Home » বৃক্ষরোপণ অভিযান রচনা (৯০০ শব্দ)
বৃক্ষরোপণ অভিযান রচনা

বৃক্ষরোপণ অভিযান রচনা (৯০০ শব্দ)

by Susmi
1 comment

বৃক্ষরোপণ অভিযান রচনা

বৃক্ষরোপণ অভিযান রচনা

অন্ধ ভূমিগর্ভ হতে শুনেছিলে সূর্যের আহ্বান

প্রাণের প্রথম জাগরণে, তুমি বৃক্ষ, আদিপ্রাণ-

ঊর্ধ্বশীর্ষে উচ্চারিলে আলোকের প্রথম বন্দনা

ছন্দোহীন পাষাণের বক্ষ’- পরে; আনিলে বেদনা

নিঃসাড় নিষ্ঠুর মরুস্থলে।  ——রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা

বন প্রকৃতি মানুষের নিকটতম প্রতিবেশী। বনভূমিই পৃথিবীর প্রথম আগন্তুক। মানুষের আগমনের পূর্বেই সে এসে মানুষের ক্ষুধা মিটাবার খাদ্য এবং মাথা গুঁজবার শীতল ছায়া সৃষ্টি করে প্রতীক্ষা করছিল মানুষের আবির্ভাবের। তারপর মানুষ এল এবং সৃষ্টির সেই প্রথম প্রভাতে মানুষ ভূমিষ্ঠ হয়েছিল স্নিখ শ্যামল অরণ্যের কোলেই। অরণ্য তার অবারিত শ্যামল ছায়া বিস্তার করে তাকে সূর্যের প্রখর দহন জ্বালা থেকে রক্ষা করেছিল। তার ক্ষুধার্ত মুখে অরণ্যই দিয়েছিল খাদ্য, প্রকৃতির নানা বিরুদ্ধ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করবার জন্যে দিয়েছিল নিরাপদ আশ্রয়। কিন্তু কালক্রমে কৃতঘ্ন মানুষ তার সেই পরম হিতৈষী অরণ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে কঠোর হাতে কুঠার নিয়ে পৃথিবীকে বৃক্ষহীন করতে উদ্যত হয়েছে। কিন্তু বৃক্ষ না থাকলে মানুষ পৃথিবীতে বসবাস করতে পারত কি না সন্দেহ। শুধু মানুষই নয়, গোটা প্রাণিজগতই বিলুপ্ত হয়ে পড়ত। কাজেই বলা যায়, বৃক্ষ প্রাণিজগতের জন্যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বৃক্ষকে টিকিয়ে রাখা, নতুন নুতুন বৃক্ষরোপণ করা, পরিবেশ সংরক্ষণের জন্যে বনায়নের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি আজ প্রাণিকুলের অপরিহার্য কর্তব্য। বৃক্ষরোপণ অভিযানের মাধ্যমে সেই শুভবোধ আজ মানুষের মনে জাগ্রত হচ্ছে।

বৃক্ষের গুরুত্ব

অরণ্য হনন যে আত্মহননের নামান্তর, তা এতদিনে মানুষের উপলব্ধি হয়েছে। অরণ্য হননের ফলে যে একদিন জলহীন ছায়াহীন মরুভূমি নেমে আসবে এবং তাতে যে একদিন মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে, সেই শুভবোধ আজ মানুষের মনে জাগ্রত হচ্ছে। বৃক্ষরোপণ অভিযান সেই শুভবোধের আনন্দময় প্রকাশ। বৃক্ষ আমাদের নানাবিধ প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বৃক্ষ আমাদের পাকা ফল, জীবনধারণের জন্যে প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র তৈরির সুতা, বাসগৃহ তৈরির উপকরণ, আসবাবপত্র তৈরির কাঠ, জ্বালানি ইত্যাদি দিয়ে থাকে। তাছাড়া বনজসম্পদ দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে। এমনকি বৃক্ষ দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করে। আবহাওয়াকে ঠান্ডা রাখতে, ভূমিক্ষয়কে রোধ করতে, ঝড়-বন্যাকে প্রতিরোধ করতে, বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে ভূমিকে উর্বর ও সরস করতে বৃক্ষ খুবই দরকার। জীবন রক্ষাকারী অনেক ওষুধও তৈরি হয় বৃক্ষ থেকে। এছাড়া কাগজ, দিয়াশলাইয়ের কাঠি ইত্যাদির জন্যে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। মোটকথা, বৃক্ষ ছাড়া মানবজীবন অচল।

