Home » রোমান সভ্যতার পতনের কারণ কি ছিল?
রোমান সভ্যতার পতনের কারণ

রোমান সভ্যতার পতনের কারণ কি ছিল?

by Susmi
0 comment

রোমান সভ্যতার পতনের কারণ

উত্থান ও পতন এটি জগতের নিয়ম। এ জগতে এমন একটি সাম্রাজ্যও নেই যার উত্থান হয়েছে কিন্তু পতন বা ধ্বংস হয় নি। বিশাল ও শক্তিশালী রোমান সভ্যতার পতনও এ নিয়মের বাইরে ছিল না। বর্বরদের আক্রমণের মধ্য দিয়ে রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। রোমান সভ্যতার পতনের মধ্য দিয়ে ইউরোপের মধ্যযুগের সৃষ্টি হয়। ঐতিহাসিকদের মতে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের কারণ বহুবিধ। নিম্নে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের কারণ গুলো উল্লেখ করা হলো-

১। সাম্রাজ্যবাদের বিকাশ

সাধারণত সাম্রাজ্যবাদের বিকাশের সাথে সাথে বৃহৎ রোম সাম্রাজ্যের মধ্যে ক্ষতের চিহ্ন প্রতিভাত হতে থাকে। এ সকল পরিণামের জন্য সামাজিক বিশৃঙ্খলাকে দায়ী করা হয়। তা ছাড়া শ্রেণিদ্বন্দ ও রাজনৈতিক দুর্নীতি এ সাম্রাজ্যকে তিলে তিলে ক্ষয় করে দিতে থাকে। বিভিন্ন সামরিক বিজয় ও সাম্রাজ্যের বিস্তৃতির ফলে সম্রাট ও শাসক শ্রেণির মধ্যে লোভের সৃষ্টি হয়। তাদের আচার-আচরণেও তারা উদ্ধত হয়ে ওঠে। এ প্রেক্ষাপটেই তাদের প্রতিরক্ষা শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।

আরও দেখুন:   রোমান সভ্যতার বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর

২। দাস প্রথা

রোমান সাম্রাজ্যের শেষের দিকে দাসের সংকট সৃষ্টি হয়। দাস ব্যবসায়কে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল রোমান সাম্রাজ্যে। দাসদের প্রচুর শ্রম প্রদান করতে হতো। এতে করে একজন সুস্থ সবল মানুষ অতি শীঘ্রই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তো। তা ছাড়া অর্থব্যবস্থা পরিবর্তন হতে থাকলে দাস ব্যবস্থা ক্রমেই সংকটপূর্ণ হতে থাকে। আর এ সংকট প্রবল আকারে দেখা দিলেই মূলত রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।

৩। নৈতিক অবক্ষয়

শেষ সময়ে রোমান শাসকবৃন্দ সর্ব প্রকার অনাচারে ও ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে পড়ে। বিলাসিতা, নারী এবং মদ রোমান সমাজকে গ্রাস করে। গোটা দেশ নৈতিক অধঃপতনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যায়। ফলে তারা দেশের শাসনকার্যে মনোযোগ দিতে পারে নি, পরিণামে এ সভ্যতার পতন ঘটে।

৪। উচ্চাভিলাষী ব্যক্তিবর্গের উত্থান

রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে উচ্চাভিলাষী ব্যক্তিবর্গের উত্থান ঘটায় রোমের সংহতি বিনষ্ট হয় এবং বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, যা রোমান সভ্যতার পতনকে ত্বরান্বিত করে।

৫। সেনাবিভাগে বিভিন্ন জাতীয়তা

রোমান সেনাবাহিনীতে বহু জাতিসত্তার লোকের সমাবেশ ঘটেছিল। এ ভিন্নতা বৈদেশিক আক্রমণের সময় রোমানদের পরাজয়কে নিশ্চিত করে। কারণ বিভিন্ন জাতিসত্তার সৈন্যরা জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ না হয়ে কেবলমাত্র অর্থের জন্য যুদ্ধ করত এবং বেগতিক অবস্থায় অব ময়দান থেকে পলায়ন করত।

৬। অর্থনৈতিক অবক্ষয়

রোমান সভ্যতার পতনের আর একটি কারণ অর্থনৈতিক অবক্ষয়। বিশাল রোমান সাম্রাজ্যের অর্থনীতি ছিল মূলত দাসভিত্তিক কৃষি নির্ভর অর্থনীতি। বার বার দাস বিদ্রোহ ও ভূমিদাস ব্যবস্থা উৎপাদন অগ্রগতিকে শ্লথ করে দেয়। দাসদেরকে কৃষিজমি ও কারিগরি শিল্পে ব্যবহার করায় স্বাধীন শ্রমিক কৃষকরা কর্মহীন হয়ে পড়ে, যা রোমান অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিহতকরণে নতুন সৈনিক নিয়োগ করতে যেয়ে সামরিক ব্যয় বেড়ে যায় অস্বাভাবিকভাবে। সব মিলিয়ে এ খাতে সাম্রাজ্যের প্রায় অর্ধেক রৌপ্য ও দুই-তৃতীয়াংশ স্বর্ণ খরচ হয়ে যায়। ফলে রোমান সাম্রাজ্যে মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় বিপর্যয় নেমে আসে। জনগণের অনেকেই বিনিময় প্রথায় ফিরে যায়। রোমান অর্থনীতির এ সংকট রোমান সভ্যতার পতনকে ত্বরান্বিত করে।

৭। সঠিক উত্তরাধিকার নীতির অভাব

রোমান সাম্রাজ্যে সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তরাধিকার নীতি ছিল না। এর ফলে সম্রাটের মৃত্যুতে ক্ষমতা দখলের খেলায় মেতে উঠত সামরিক বাহিনীর শক্তিশালী ব্যক্তিবর্গ ও রাজ পরিবারের লোকজন। ২৩৫-২৮৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে রোমে চরম অরাজকতা দেখা দেয়। এ সময়কালে ২৬ জন শাসকের মধ্যে ২৫ জনই ঘাতকের হাতে প্রাণ হারায়। উত্তরাধিকার নীতির অভাব রোমের পতনকে অনিবার্য করে তোলে।

৮। প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের অত্যাচার

রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ নিজের মতো করে নিপীড়নমূলক শাসন চালু করে। এসব শাসনকর্তাদের জুলুম ও অত্যাচারমূলক শাসনের কারণে সাধারণ মানুষের সহানুভূতি রোমান সাম্রাজ্যের উপর থেকে উঠে যায়। কেন্দ্রীয় শাসনের পক্ষ থেকে জনগণকে অত্যাচারী প্রাদেশিক শাসকদের হাত থেকে রক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় নি। এক পর্যায়ে রোমান সভ্যতা আক্রান্ত হলে ব্যাপক জনগণ প্রভু পরিবর্তন হিতকর বিবেচনায় আক্রমণকারীদের পক্ষে যোগদান করে।

৯। বৈদেশিক আক্রমণ

দ্বিতীয় খ্রিস্টাব্দের বৈদেশিক অভিযান রোমকে ব্যাপক পর্যুদস্ত করে। ৪২৫ খ্রিস্টাব্দে এলরিকের নেতৃত্বে গণ-উপজাতি রোম আক্রমণ করে শহরটিকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে। এর কিছুদিন পর ৪৩৩-৪৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এটিলার নেতৃত্বে হুন নামক এক দুর্ধর্ষ উপজাতি সমগ্র পূর্ব ইউরোপ বিধ্বস্ত করে রোমের দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু পোপের বিশেষ অনুরোধে এবং অর্থের বিনিময়ে এটিলা বাহিনী রোম আক্রমণ হতে বিরত হয়। এটিলা রোম আক্রমণ না করলেও পরবর্তী পর্যায়ে ভিসিগণ, ভ্যান্ডাল ও টিউটন প্রমুখ বর্বর জাতি রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে সমগ্র রোমান সাম্রাজ্য বর্বরদের হাতে চলে যায়।

পরিশেষে বলা যায় যে, রোমান সাম্রাজ্য একসময় পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। দীর্ঘদিনের শাসনের’ ইতিহাস ধীরে ধীরে রোমের পতন ত্বরান্বিত হতে থাকে। সাম্রাজ্যের কতিপয় দুর্বল দিকের সুযোগ গ্রহণ করে বহিঃশক্তি প্রবল আক্রমণের মধ্য দিয়ে সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।

অতএব, রোমান সভ্যতার পতনের কারণ সম্পর্কে জানতে পারলেন। আশা করি, লেখাটি থেকে আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছেন। লেখাটি ভালো লাগলে অন্যদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।

Related Posts