রাজনৈতিক সংস্কৃতি কি?
‘সংস্কৃতি’ ধারণাটি সমাজবিজ্ঞানে অনেক পূর্ব থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এই ধারণার ব্যবহার শুরু হয়। জাতীয় চরিত্র ও মনোভাব বোঝার জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি কথাটি ব্যবহূত হয়। কোনো দেশের জাতীয় চরিত্র ও মনোভাবের প্রতীক হলো সে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। তাই কোনো দেশের রাজনীতিকে বুঝতে হলে সে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অধ্যয়ন করা খুবই জরুরি। যারা রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারণাকে জনপ্রিয় করেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন উলাম বিয়ার (Wlam Beer) ও ডেভিড অ্যালমন্ড (David Almond)। এছাড়াও যাদের নাম এই ধারণার সাথে জড়িত তারা হচ্ছেন কোলম্যান (Coleman), সিডনি ভারবা (Sydney Verba) ও লুসিয়ান পাই (Lucian Pye)। রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারণা বিকাশে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে ডেভিড অ্যালমন্ড (David Almond) ও সিডনি ভারবা (Sydney Verba) কর্তৃক ১৯৬৩ সালে লিখিত বই ‘The Civic Culture’।
জনমতের সংজ্ঞা দাও | জনমত কি বা জনমত কাকে বলে |
রাজনৈতিক সংস্কৃতি সাধারণ সংস্কৃতির অংশ। তাই রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংজ্ঞা প্রদানের পূর্বে সাধারণ সংস্কৃতির সংজ্ঞা প্রদান করা প্রয়োজন। সংস্কৃতি বলতে একটি সমাজের সার্বিক মূল্যবোধকে বোঝায়। সমাজের জনসমষ্টি কর্তৃক স্বীকৃত
মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণগত নিয়মাবলিই হচ্ছে সংস্কৃতি। সংস্কৃতি নির্ধারণ করে কোনটি সত্য, কোনটি মিথ্যা ও কোনটি মূল্যবান, কোনটি মূল্যবান নয়। আর রাজনৈতিক সংস্কতি হচ্ছে সাধারণ সংস্কৃতির সেই অংশ যা রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের বিশ্বাস, অনুভূতি ও মূল্যায়নের সাথে সম্পর্কযুক্ত। একজন ব্যক্তি তার রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে কোনো না কোনো ধারণা পোষণ করে, প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। ধারণা পোষণ ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করাই রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংজ্ঞা
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা ও সংজ্ঞা প্রদান করেন। কতিপয় সংজ্ঞা নিম্নরূপ:
অ্যালান আর বল (Allan R Ball) তার Modern Politics and Government গ্রন্থে বলেন- ‘রাজনৈতিক বিষয় ও ব্যবস্থার সাথে জড়িত সকল আচরণ, বিশ্বাস, আবেগ এবং মূল্যবোধই রাজনৈতিক সংস্কৃতি।’ (Political culture is composed of the attitudes, beliefs, emotions and values of society that relate to the political system and to political issues)
জি.এ. অ্যালমন্ড (G.A. Almond) -এর মতে, ‘রাজনৈতিক সংস্কূতি হচ্ছে কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার সদস্যদের রাজনীতির প্রতি মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিকৃতি।’ (The pattern of individual attitudes and orientation toward politics shared by members of a political system.)
ডেভিড অ্যালমন্ড ও পাওয়েল তাদের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘Comparative Politics: A Developmental Approach’-এ বলেছেন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার সদস্যদের মধ্যে রাজনীতির প্রতি মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির ধরনই রাজনৈতিক সংস্কৃতি’।
ডেনিস কভনও (Dennis Kavanaugh)-এর মতে, ‘রাজনৈতিক সংস্কূতি হলো রাজনৈতিক বিষয়াদির প্রতি নাগরিকের দৃষ্টিভঙ্গির এক সামগ্রিক বণ্টনব্যবস্থা।’
জনমতের গুরুত্ব আলোচনা কর |
লুসিয়ান ডব্লিউ পাই (Lucian W. Pye) সামাজিকীকরণের ওপর জোর প্রদান করে রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তার মতে, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজস্ব ঐতিহাসিক পটভূমিকায় তার নিজস্ব ব্যক্তিসত্ত্বার মধ্যে তার জনগণ ও সম্প্রদায়ের রাজনীতি সম্পর্কে জ্ঞান ও অনুভূতি অর্জন ও সংগ্রহ করে।’ (The concept of political culture assumes that each individual must in his own historical context, learn and incorporate into his own personality the knowledge and feelings about the politics of his people and his community)
ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, ব্যক্তি জন্মলাভ করেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত হয় না। ব্যক্তি যে রাজনৈতিক সমাজে জন্ম গ্রহণ করে সেই সমাজের মূল্যবোধ ও রীতিনীতি দ্বারা তার রাজনৈতিকসংস্কৃতি গড়ে ওঠে। ব্যক্তির মধ্যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যমে। তাই রাজনৈতিক সংস্কৃতি অধ্যয়ন জরুরি। এটির অধ্যয়ন ছাড়া কোনো দেশের রাজনীতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না।