Home » আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ রচনা SSC HSC
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ রচনা

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ রচনা SSC HSC

by Susmi
1 comment

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ

ভূমিকা

প্রযুক্তিবিদ্যার জয়রথ আজ বিশ্বব্যাপী দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। তথ্য ও প্রযুক্তিবিদ্যার প্রভাবে শুধু শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রেই নয়, মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি বিদ্যা ছাড়া বর্তমানে উন্নত দেশগুলোর জীবনযাত্রা প্রায় অচল।। উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষেত্রে প্রযুক্তিবিদ্যার প্রভাব এত ব্যাপক না হলেও সেখানে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান যে প্রযুক্তিবিদ্যার ওপর নির্ভরশীল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের জন্যে একমুখী শিক্ষাক্রম দলিল প্রণীত হয় ২০০৪ সালের মে মাসে, তাতে নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রম হিসেবে ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ অন্তর্ভুক্ত হয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কী

‘তথ্য’ কথাটি নানা অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন: প্রকৃত ব্যাপার, ঠিক খবর অথবা তদন্ত, পরীক্ষা, অনুসন্ধান, আলোচনা, গবেষণা ইত্যাদি থেকে প্রাপ্ত জ্ঞাতব্য বিষয়। ‘যোগাযোগ’ মানে মিলন, সংগঠন, ঐক্য, সামঞ্জস্য। অর্থাৎ সাধারণভাবে বলতে গেলে, যে প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রকৃত ব্যাপার সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে উদ্দেশ্যের মিলন বা ঐক্য বিধান করা যায় তাই হলো ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’। অন্যভাবে বলা যায়, প্রযুক্তিবিদ্যা বলতে আমরা বিভিন্ন শিল্পে বিজ্ঞানের নীতিগুলোর ব্যবহারিক প্রয়োগ-সংক্রান্ত বিদ্যা বুঝে থাকি। তাই স্বভাবতই বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে প্রযুক্তিবিদ্যারও অগ্রগতি ঘটেছে। আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন কম্পিউটার।

সিক্রেটস অব জায়োনিজম : বিশ্বব্যাপী জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্রের ভেতর-বাহির:  হেনরি ফোর্ড - Secrets of Jainism : Bishobapee Jayonisht Shorojontrer  Vetor-Bahor: Henry Ford

TK. 300 TK. 270

বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থার উদ্দেশ্যে বাংলা এবং ইংরেজিতে ১২টি বিষয়ের খসড়া শিক্ষাক্রম দলিল প্রণীত হয় ২০০৪ সালের মে মাসে। কম্পিউটার শিক্ষার শিক্ষাক্রম প্রণয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষাক্রম কমিটি সুপারিশ করে যে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এবং বিষয়ের প্রকৃতি ভালোভাবে চিহ্নিত করার জন্য বিষয়টির নামকরণ করা যায় ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ (আইসিটি)। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি বিষয়াঙ্গিকের দিক থেকে ‘কম্পিউটার শিক্ষা’- কিন্তু এর চেয়ে ব্যাপক এবং এর আন্তর্জাতিক প্রয়োগ প্রেক্ষিত বিবেচনা করে কম্পিউটার শিক্ষার পরিবর্তে ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) নামকরণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার প্রসার

দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদান করা হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ৫১টি কলেজে কম্পিউটার সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট আছে। এসব কলেজে ৪ বছর মেয়াদি ডিগ্রি দেওয়া হয়। বর্তমানে ঢাকা শহরে অর্ধশতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তথ্য প্রযুক্তিতে ৪ বছর মেয়াদি বি.এসসি অথবা, বি.এসসি (প্রকৌশল) ডিগ্রি দেওয়া হয়। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় তথ্যপ্রযুক্তি কোর্সে বছরে তিনবার ছাত্র ভর্তি করে, আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে দু’বার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৫-৬টিতে কম্পিউটার সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ বছর মেয়াদি ডিগ্রি দেওয়া হয়। ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরে বিভিন্ন কলেজ ও প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত কম্পিউটার টেকনোলজি বিভাগ রয়েছে। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী এস.এস.সি পাস করার পর এ ইনস্টিটিউটগুলোতে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে অধ্যয়নের জন্যে ভর্তি হয়। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে চার বছরের ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি দেওয়া হয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষাদান পদ্ধতি

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিখন-শেখানো কৌশলের ভিত্তিতে শিখনকে চিত্তাকর্ষক ও আনন্দদায়ক করে তোলা। বিষয়ের সঙ্গে শিক্ষাকে প্রাসঙ্গিক করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে যে পদ্ধতি গ্রহণ করা যায় তা হলো- প্রতিটি নতুন বিষয়ের শুরুতে ধীশক্তি চর্চার পর্বে শিক্ষার্থীদের শিখন বিষয়ক পূর্ব জ্ঞান, তাদের আগ্রহ ও দক্ষতার স্তর এবং শ্রেণিকক্ষের আলোচনাতে তারা কতটুকু অবদান রাখতে পারে তা পর্যালোচনা। পাঠ্যপুস্তকের ভিত্তিতে এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর বর্তমান জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে শ্রেণিকক্ষে প্রশ্ন-উত্তর পর্বের আয়োজন। শিক্ষার্থীদের অনুধাবনের সুবিধার্থে সম্ভাব্যক্ষেত্রে বাস্তব উদাহরণের ব্যাপার।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষার উদ্দেশ্য

