Home » রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান বলতে কি বুঝ | রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান বলতে কি বুঝ

রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান বলতে কি বুঝ | রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও

by Susmi
0 comment

রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান

রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞানেরই একটি শাখা। সমাজবিজ্ঞানের সহায়তা ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বৈজ্ঞানিক শাস্ত্র হিসাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। গত এক শতাব্দী ধরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সমাজবিজ্ঞানের প্রভাব এত বেশি পড়েছে যে, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান নামে এক নতুন বিষয়ের আবির্ভাব হয়েছে। সাধারণত রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান হলো রাজনীতি বিষয়ক সমাজবিজ্ঞান। এ ধারণা যথার্থ নয়। আরও স্পষ্টভাবে বলা যায় যে, সমাজ, রাষ্ট্র, সামাজিক কাঠামো ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনাই হলো রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান।

রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান বলতে কি বুঝ | রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও

রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা

নিম্নে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের কতিপয় প্রসিদ্ধ সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো:

১। এস.এম. লিপসেট (S. M. Lipset)-এর মতে, “রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানকে সমাজ ও রাষ্ট্রের এবং সামাজিক কাঠামো ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের আন্তঃসম্পর্কের অধ্যয়ন হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।” (Political Sociology can be defined as the study of the interrelationship between society and polity, between social structures and political institutions).

২। এরিক, এ. নরডলিঙ্গার (Eric A. Nordlinger)-তাঁর ‘Political Sociology’ গ্রন্থে বলেন, “রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রপঞ্চের পারস্পরিক সম্পর্কের অধ্যয়ন।” (Political Sociology may be characterized as a field of study that analysis the interrelationship of political and social phenomena)

৩। এ প্রসঙ্গে উইলিয়াম সি. মিটশেল (William C. Mitchell)-এর উক্তি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানিগণ যা করেন বা করছেন বলে দাবি করেন তা নিয়েই রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান।” (Pohtical Sociology consists of of course, whatever political sociologists do and/or. Ceaiming they are doing).

৪। রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের আন্তঃবিষয়ক প্রকৃতির দৃষ্টিকোণ থেকে গিউভান্নি সাত্রোরি (Giovanni Sartori) একটি সর্বাপেক্ষা উত্তম সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান একটি আন্তঃবিষয়ক মিশ্রণ, যা সামাজিক ও রাজনৈতিক চলকগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করে অর্থাৎ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের প্রস্তাবিত (Suggested), প্রসম্ভার (Inputs)-এর সাথে সমাজবিজ্ঞানিগণের প্রস্তাবিত প্রসম্ভার (Inputs) সমূহকে সংযুক্ত করার চেষ্টা করা হয়। তিনি তাঁর বিখ্যাত ‘From Sociology of Politics to Political Sociology’ শীর্ষক গ্রন্থে বলেন, “Political Sociology is an interdisciplinary hybrid attemting to combine social and political explanatory variables ie, the inputs suggested by the sociologist with the inputs suggested by the political scientist.”

৫। Prof. Sharma বলেন, “Political Sociology is the study which aims at understanding the sources and the social basis of conflict, as well as the process of management of conflict.” (অর্থাৎ, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান এমন এক ধরনের অধ্যয়ন যার উদ্দেশ্য হলো সামাজিক দ্বন্দ্বের ভিত্তি ও উৎসকে জানা এবং সামাজিক দ্বন্দ্বের ব্যবস্থাপনাকে বুঝা।)

৬। Tax .B Bottomore (Thomas Burton Bottomore) বলেন, “রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান সামাজিক পটভূমিতে ক্ষমতা নিয়ে আলোকপাত করে” (Political Sociology is concerned with power in it’s social context)

৭। দীপ্তি কুমার বিশ্বাস (D.K. Biswas) তাঁর ‘Poliucal Sociology’ গ্রন্থে বলেন, “সংক্ষেপে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞানের এমন একটি শাখা, যা মূলত সমাজ ও রাজনীতির মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক অধ্যয়ন করে।” (Political Sociology, in short, is treated as a branch of sociology that is mainly concerned with the study of the inter-action between society and politics.”)

৮। আলী আসরাফ ও এল. এন. শর্মা (Ali Ashraf and L.N. Sharma) তাঁদের ‘Political Sociology’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, “রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান সরকার ও সমাজের মধ্যে আন্তঃসম্পর্কের প্রক্রিয়া বুঝার চেষ্টা করে।” (“Political Sociology seeks to understand the process of interection between government and Society.”)

৯। Dr. A. K. Mukhopadhya-এর মতে, “রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান হলো এমন একটি অধ্যায় যার বৃহত্তর উদ্দেশ্য হলো সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোসমূহের মিথস্ক্রিয়া (Interaction) অনুধাবন ও পরীক্ষা করা।”

১০। Samuel Koening-এর ভাষায়, “Political Sociology is the social implications of various types of political movements ideologies, the origin, development and functions of the government and the state”

১১। Lewis A Coser-এর মতে, “রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সমাজবিজ্ঞানের সেই শাখা যা বিভিন্ন সমাজের মধ্যে এবং সমাজের অভ্যন্তরে ক্ষমতা বিতরণের সামাজিক কারণ ও ফলাফল নিয়ে আলোচনা করে। যেসব সামাজিক ও রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে ক্ষমতা বরাদ্দকরণে পরিবর্তন হয় সে সম্পর্কেও সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে। (Political Sociology is that branch of sociology which is concerned with the social causes and consequences of given power distributions within or between societies and with the social and political conflicts that lead to changes in the allocation of power.)

১২। থিওডর ক্যাপলাউ (Theodore Caplow) তাঁর ‘Elementary Sociology’ শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন, “Political Sociology deals with such topics as the relation between political power and class structure” অর্থাৎ, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান শ্রেণিকাঠামো এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার মধ্যকার সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। পরিশেষে আমরা একথা বলতে পারি, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান হলো এমন একটি অধ্যয়ন যা সমাজ, রাষ্ট্র, সামাজিক কাঠামো ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে। আরও সংক্ষেপে বলা যেতে পারে যে, রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনীতির সামাজিক ভিত্তি সম্পর্কিত আলোচনাই হলো রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান।

Related Posts