Home » সমাজ কত প্রকার ও কি কি? – বিস্তারিত তুলে ধর।
সমাজ কত প্রকার ও কি কি, সমাজের প্রকারভেদ,

সমাজ কত প্রকার ও কি কি? – বিস্তারিত তুলে ধর।

by Susmi
0 comment

সমাজ কত প্রকার?

সমাজ কত প্রকার  সে সম্পর্কে  বিভিন্ন তাত্ত্বিকরা বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছেন। নিচে সমাজের প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা তুলে ধরা হলো-

  • Herbert Spencer সমাজকে ব্যাখ্যা করেছেন সহজ থেকে জটিল প্রক্রিয়ায় রূপান্তর হিসেবে। তিনি জীবদেহের প্রেক্ষাপটে সমাজকে সচেতন সত্তা হিসেবে ধরে নিয়ে বিবর্তনের প্রক্রিয়ার সাথে সঙ্গতি রেখে সমাজের বিকাশ দেখিয়েছেন। স্পেন্সার অতীত ও বর্তমান সমাজের বিবর্তনের উপর ভিত্তি করে সমাজকে শ্রেণিকরণ করেছেন। স্পেন্সার সামাজিক প্রকরণের জন্য Degree of structural complexity (কাঠামোগত জটিলতার মাত্রা) ও Evolutionary stage (বিবর্তনবাদী স্তর) কে ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করেছেন।

বিবর্তনের যে মৌলিক সূত্র সমসত্ত্ব থেকে অসমসত্ত্ব তথা সরল (Simple) থেকে জটিলতায় (Complex) উত্তরণ প্রক্রিয়ায়-এ সূত্রের প্রয়োগ দেখা যায় স্পেন্সারের সামাজিক বিকাশের পর্যায়ে সমাজকে নির্দিষ্ট দুটি পরিমণ্ডলে আবদ্ধকরণের ক্ষেত্রে। তিনি সমাজের আকৃতি, জটিলতা, স্থায়িত্ব, নেতৃত্ব, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের মাত্রা প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে সরলসমাজকে যোদ্ধাসমাজ এবং জটিল সমাজকে শিল্পসমাজ বলে আখ্যায়িত করে এ সমসত্ত্ব থেকে অসমসত্ত্ব উত্তরণ প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করেছেন, যেমন-

(১) যুদ্ধভিত্তিক সমাজ (Military Society)

মানব সমাজের সামাজিক জীবনের প্রাথমিক ভিত্তি স্থাপিত হয় যুদ্ধ- বিগ্রহকে অবলম্বন করে। সে যুদ্ধ ছিল প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকৃতির বিরুদ্ধে এবং পরবর্তীতে গোষ্ঠী বা সমাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্ষেত্রেও অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিষয়টি, কেননা খাদ্য ও আবাসস্থল আয়ত্তকরণের প্রয়োজনীয়তা, যা এক অর্থে অর্থনৈতিক সংগ্রামের জন্য প্রয়োজন, তা স্বভাবতই সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ে গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম তথা যুদ্ধবিগ্রহে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায় সমাজ বিকাশের প্রথম পর্বের সমাজ ছিল চরম অর্থে যোদ্ধা সমাজ, কেননা সমাজের প্রধান লক্ষ্য ছিল সামরিক উৎকর্ষ অর্জন, যার প্রেক্ষিতে জনগণকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতিরক্ষামূলক কাজে নিয়োজিত থাকতে বাধ্য করা হতো। সমাজের নীতি ছিল আক্রমণাত্মক ও আত্মরক্ষামূলক। সমাজ শাসিত হতো চূড়ান্ত ক্ষমতাশালী একচ্ছত্র কর্তৃপক্ষ দ্বারা যেখানে ব্যক্তিস্বাধীনতা বিলীন হয়ে পড়তো প্রশাসনিক আধিপত্যের নিকট। পেশা ও মর্যাদা আরোপিত হতো উত্তরাধিকারের নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতায় এবং ব্যক্তির সকল প্রকার অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতা নিয়ন্ত্রণ করা হতো, যা প্রকৃতপক্ষে শ্রেণি বৈষ্যমের ভিতকে আরো গভীরে প্রোথিত করার লক্ষ্যে তৎপর ছিল।

আরও পড়ুন:   সমাজ কি বা কাকে বলে? সমাজের সংজ্ঞা দাও

আপনার পড়ছেন সমাজ কত প্রকার ও কি কি? এ সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে বারবার এবং বারবার পড়তে থাকুন।

(২) শিল্প সমাজ (Industrial society)

সমাজে আকারগত এবং প্রক্রিয়াগত জটিলতার সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধভিত্তিক সরল সমাজ তার অভ্যন্তরে লালিত ধীরগতিসম্পন্ন পরিবর্তনশীল উপাদানসমূহ নিয়ে উপস্থিত হয়। শিল্পভিত্তিক সমাজের পদপ্রান্তে এবং যুদ্ধকেন্দ্রিক সকল তৎপরতার গতিরেখা প্রবাহিত হয় শিল্পায়ন খাতে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি প্রশাসনিক এবং মূল্যবোধগত বৈশিষ্ট্যসমূহের পরিবর্তনের ধারা সঞ্চালিত হতে থাকে। এ সমাজে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ এবং আইনগত অধিকারের প্রতি রাষ্ট্রীয় অনুমোদন প্রদান করা হয়। সমাজ হয়ে পড়ে সহযোগিতামূলক ও শান্তিকামী।

  • লুইস হেনরি মর্গান সমাজের সাংস্কৃতিক বিবর্তনের স্তরকে প্রথমত তিনটি ভাগে বিভক্ত করেন; যেমন-

১. বন্যদশা (Savagery).

