বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস
বিভিন্ন পদ্ধতিতে সংবিধান প্রণীত হয়। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়েছে গণপরিষদ কর্তৃক। তবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়েছে। নিচে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো-
ক. অস্থায়ী সংবিধান আদেশ, ১৯৭২
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলে সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের একটি সংবিধান প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে প্রত্যাবর্তন করে পর দিন ১১ জানুয়ারি অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেন। অস্থায়ী সংবিধান আদেশে বলা হয়-
১. বাংলাদেশের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি গণপরিষদ গঠিত হবে।
২. দেশে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিসভা থাকবে। তিনি রাষ্ট্রপতির পরামর্শ অনুযায়ী তাঁর সমস্ত কার্য সম্পাদন করবেন।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর |
৩. গণপরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন একজন সদস্যকে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করবেন।
৪. গণপরিষদ কর্তৃক সংবিধান প্রণীত ও প্রবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের একজন নাগরিককে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করবেন।
৫. একজন প্রধান বিচারপতিসহ কয়েকজন বিচারপতি নিয়ে বাংলাদেশে একটি হাইকোর্ট থাকবে।
খ. গণপরিষদ আদেশ জারি, ২৩ মার্চ ১৯৭২
বাংলাদেশের জন্য একটি স্থায়ী সংবিধান রচনার উদ্দেশ্যে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে রাষ্ট্রপতি ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ’ জারি করেন। সে মোতাবেক গণপরিষদ গঠন ও কার্যক্রম শুরু হয়।
গ. গণপরিষদ গঠন, কার্যক্রম ও সংবিধান প্রণয়ন
গণপরিষদ আদেশ অনুসারে ১৯৭০ ও ১৯৭১ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদে বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত সকল সদস্য (১৬৯ + ৩১০ = ৪৭৯ জন) নিয়ে গণপরিষদ গঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নিহত, স্বাভাবিক মৃত্যু এবং অন্যান্য কারণে কিছু সংখ্যক সদস্য বাদ পড়ায় মোট ৪০৩ জন সদস্য নিয়ে গণপরিষদ গঠিত হয়। ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি গণপরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। অধিবেশনের প্রথম দিনে শাহ আব্দুল হামিদ স্পিকার এবং মোহাম্মদ উল্লাহ ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন।
১৯৭০ সালের নির্বাচন ও ফলাফল আলোচনা |
খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি
গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি ‘খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি’ গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি মোট ৭৪টি বৈঠকে মিলিত হয়। বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে বিভিন্ন সংগঠন এবং আগ্রহী ব্যক্তিদের নিকট থেকে সংবিধান সম্পর্কে প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। কমিটির চেয়ারম্যানসহ কতিপয় সদস্য যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে সফর করেন। ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর ড. কামাল হোসেন গণপরিষদে খসড়া সংবিধান বিল আকারে উত্থাপন করেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়-পাঠ শেষে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে সংবিধান সংক্রান্ত বিল পাস হয়। এরপর ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হয়।
অতএব, উপরের আলোচনা থেকে আপনারা বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারলেন।