Home » যৌথ মূলধনী কোম্পানির গুরুত্ব আলোচনা কর
যৌথ মূলধনী কোম্পানির গুরুত্ব,

যৌথ মূলধনী কোম্পানির গুরুত্ব আলোচনা কর

by Susmi
0 comment

যৌথ মূলধনী কোম্পানির ‍গুরুত্ব

মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে কতিপয় ব্যক্তি স্বেচ্ছায় একত্রিত হয়ে যৌথভাবে মূলধন সরবরাহ করে প্রচলিত আইনের আওতায় কৃত্রিম সত্তাবিশিষ্ট যে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গঠন করে তাকে যৌথ মূলধনী কোম্পানি বলে। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক উৎপাদনের যুগে যৌথ মূলধনী কোম্পানি একটি জনপ্রিয় ও সর্বজনস্বীকৃত বৃহদায়তন ব্যবসায় সংগঠন হিসেদ্ধ পরিচিতি লাভ করেছে। সারা বিশ্বের উন্নত ও অনুন্নত সব দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে যৌথ মূলধনী কোম্পানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। নিম্নে যৌথ মূলধনী কোম্পানির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো:

১. আকর্ষণীয় বিনিয়োগ ক্ষেত্র

চিরন্তন অস্তিত্ব, স্বল্প মূল্যে শেয়ার ক্রয়ের সুযোগ, কোম্পানি আইনের আওতায় গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে সকল শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের নিকট যৌথ মূলধনী কোম্পানি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত। তাই অনেকেই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়।

যৌথ মূলধনী কোম্পানি কাকে বলে এবং সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর

২. পুঁজি ও দক্ষতার সমন্বয়

যৌথ মূলধনী কোম্পানি পুঁজি ও দক্ষতার সমন্বয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেকের পুঁজি আছে কিন্তু দক্ষতা নেই; আবার অনেকের দক্ষতা আছে কিন্তু পুঁজি নেই। যৌথ মূলধনী কোম্পানিতে এ উভয় ধরনের ব্যক্তির সমাবেশ ঘটিয়ে পুঁজি ও দক্ষতার সমন্বয় সাধন করা যায়।

৩. কর্মসংস্থান

যৌথ মূলধনী কোম্পানির আয়তন বৃহৎ হওয়ায় এতে বহুলোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফলে বেকার জনগণের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে কোম্পানি সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৪. চিরন্তন অস্তিত্ব ও জনগণের আস্থা

যৌথ মূলধনী সংগঠন চিরন্তন অস্তিত্বসম্পন্ন বৃহদায়তন ব্যবসায় সংগঠন। ফলে ব্যবসায়ের মালিক তার বিনিয়োগকৃত পুঁজি নিরাপদ মনে করে এবং শ্রমিকগণও তাদের কর্মসংস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত থাকে। আবার চিরন্তন অস্তিত্বের কারণে জনগণের মধ্যে গভীর আস্থার সৃষ্টি হয়।

৫. গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা

এ জাতীয় ব্যবসায় সংগঠনের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা কার্যক্রম গণতান্ত্রিক নীতির উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়ে থাকে। শেয়ার হোল্ডারদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে কোম্পানির পরিচালকগণ নির্বাচিত হয় বলে নতুন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ব্যবসায় পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারে।

৬. বৃহদায়তন ব্যবসায়ের সুবিধা

অধিক পুঁজি বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় বৃহৎ আকারে এ ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ, দক্ষ শ্রমিক-কর্মী নিয়োগ, দক্ষ ব্যবস্থাপনা, মিতব্যয়িতা অর্জন, উন্নতমানের পণ্য উৎপাদন ইত্যাদি ধরনের বৃহদায়তন ব্যবসায়ের সুযোগ-সুবিধা এ জাতীয় ব্যবসায় সংগঠন যোগ করে।

৭. সঞ্চয়ে উৎসাহ

যৌথ মূলধনী কোম্পানির শেয়ার স্বল্প মূল্যে এবং খুব সহজেই ক্রয় করা যায়, শেয়ার হোল্ডারদের দায়-দায়িত্ব সীমিত, লভ্যাংশ বোনাস শেয়ার পাবার সুযোগ থাকে। ফলে জনগণ তাদের আয় থেকে অল্প অল্প সঞ্চয়ের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয় করে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৮. ঝুঁকি বন্টন

কোম্পানি সংগঠনের শেয়ার বহুসংখ্যক ব্যক্তি ক্রয় করে। ফলে কোম্পানির যাবতীয় ঝুঁকি ও দায়সমূহ এর বহু সংখ্যক শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে শেয়ারের অনুপাতে বণ্টিত হয়ে থাকে। যে কোনো একজন সদস্যকে এককভাবে ব্যবসায়ের ঝুঁকি ও দায়সমূহ বহন করতে হয় না।

১. সামাজিক দায়িত্ব পালন

যৌথ মূলধনী কোম্পানি বিভিন্নভাবে সামাজিক দায়িত্ব পালন করে। যেমন- সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, দাতব্য চিকিৎসালয় ইত্যাদিতে সাহায্য করে সামাজিক দায়িত্ব পালন করে।

১০. আইনসম্মত সত্তা

এ জাতীয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের সাথে সাথে একটি আইনসম্মত সত্তা প্রাপ্ত হয়। ফলে সকল জনগণের নিকট এ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় এবং সহজে সুনাম অর্জন করতে পারে।

১১. শিল্পোন্নয়ন

যৌথ মূলধনী কোম্পানি শেয়ার ও ঋণপত্র বিক্রয় করে সহজেই প্রচুর মূলধন সংগ্রহ করতে পারে। তাছাড়া পরিচালনায় দক্ষ লোক থাকায় এ ব্যবসায় সংগঠন নতুন নতুন শাখা স্থাপন ও সম্প্রসারণ করে দেশে দ্রুত শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১২. গবেষণা ও উন্নয়ন

অঅধিক মূলধনের সুবিধা থাকায় যৌথ মূলধনী কোম্পানি সহজেই পণ্যের মান উন্নয়নের জন্য পৃথক গবেষণাগারের ব্যবস্থা করতে পারে। এতে নতুন নতুন ডিজাইনের পণ্যসামগ্রী উৎপাদন ও উন্নতমানের পণ্যদ্রব্য উৎপাদন পদ্ধতি উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়।

১৩. বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ

যৌথ মূলধনী কোম্পানি দেশে প্রচলিত কোম্পানি আইনের আওতায় গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। চিরন্তন অস্তিত্বসম্পন্ন হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ সরকারের সম্মতিক্রমে দেশীয় যৌথ মূলধনী ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করে থাকে যা দেশের শিল্পোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চুক্তিই অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি ব্যাখ্যা কর।

১৪. দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন

যৌথ মূলধনী কোম্পানি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে। এ কোম্পানি তার আয়ের উপর নির্দিষ্ট হারে সরকারকে রাজস্ব প্রদান করে থাকে। এটা সরকারের কোষাগারে জমা হয় এবং দেশের জনকল্যাণে ব্যবহৃত হয়।

১৫. ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে অংশগ্রহণ

অধিক পুঁজি, শেয়ার মালিকদের সীমিত দায়, চিরন্তন অস্তিত্ব ও অধিক লোকের মধ্যে ঝুঁকি বণ্টনের সুযোগ থাকায় এরূপ কোম্পানি সহজেই ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে অংশগ্রহণ করতে পারে।

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে ব্যবসায় ক্ষেত্রের ব্যাপক প্রসারতায় যৌথ মূলধনী কোম্পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাই যৌথ মূলধনী কোম্পানি বর্তমান বিশ্বে একটি অতি উত্তম এবং বৃহদায়তন ব্যবসায় সংগঠন।

Related Posts