Home » নৌকা ভ্রমণ অনুচ্ছেদ | নৌকা ভ্রমণ রচনা
নৌকা ভ্রমণ অনুচ্ছেদ নৌকা ভ্রমণ রচনা

নৌকা ভ্রমণ অনুচ্ছেদ | নৌকা ভ্রমণ রচনা

by Susmi
0 comment

নৌকা ভ্রমণ সবসময় আনন্দের হয়। আজ আপনাদের আমার জীবনে এক নৌকা ভ্রমণ অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তুলে ধরবো যা আপনারা নৌকা ভ্রমণ অনুচ্ছেদ বা নৌকা ভ্রমণ রচনা হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।

নৌকা ভ্রমণ অভিজ্ঞতা

আমি শহরেই জন্মেছি। বড় হয়েছি এই শহরেই। যদিও আমাদের গ্রামের বাড়ি আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে। ছোটবেলায় মা আমাকে নিয়ে একবার নানার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেটা আমার স্মৃতিতে থাকার কথা নয়। বাসে, ট্রেনে ভ্রমণের অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার, কিন্তু নৌকাভ্রমণের কোনো অভিজ্ঞতা হয়নি। সেই সুযোগও একদিন এসে গেল । আমার ছোটমামার বিয়ে উপলক্ষে নৌকাযোগে গ্রামের বাড়িতে গেলাম । সপরিবারে যাচ্ছি বলে বড়মামা একটা বালাম নৌকা ঠিক করে রেখেছিলেন আগের দিন।

আরও পড়ুন:

একটি শীতের সকাল রচনা || একটি শীতের সকাল অনুচ্ছেদ

খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখি মা সবকিছু ঠিকঠাক করে রেখেছেন। ছোটবোন ফারিয়াও তার পাল জামাটা পরে প্রস্তুত। বড়মামা কাপড়ের ব্যাগ, টিফিন কেরিয়ার ইত্যাদি গুছিয়ে ফেলেছেন। বাবা অফিস থেকে ছুটি পাননি বলে আমাদের সাথে যেতে পারছেন না। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ আমরা নৌকায় গিয়ে উঠলাম। প্রথমদিকে মায়ের কড়া শাসনে আমি চুপচাপ। ছইয়ের মধ্যে বসে থাকলাম। কারণ আমি তো সাঁতার জানি না। কিছুটা ভয়ও লাগছে। তবে শরতের নদী বলে বেশ শান্ত। ছোট ছোট ঢেউয়ে নৌকা দুলছিল। শুয়ে শুয়ে ছইয়ের ফাঁক দিয়ে নীল আকাশ দেখতে থাকলাম। শরতের আকাশ যে এত নীল হয়, তা আজই আমি প্রথম অনুভব করলাম। সাদা সাদা তুলোর মতো হালকা মেঘ ভেসে যাচ্ছে। দূরে উড়ে যাচ্ছে গাঙচিল, মাছরাঙা, বকের সারি। মাঝে মাঝে ভট ভট শব্দ করে ঢেউ তুলে ছুটে যাচ্ছে পাশ দিয়ে লঞ্চ, স্পিডবোট। বড়মামা টু-ইন-ওয়ানে সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের গান শুনছেন—

‘মরমিয়া তুমি চলে গেলে, দরদিয়া আমার…।’

বড়ই দরদ দিয়ে গাওয়া গানের সুর আমাকেও ক্ষণিকের জন্য তন্ময় করে ফেলেছে।

ফারিয়া মায়ের চোখকে ফাঁকি দিয়ে মাঝে মাঝে নদীর পানিতে হাত ডুবিয়ে দিচ্ছে। আমারও ইচ্ছে হচ্ছে নদীর পানিতে হাত ডুবিয়ে খেলা করতে। কিন্তু মাকে বলতেই মা প্রচণ্ড এক ধমক দিলেন। আমাকে ধমক দিতে দেখে মামা মহাকৌতুকে হেসে উঠলেন। আমি ভীষণ লজ্জা পেলাম। মা মনে করে আমি এখনো ছোট্টটি রয়ে গেছি।

নৌকার মাঝি চারজন। বেশ দক্ষ মাঝি বোঝা যায়। খালি গা, কোমরে গামছা বাঁধা। মাথায় একটা পুরনো কাপড় পেঁচানো। নৌকাখানাও বেশ দশাসই। দুইপাশে চ্যাপটা গলুই। মাঝখানে ছবির মতো ছই উঠানো। কাঠের পাটাতনের ওপর হোগলা বিছানো, তার ওপর একটা পাতলা কাঁথা বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে একাধিক বালিশ পাতা আছে। একপাশে একটা মাটির চুলা। সম্ভবত মাঝিরা এখানে রান্না করে খায়। নৌকা তখন মাঝনদীতে। কুলুকুলু ঢেউ, ছলাৎ ছলাৎ শব্দে গলা মিলিয়ে গান ধরল মাঝি

আমি গহিন গাঙের নাইয়া, আমি গহিন গাঙের নাইয়া আমি এপার হতে ওপারে যাই বাইয়া রে আমি…..

আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন ছায়াছবির কোনো দৃশ্য দেখছি। ততক্ষণে পালে হাওয়া লেগেছে। দূরে ছোট ছোট দোকানপাট, হাট-বাজার, দালান-ঘর, বাড়ি, গাছপালা দেখতে পেলাম। পেছনে আবছা ছায়ার মতো দিগন্ত । নদীর ঘাটে কেউ কাপড় ধুচ্ছে, মেয়েরা ঘোমটা মাথায় থালাবাসন মাজছে, কেউ-বা শিশুকে গোসল করাচ্ছে, ভরা কলসি কাঁখে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে গ্রাম্য বধূ। কিশোর দামাল ছেলেরা নদীর ঘোলা জলে লাফালাফি করছে, কেউ-বা সাঁতার কাটছে। জেলেরা জাল বহিছে। কেউ গরু গোসল করাচ্ছে নদীর জলে। এক জায়গায় দেখলাম একসাথে অনেকগুলো সারিবাঁধা নৌকা। কোনো কোনো নৌকা থেকে ধোঁয়া উড়ছে। ছইয়ের ওপর রোদে দেওয়া শাড়ি। বড়মামা বললেন, ওগুলো বেদের নৌকার বহর।

বেলা তিনটার দিকে আমরা তালতলির ঘাটে গিয়ে পৌঁছলাম। তালতলির বাজারটা ঘুরে দেখা আমার খুব শখ। তালতলির বাজারে একটা ভাঙাচোরা চায়ের স্টলে চা খেলাম। গরুর খাঁটি দুধের চা। আমার কাছে অমৃতের মতো লেগেছে।

এখান থেকে আমাদের নৌকা ধলেশ্বরী হয়ে একটা ছোট খালে প্রবেশ করল। দুপাশে শান্ত সুন্দর বাড়িঘর। মাঝে মাঝে বর্ষার পানিতে ভেসে থাকা সবুজ ধানখেত, কচুরিপানার রঙিন ফুল আর জলজ উদ্ভিদের মন্দির গল্প, পানকৌড়ি আর ডাহুকের ডাক, ভেসে বেড়ানো হাঁসের দল, কাশফুলের শুভ্র হাতছানি সব মিলে বাংলার অপরূপ রূপ দেখে আমি মুগ্ধ। মনে মনে বললাম সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে। সার্থক আমার নৌকা ভ্রমণ ।

Related Posts