এখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা pdf ও দেয়া হয়েছে। চাইলে pdf টিও ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
রচনা: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
ভূমিকা
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বাঙালিদের কাছে শোক ও আনন্দ মিশ্রিত ইতিহাসের এক অধ্যায়। বাঙালির আবহমান কালের ইতিহাসে এই মাইলফলক সৃষ্টি হয় ১৯৭১ সালে। রক্ত, অশ্রু আর অপরিসীম আত্মত্যাগের ভেতর দিয়ে একাত্তরে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা। আর বীরত্বপূর্ণ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে অভ্যুদয় হয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। মুক্তিযুদ্ধ ভাই আমাদের জাতীয় জীবনে এক অহংকার, গৌরবের এক মহান বিজয়গাথা।
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি
১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের সময় পূর্ববাংলাকে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল কৃত্রিম ও সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে। পাকিস্তানের জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশেরই বাস ছিল পূর্ববাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানে। কিন্তু তবু শাসনক্ষমতার চাবিকাঠি কুক্ষিগত ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। ক্রমেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর শাসন-শোষণের স্বরূপ পূর্ববাংলার জনগণের সামনে স্পষ্ট হতে থাকে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যেই শতকরা ৫৬ জনের মাতৃভাষা বাংলাকে উপেক্ষা করে পাকিস্তানি শাসকরা শতকরা ৭ ভাগ লোকের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে পূর্ববাংলার মাটিতে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ববাংলার প্রতিবাদী জনতা দেশের মুক্তিমন্ত্রে দীক্ষা নেন।
১৯৫৮ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্রমূলক সামরিক শাসন জারি করে। তারা শিক্ষা-সংকোচন ও দমন-নীতি চালাতে থাকে। ফলে পূর্ববাংলায় তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। এই প্রেক্ষাপটে স্বাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬-দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। পাকিস্তানি সরকার আবারও কঠোর দমননীতির আশ্রয় নেয়। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়: এবং তার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা দায়ের করা হয়। ১৯৬৯ সালে প্রবল গণ-আন্দোলন ফুঁসে উঠলে সরকার আগরতলা মামলা তুলে নিতে ও রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭০ সালে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।
আওয়ামী লীগের অভূতপূর্ব বিজয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করে ষড়যন্ত্র শুরু করে। ফলে পূর্ববাংলায় গণ-অসন্তোষ তীব্র হয়ে ওঠে। এই প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকায় এক ঐতিহাসিক সমাবেশে এক উদ্দীপ্ত ভাষণে তিনি ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে ঘোষণা দেন— ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা pdf Download
অসহযোগ আন্দোলন তুঙ্গে উঠলে পাকিস্তান সরকার নির্মম হয়ে ওঠে। ২৫শে মার্চ রাতে তদানীন্তন সামরিক একনায়ক জেনারেল ইয়াহিয়া খান পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দেয় নিরীহ বাঙালি জনগণের ওপর। রাতের আঁধারে নির্মম ও বর্বর গণহত্যার ঘটনা ঘটে। গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ২৫ এ মার্চ মধ্যরাত শেষে অর্থাৎ ২৬ এ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার পরেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিক্ষেপ করা হয় কারাগারে।
মুক্তিযুদ্ধের বিবরণ
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশের মধ্যে হত্যা ও ধ্বংসের রাজত্ব কায়েম করে। বাঙালি পুলিশ ও সেনারা স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেয়। রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও প্রায় ১ কোটি শরণার্থী সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু হয়। ১৯৭১-এর ১০ই এপ্রিল ভারতে গঠিত হয় অস্থায়ী প্রবাসী সরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি করা হয়। তাঁর অবর্তমানে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাজউদ্দীন আহমদ পালন করেন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব। মুক্তিযুদ্ধের সেনাপতি হন কর্নেল (অব.) আতাউল গনি ওসমানী। বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে মুক্তিবাহিনী মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান করে তোলে । পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক ও রাজনৈতিক কর্মীরা মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করে। তারা যুদ্ধকৌশল, অস্ত্রচালনা ও বিস্ফোরক ব্যবহার সম্পর্কে দেশের ভেতরে এবং প্রতিবেশী ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। এভাবে দেশের সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়। এ দেশের মুষ্টিমেয় ব্যক্তি রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দালাল হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে।
পাকিস্তানি বাহিনী ক্রমেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সৌদি আরবসহ কিছু দেশ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষে অবস্থান নিলেও ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নসহ পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন জানায়। সারা বিশ্বে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হয়। মুক্তিবাহিনী ক্রমে শক্তি অর্জন করে। তাদের চোরাগোপ্তা গেরিলা তৎপরতা ও দুঃসাহসিক লড়াইয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। ভারত মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজয় বরণ করে। তারা ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দি উদ্যান) আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। সারাদেশে জনতার দৃপ্ত উল্লাসের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
উপসংহার
বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। সে স্বাধীনতা এমনি আসেনি। এর জন্য শহিদ হয়েছে ৩০ লক্ষ মানুষ। উদ্বাস্তু হয়েছে এক কোটি মানুষ। যে স্বপ্নসাধ বুকে নিয়ে অজস্র ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি সে স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি। সেই লক্ষ্যে আমরা আজও এগিয়ে চলেছি। আমাদের অনেক দূর খেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্নসাধ বাস্তবায়ন করেই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হবে।
আরও রচনা দেখুন:
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর রচনা | রচনা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র সমাজের ভূমিকা রচনা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা (১২৫০ শব্দ)
1 comment
[…] আরও পড়ুন: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা […]
Comments are closed.