বর্তমান বিশ্বে মানুষের যোগাযোগ এবং কাজ করার ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এসেছে তার প্রতি শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা এবং এসব পরিবর্তনের সাথে সংশ্লিষ্ট সমস্যা ও ঝুঁকি বিষয়ে সচেতন করার মাধ্যমে তাদের সুস্থ ও নৈতিকতার দিকে আকৃষ্ট হতে উৎসাহিত করার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো:

  • শিক্ষার্থীদের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর সমাজের পরিবর্তনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ সাধন করা।
  • শিক্ষার্থীদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং এর প্রকারভেদ, প্রক্রিয়া ও পরিবেশ বিষয়ের অনুধাবন ক্ষমতার বিকাশ সাধন করা।
  • তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কিত উচ্চতর দক্ষতা, বিশেষ করে। বিশ্লেষণ দক্ষতা, যৌক্তিক ক্রমবিন্যাস, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সমস্যা সমাধান দক্ষতার মানোন্নয়ন করা।
  • কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহারিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নৈতিক আচরণের অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়তা করা।
  • তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী, সৃষ্টিশীল এবং সফল ব্যবহারকারী হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে সহায়তা করা।
  • বাংলাদেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব এবং অবদান অনুধাবনের ক্ষেত্রে সহায়তা করা।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব

বিশ্বব্যাপী মানুষের ব্যক্তিগত এবং কর্মজীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমান বিশ্বে মানুষের যোগাযোগ এবং কাজ করার ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাই এর গুরুত্ব বেড়ে গেছে আরও অনেক বেশি। বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব কম নয়। এটি হচ্ছে আবিষ্কারের নবযুগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এর প্রবেশদ্বার। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশ্বের জাতিসমূহকে উদার সহযোগিতা, ব্যবসায় বাণিজ্য, সমৃদ্ধি এবং পারস্পরিক সহমর্মিতার অঙ্গীকার প্রদানের মাধ্যমে এক সম্প্রদায়ে পরিণত করেছে। তথ্যের সহজ বিশ্লেষণ, নির্ভুল ও পরিচ্ছন্ন উপস্থাপনা, সংরক্ষণ, সরবরাহ এবং সৃজনশীল মেধা চর্চার এক অভূতপূর্ব ও অনুপম সুযোগ করে দিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। তথ্য প্রবাহের এ যুগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে অসম্পৃক্ত রেখে শিক্ষার্থীদের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা অসম্ভব। শিক্ষাক্ষেত্রে, ব্যবসায়, সরকারি কর্মকান্ডে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে এমনকি মহাকাশ গবেষণায় আজ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক প্রভাব লক্ষ করা যায়। সুতরাং জীবনের সবক্ষেত্রে আজ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম।

বাংলাদেশে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি

বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। এ ধারাকে আরও বেগবান করতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ রপান্তর করার ঘোষণা দিয়েছেন। দিন দিন কম্পিউটার ব্যবহারের সংখ্যা ও ক্ষেত্র ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে থানা পর্যায় পর্যন্ত চলে গেছে ইন্টারনেট ব্যবহারের সবিধা। ইন্টারনেটের মাধমে যেকোনো সময় যেকোনো তথ্য পেয়ে যাচ্ছি নিমিষেই। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিশ্বের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উন্নত ধারায় সংযুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায় কেন্দ্র, চিকিৎসালয় প্রভৃতি ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। আধুনিক বিশ্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনে বাংলাদেশও এক্ষেত্রে খুব একটা পিছিয়ে নেই। তবে এক্ষেত্রে তথ্য ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার যেমন পরিসর ঘটাতে হবে তেমনি তথ্য ও প্রযুক্তি পণ্যের দামও হ্রাস করতে হবে। প্রয়োজনে এসব পণ্য আমদানিতে ভ্যাট পরিহার করতে হবে এবং ভর্তুকি দিয়ে কম দামে পণ্য সরবরাহ করতে হবে।

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায়, আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যা বিজ্ঞানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাখা। বস্তুত বিজ্ঞানের এ শাখাটির প্রয়োগ ছাড়া আধুনিক জীবন অনেক ক্ষেত্রেই অচল। শিক্ষাক্ষেত্রে, ব্যবসায়, সরকারি কর্মকান্ডে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব অনুধাবন করে বিশ্বের অনেক দেশে বিদ্যালয়ের মূল শিক্ষাক্রমে কম্পিউটার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মৌলিক ধারণা ও দক্ষতার উন্নয়নকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদেরকে উৎপাদনশীল জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

অন্যান্য রচনা:

বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার রচনা (৭৫০ শব্দ)

বিদ্যুৎ ও আধুনিক জীবন রচনা (১০৫০ শব্দ)

বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার রচনা (৭৫০ শব্দ)

Related Posts

1 comment

Comments are closed.