বাংলাদেশে বনের অবস্থা

বৃক্ষের সীমাহীন পুরুত্বের পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করা হলে বাংলাদেশে বনের অবস্থা নৈরাশ্যজনক বলে প্রতিভাত হবে। বাংলাদেশে বিখ্যাত সুন্দরবন দীর্ঘ ঐতিহ্যের পরিচায়ক। ভাওয়াল, মধুপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বনাঞ্চল রয়েছে। কিন্তু ব্যাপকভাবে ও অপরিকল্পিত উপায়ে বনের গাছপালা কেটে ফেলায় দেশের সামগ্রিক বনাঞ্চল কমে যাচ্ছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্যে দেশের আয়তনের এক-চতুর্থাংশ বনাচ্ছাদিত থাকার কথা। কিন্তু দেশে মোট আট শতাংশ বনভূমি রয়েছে। তাছাড়া প্রতিনিয়ত প্রচুর বনসম্পদ বিনষ্ট করে ফেলা হয়। এর ফলে দেশে এখন গাছের অভাব ঘটছে, বনাঞ্চল কমে যাচ্ছে। পরিণামে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় দেশে বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে বলে অনুমান করা হয়। এভাবে বৃক্ষের অবসান ঘটলে, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনযজ্ঞ চলতে থাকলে দেশের জন্যে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।

পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষ

শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, পরিবেশ সংরক্ষণের জন্যেও বাংলাদেশে বৃক্ষরোপণ অভিযান প্রয়োজন আছে। আমরা জানি, প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্যে বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ বনভূমি আবশ্যক, কিন্তু এখানে বর্তমানে আছে মাত্র ১৬.৪৬ শতাংশ বনভূমি। আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে বনায়ন বৃদ্ধি করা উচিত। তা না হলে আমরা গ্রীণহাউস ইফেক্ট-এর করাল গ্রাস থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারব না। বৈজ্ঞানিকদের সমীক্ষায় জানা গেছে যে, গ্রীন হাউসের প্রভাবে বাংলাদেশে এক কিলোমিটার সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে পারে, আর তাতে উপকূলীয় এলাকা প্রায় ২২,৮৮৯ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ পানির নিচে চলে যেতে পারে। তাছাড়া আমাদের প্রাণিজগতে বেঁচে থাকার জন্যে প্রয়োজনীয় উপাদান হলো অক্সিজেন। অক্সিজেন আমরা সাধারণত পেয়ে থাকি বৃক্ষ বা বনভূমি থেকে। আমাদের বাংলাদেশের মানুষের জন্যে যে পরিমাণ অক্সিজেনের প্রয়োজন, সে পরিমাণ অক্সিজেন মেটাবার মতো বনভূমি বাংলাদেশে নেই। ১৯৪৭ সালে আমাদের দেশে বনের পরিমাণ ছিল ২৪ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে তা কমে অনেক নিচে নেমে গেছে। এমতাবস্থায় আমাদের বনভূমি বা উদ্ভিদ থেকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন আমাদের পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে বনভূমি বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন।

বনভূমি ও মানবজীবন

মানবজীবন ও অরণ্য জীবন- প্রাণের এই দুই মহান প্রকাশের মধ্যে বাজে একটিমাত্র ছন্দ। ঋতুচক্রের আবর্তনের পথে উভয়ের একই স্পর্শকাতরতা। বসন্তের দক্ষিণ বাতাসে মানুষ তার হৃদয়ের আনন্দানুভূতিকে চিত্রে, সংগীতে কিংবা কবিতায় প্রকাশ করে। আর, অরণ্য তার বাসন্তী বেদনাকে প্রকাশ করে অশোক, পলাশ, আর কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম প্রগলভতায়। উভয়ের আদান প্রদানের সম্পর্কও অতি নিবিড়। এক বিপুল ভ্রান্তিবিলাসের জন্যে মানুষ এতদিন তার পরম বন্ধুকে চরম শত্রু মনে করে নির্বোধ ঘাতকের মতো ধ্বংসের পৈশাচিক লীলায় মেতে উঠেছিল। আজ আর বনভূমি ধ্বংস নয়, বনভূমি সৃজনই প্রয়োজন। অরণ্য ছাড়া পৃথিবী পরিণত হত মরুভূমিতে। অরণ্যই প্রাণের অগ্রদূত।

বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সফল করার উপায়

বনভূমির কাছ থেকে উপকার পাওয়ার জন্যে দরকার ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ অভিযান কর্মসূচি গ্রহণ করা। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হলে প্রয়োজন পুরাতন গাছকে নির্বিচারে না কাটা এবং নতুন গাছের চারা লাগানো। নতুন করে গাছ লাগাতে বা রোপণ করতে হলে প্রয়োজন চারার। সকল ধরনের গাছের চারা সংগ্রহ করা খুবই কঠিন কাজ। কারণ, গাছের চারা কোনোটা হয় ফল থেকে, কোনোটা বীজ থেকে, আবার কোনোটা হয় ডাল থেকে কলমের মাধ্যমে। এরুপ চারা সাধারণ মানুষের পক্ষে সংগ্রহ করা কঠিন কাজই বটে। তাই এই সংগ্রহের কাজ করতে হবে সরকারের বিভাগগুলোকে। সরকার যদি এই চারা সংগ্রহ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করে, তা হলে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সফল করা সম্ভব। তাছাড়া গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে, উৎসাহিত করতে হবে। বনাঞ্চল কমে যাওয়ার পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্যে পরিকল্পিত উপায়ে বৃক্ষরোপণ করে সমস্যার সমাধান করতে হবে। চারা রোপণের নিয়ম- কানুন ও পরিচর্যা সম্পর্কে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে জনগণকে অবহিত করতে হবে। সাম্প্রতিককালে বৃক্ষমেলা আয়োজনের মাধ্যমে গাছের চারা সবার কাছে সহজলভ্য হচ্ছে। প্রত্যেকের বাড়ির পাশের অনাবাদি জায়গায়, পুকুর পাড়ে, রাস্তার পাশে, স্কুলের পতিত জায়গায় বৃক্ষরোপণ করতে হবে। ছাত্র-শিক্ষকসহ সকল স্তরের জনগণের মধ্যে যদি বৃক্ষরোপণের উৎসাহ-উদ্দীপনা ও জাগরণ ঘটানো যায়, তাহলে বৃক্ষরোপণ অভিযান সফল হবে বলে আশা করা যায়।

উপসংহার

বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিকে সফল করার জন্যে আমাদের প্রত্যেকের প্রয়োজন প্রতিবছর গাছ লাগানো এবং গাছকে যত্নের সাথে রক্ষণাবেক্ষণ করা। ফলে গাছ থেকে আমাদের প্রয়োজন মেটাতে পারব, আমরা গ্রীন হাউস ইফেক্ট থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে এবং পরিবেশগত ভারসাম্য ও প্রাকৃতিক অবক্ষয় থেকে মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে পারব।

অন্যান্য রচনা:

পরিবেশ দূষণ রচনা Class 7, 8, 5, SSC, HSC

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ রচনা SSC HSC

বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনা

Related Posts

1 comment

পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন রচনা এসএসসি ও এইচএসসি November 30, 2023 - 1:19 pm

[…] বৃক্ষরোপণ অভিযান রচনা (৯০০ শব্দ) […]

Comments are closed.