য।
১১. ক্ষণস্থায়ী: এ কারবারের অস্তিত্ব অংশীদারদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল। আইনগত পৃথক সত্তা না থাকার কারণে এ ব্যবসায় অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী।
১২. নিবন্ধন: অংশীদারি আইন অনুযায়ী এ কারবারের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়। অর্থাৎ চুক্তিপত্রের নিবন্ধন না করে এ ব্যবসায় পরিচালনা করা যায়।
১৩. সিদ্ধান্ত গ্রহণ: অংশীদারি কারবারের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অবশ্য কারবারের প্রকৃতি সংক্রান্ত বিষয়ে শরিকরা অনুকূল সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেন।
১৪. স্বেচ্ছাকৃত সংগঠন: অংশীদারি কারবার কয়েকজন ব্যক্তির যেচ্ছাকৃত সংগঠন। তারা স্বেচ্ছাকৃতভাবে চুক্তির ভিত্তিতে অংশীদারি ব্যবসায় গঠন করেন।
একমালিকানা ব্যবসায়ের জনপ্রিয়তার কারণ কি কি? আলোচনা কর। |
১৫. কারবারের আয়তন: অংশীদারি কারবার সাধারণত মাঝারী আয়তনের হয়।
১৬. পরিচালনা: যৌথভাবে প্রত্যেক অংশীদারই ব্যবসায় পরিচালনার অধিকার সংরক্ষণ করেন। আবার সকলের পক্ষে যে কোনো একজন এ ব্যবসায় পরিচালনায় দায়িত্ব বহন করেন।
১৭. বিলোপসাধন: স্বেচ্ছায় বা কোনো কারণহেতু আদালতের নির্দেশ মোতাবেক অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধন ঘটতে পারে। আলোচিত বৈশিষ্ট্যগুলো একটি অংশীদারি ব্যবসায়ে বিদ্যমান। তবে আয়তনের সীমাবদ্ধতা ও কর প্রদানের বিষয়টিও অংশীদারি ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে।