অংশীদারি ব্যবসায়ের উপাদানসমূহ
দুই বা ততোধিক ব্যক্তির চুক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতেই অংশীদারি ব্যবসায় সৃষ্টি হয়। চুক্তি অংশীদারি ব্যবসায়ের একটি অপরিহার্য উপাদান। তবে আরও কিছু উপাদান রয়েছে যা এ ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। অংশীদারি ব্যবসায়ের উপাদান সমূহ নিচে আলোচিত হলো:
১. পারস্পরিক সম্মতি (Mutual consent)
অংশীদারি ব্যবসায় গঠন করতে হলে অংশীদারদের পারস্পরিক সম্মতি থাকতে হবে। সম্মতি ব্যতীত কোনো ব্যক্তিকে অংশীদারি ব্যবসায়ে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।
২. চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক (Contractual relation)
অংশীদারি সম্পর্ক শুধু চুক্তি দ্বারা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কারও জন্মগত অধিকার বা অন্য কোনোরূপ সম্পর্কের ভিত্তিতে ব্যবসায়ের জন্য একত্রিত হলে তা অংশীদারি ব্যবসায় বলে বিবেচিত হবে না। অর্থাৎ অংশীদারি ব্যবসায়ের উদ্দেশে একাধিক ব্যক্তিকে একত্রিত হতে হলে চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমেই হতে হবে। এজন্য অংশীদারি আইনের ৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, “অংশীদারির সম্পর্ক চুক্তি হতে জন্মলাভ করে, সামাজিক মর্যাদা বলে নয়।” তাই জন্মগতভাবে প্রান্ত ব্যবসায়ের উত্তরাধিকারীগণ কর্তৃক পরিচালিত বা হিন্দু যৌথ পারিবারিক ব্যবসায়কে অংশীদারি ব্যবসায় বলা যায় না।
অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন পদ্ধতি আলোচনা কর |
৩. সদস্য সংখ্যা (Number of members)
অংশীদারি ব্যবসায়ের সদস্য একাধিক হতে হয়। এরূপ ব্যবসায়ের সদস্য ২ থেকে সর্বাধিক ২০ জন পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু ব্যাংকিং ব্যবসায়ে সর্বোচ্চ সংখ্যা ১০ জনে সীমিত থাকে।
৪. আইনসম্মত ব্যবসায় (Legal business)
অংশীদারি ব্যবসায় দেশের আইনের দৃষ্টিতে বৈধ হতে হবে। অর্থাৎ ব্যবসায় সংগঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্র কিংবা সমাজবিরোধী ও অকল্যাণকর কোনো কাজ করা যাবে না।
৫. লাভ-লোকসান বণ্টন (Distribution of profit or loss)
অংশীদারি ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে লাভ-লোকসান চুক্তি মোতাবেক বণ্টন করতে হবে। অর্থাৎ লাভ-লোকসান সব অংশীদারের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়ার রীতি থাকতে হবে।
৬. অংশীদারদের যোগ্যতা (Capability of parmers)
চুক্তি সম্পাদনের জন্য যোগ্য সকল ব্যক্তিই অংশীদারি ব্যবসায়ের অংশীদার হবার যোগ্য। চুক্তি সম্পাদনে অযোগ্যতার কারণে নাবালক, পাগল, দেউলিয়া প্রভৃতি ব্যক্তি অংশীদার হতে পারে না।
৭. পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা (Administration and management)
অংশীদারি ব্যবসায়ের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সকল অংশীদার বা সকল অংশীদারের পক্ষে এক বা একাধিক অংশীদারের উপর ন্যস্ত থাকতে পারে।
৮. পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস (Mutual confidence and trust)
এ ব্যবসায়ের একটি অন্যতম উপাদান হচ্ছে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস। কেননা পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস ব্যতীত অংশীদারি ব্যবসায়ে সাফল্য লাভ করা যায় না। এ কারণে অংশীদারদের মধ্যকার চুক্তিকে ‘চরম সদ্বিশ্বাস’ এর চুক্তি হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
অংশীদারি ব্যবসায়ের গঠন প্রণালী ও বিলোপ সাধন পদ্ধতি আলোচনা কর |
১. পারস্পরিক প্রতিনিধিত্ব (Mutual agency)
অংশীদারগণ প্রত্যেকেই ব্যবসায়ের মালিক ও একে অপরের প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য। যে কোনো অংশীদার কর্তৃক সম্পাদিত কাজের দায়ভার সকলের উপর বর্তাবে।
১০. মেচ্ছাপ্রণোদিত (Free consent)
অংশীদারগণ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকে। সদস্যদের অনিচ্ছা বা জোরপূর্বক সম্পাদিত চুক্তির দ্বারা এ ব্যবসায় গঠিত হতে পারে না।
উল্লিখিত উপাদানসমূহ উপস্থিত থাকলে কোনো ব্যবসায়কে অংশীদারি ব্যবসায় হিসেবে গণ্য করা যায়।