Home » পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা (৭০০ শব্দ)
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা (৭০০ শব্দ)

by Susmi
0 comment

পানি দূষণ, বায়ু দূষণ, মাটি দূষণ ইত্যাদি মিলেই হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। আজকের গুরুত্বপূর্ণ লেখা পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে।

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

সারা পৃথিবী জুড়ে ঘনিয়ে আসছে পরিবেশ-সংকট। মানুষের সৃষ্ট যন্ত্রসভ্যতার গোড়াপত্তন থেকেই চলেছে প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর মানুষের নির্মম কুঠারাঘাত। ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। মারাত্মক পানিদূষণ ও বায়ুদূষণ নিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা আজ উদ্বিগ্ন। এ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে চলছে নানা গবেষণা। এ ব্যাপারে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতিসংঘ ৫ই জুনকে ঘোষণা করেছে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস‘।

আরও পড়ুন:   মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা

পরিবেশ দূষণের কারণ

পরিবেশ দূষণের কারণ অগণিত। তবে মূল কারণগুলি হচ্ছে : অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন, জনসংখ্যার ব্যাপক বৃদ্ধি এবং বৃক্ষ ও বনভূমির অপরিকল্পিত ব্যবহার। পরিবেশ দূষণের আর একটি কারণ পৃথিবীর বুকে জনবসতি বৃদ্ধি। এর ফলে সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাহিদার চাপ পড়েছে প্রচণ্ডভাবে। ভূমিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে চাষের তীব্রতা, ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে কৃত্রিম সার ও কীটনাশকের। এতে বিনষ্ট হচ্ছে চাষযোগ্য ভূমির সঞ্জীবনী শক্তি, অন্যদিকে নতুন নতুন বসতি আর কলকারখানা স্থাপনের মধ্য দিয়ে ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে চাষযোগ্য ভূমি ও বনভূমি। কারখানার কালো ধোঁয়া আর বিষাক্ত গ্যাস নির্গমনের পাশাপাশি রাসায়নিক শিল্প-কারখানা থেকে প্রতিদিন নদী, হ্রদ, সমুদ্রে মিশছে বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত বর্জ্যদ্রব্য। মাটি, পানি, বাতাস এবং আমাদের চারপাশের উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের ওপর বিষক্রিয়ার প্রভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ হয়ে উঠছে ভারসাম্যহীন, দূষিত ও বসবাস-অযোগ্য।
পরিবেশ-বিপর্যয় সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেছেন, পরিবেশ দূষণের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উত্তর সাগরের বরফ গলে উঁচু হয়ে উঠছে সাগরের পানি। ফলে আমাদের দেশের মতো নিম্নাঞ্চল অদূর ভবিষ্যতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে।

পরিবেশ দূষণের জন্যে মূলত পাশ্চাত্যের শিল্পোন্নত দেশগুলোই দায়ী। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, পরিবেশের বিপর্যয় এককভাবে কোনো দেশ বা ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের জন্যে নির্দিষ্ট নয়। এটা সমগ্র মানবজাতির অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে দেবে। পরিবেশদূষণ সমস্যা ও বাংলাদেশ সীমিত ভূ-খণ্ড ও সম্পদ এবং তুলনামূলকভাবে অতি ঘন জনবসতি ও দুর্যোগপ্রবণ ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশের মানুষকে পরিণত করেছে পরিবেশ দূষণের শিকারে। বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন কারণের মধ্যে রয়েছে:

১. জনবিস্ফোরণ: জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপে বাংলাদেশে মুক্তাঞ্চল ও বনভূমির পরিমাণ কমছে। জলাভূমি ভরাট করে ব্যবহার করা হচ্ছে। 

২. সার ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার: জমিতে ব্যাপক হারে সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হওয়ায় মাটির দূষণ ঘটছে এবং জমির গুণ নষ্ট হচ্ছে। এইসব রাসায়নিক উপাদান নদী ও জলাশয়ের পানিতে মিশে গিয়ে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত্যুর কারণ হচ্ছে।

৩. শিল্পদূষণ: কলকারখানা থেকে নিঃসৃত তরল রাসায়নিক বর্জ্য পানিকে দূষিত করছে, তা মাছের বিলুপ্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কলকারখানার নির্গত ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করে জনস্বাস্থ্যের জন্যেও হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

৪. বন উজাড়করণ: জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপে প্রতিবছর উজাড় হচ্ছে ১.৪ শতাংশ বন। ফলে ভূমিক্ষয়ের মাত্রা বাড়ছে, বন্যা প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে এবং দেশের গড় তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে।

৫. ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন: ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন ও ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আরও নিচে চলে যাচ্ছে। এর ফলে উত্তরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট বাড়ছে। প্রকট হচ্ছে পানিতে আর্সেনিক দূষণের সমস্যা।

৬. আবর্জনা সমস্যা: শহরাঞ্চলের ময়লা আবর্জনার পচা গ্যাস বায়ুদূষণ সৃষ্টি করছে।

৭. ভূমির অপর্যাপ্ততা: পাহাড় কেটে বসতবাড়ি তৈরি করায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। শহরের ভাসমান মানুষ ও বিপুল বস্তিবাসীর চাপেও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন:   কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা 

পরিবেশ দূষণ রোধের উপায়/প্রতিকার

আমাদের দেশে পরিবেশ দূষণ রোধে যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে হবে সেগুলো হলো: পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। দেশের মোট আয়তনের ন্যূনতম ৫০% এলাকায় বনায়ন করতে হবে। বর্তমান জ্বালানি পরিবর্তন করে বাতাস, সৌর ও পানি বিদ্যুতের মতো পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির প্রচলন করতে হবে। বন উজাড়করণ ও ভূমিক্ষয় রোধ করতে হবে। শিল্প-কারখানা ও গৃহস্থালির বর্জ্য পরিশোধনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। বর্জ্য থেকে সংগৃহীত গ্যাস জ্বালানি হিসেবে এবং পরিত্যক্ত পদার্থটি সার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। কৃষিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার কমিয়ে জৈবসারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে।

পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের কাজকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে। শিল্প-কারখানাগুলো আবাসিক এলাকা থেকে দূরে স্থাপন করতে হবে। শিল্পে। এবং যানবাহনে ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশ ব্যবহার রোধ করতে হবে এবং অল্প জ্বালানিতে অধিক কার্যকর যন্ত্র আবিষ্কার করতে হবে। এ ছাড়াও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার রোধ ও শিক্ষার হার বাড়ানো, যে-কোনো পরিকল্পনার পূর্বে তার পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা করা, উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ এবং বাঁধের পাশে বনায়ন করা দরকার।

উপসংহার

পরিবেশ সংরক্ষণের দায়িত্ব কেবল সরকার বা কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি-বিশেষের নয়; দায়িত্ব সকল বিশ্ববাসীর, প্রতিটি ব্যক্তির। যারা অজ্ঞতাবশত পরিবেশ দূষণে যুক্ত হচ্ছেন তাদের যেমন সচেতন করা প্রয়োজন তেমনি যারা অতি মুনাফার লোভে জেনেশুনেও পরিবেশের তোয়াক্কা করছেন না, তাদের কঠোর শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। সেইসঙ্গে ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও পরিকল্পনার নীতি-কর্মসূচির মধ্যে থাকতে হবে বিরল সম্পদ রক্ষার জন্যে বিকল্প উপায় উদ্ভাবন এবং পরিবেশের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহার। আমাদের অস্তিত্বের জন্যই পরিবেশ দূষণ রোধে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

Related Posts