২. বর্বরদশা (Barbarism)

৩. সভ্যদশা (Civilization) |

এর প্রথম দুটি ভাগকে তিনি আবার তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে দেখান এবং সভ্যযুগকে দুটি ভাগে ভাগ করেন। নিম্নে এদের আলোচনা প্রদান করা হলো-

১. বন্যদশা (Savagery)

নিম্ন বন্যাদশা (Lower savagery): মানব জাতির শৈশব থেকে এর আরম্ভ। আর এর সমাপ্তি ঘটে যখন মানুষ মাছ আহার করা এবং আগুনের ব্যবহার করতে শিখে। এ পর্যায়ে মানুষ তার আদিম প্রবৃত্তির দ্বারাই চালিত হতো এবং ফল ও বাদাম জাতীয় ফল খেয়ে জীবনধারণ করত। স্পষ্টভাবে উচ্চারিত ভাষা এই যুগেই শুরু হয়।

মধ্য বন্যদশা (Middle savagery): মাছকে আহার্য হিসেবে গ্রহণ ও আগুনের ব্যবহার থেকে এই উপবিভাগের আরম্ভ এবং শেষ হয় তীর ধনুক আবিষ্কারের সঙ্গে। এই যুগে মানবজাতি তাদের আদিম অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা চলে অস্ট্রেলীয় ও পলিনেশীয় গোষ্ঠীদের কথা। এদের বেশির ভাগ গোষ্ঠীই যখন আবিষ্কৃত হয় তখন ছিল আদিম যুগের মধ্য পর্যায়ে।

উচ্চ বন্যদশা (Upper savagery): এই পর্যায়ের আরন্ত তীর-ধনুক আবিষ্কারের সঙ্গে এবং এর সমাপ্তি ঘটে মৃৎশিল্প আবিষ্কারের সাথে। হাডসন উপসাগরীয় অঞ্চলের এ্যাথা প্যাস্কান গোষ্ঠী, কলম্বিয়া উপত্যকার গোষ্ঠীগুলো এবং উত্তর- দক্ষিণ আমেরিকার আরো কিছু গোষ্ঠী আবিষ্কৃত হয়েছিল এই পর্যায়ে। এই সাথেই আদিম সমাজের যবনিকা ঘটে।

২. বর্বরদশা (Barbarism):

নিম্ন বর্বরদশা (Lower Barbarism): অন্য সব আবিষ্কারের মধ্যে মৃৎশিল্পের স্থান গুরুত্বপূর্ণ। তাই একে আদিম ও বর্বর সমাজের সীমারেখা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। যেসব গোষ্ঠী মৃৎশিল্পের ব্যবহার সম্বন্ধে অজ্ঞ তাদের আদিম সমাজের পর্যায়ে ফেলতে হবে। আর যারা এই শিল্প আয়ত্ত করেছে কিন্তু ধ্বনিসম্মত বর্ণমালা ও লেখার ব্যবহার শেখেনি তাদের ফেলতে হবে বর্বর সমাজে। বর্বর যুগের প্রথম উপবিভাগের শুরু মৃৎশিল্প আয়ত্তের সঙ্গে। এ শিল্প কোনো জনগোষ্ঠী নিজেরা উদ্ভাবন করে থাকুক বা অন্য গোষ্ঠীর কাছে থেকে অনুকরণ করেই শিখে থাকুক। এই পর্যায়ের সমাপ্তি এবং মধ্য পর্যায়ের আরম্ভ সম্বন্ধে নির্ণয় করতে গিয়ে দু’ গোলার্ধে দু’ সমান্তরাল উন্নয়ন দেখতে পাই। পূর্ব গোলার্ধে ঘটে পশু গৃহপালন এবং পশ্চিম গোলার্ধে জলসেচের সাহায্যে ভুট্টার চাষ। এই সাথে দেখা যায় পোড়া ইট ও পাথর দিয়ে গৃহনির্মাণ। এ সবই নিম্নপর্যায় থেকে মধ্য পর্যায়ের বর্বর যুগে যাবার ক্রান্তিকাল।

মধ্য বর্বরদশা (Middle Barbarism): পূর্ব গোলার্ধে এই পর্যায়ের শুরু হয় পশু গৃহপালিত করার সাথে। আর পশ্চিম গোলার্ধে জল সেচের সাহায্যে কৃষিকাজ ও গৃহনির্মাণ ক্ষেত্রে রোদে পোড়া ইট ও পাথরের ব্যবহার থেকে এই পর্যায়ে শুরু। লৌহ-আকর গলানো আবিষ্কৃত হবার সাথেই এই পর্যায়ের সমাপ্তি ঘটে। এই পর্যায়ে পড়ে নিউ মেক্সিকো, মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা ও পেরুর গ্রামীণ ইন্ডিয়ানরা আর পূর্ব গোলার্ধের সেসব গোষ্ঠী যাদের গৃহপালিত পশু ছিল, কিন্তু যারা লৌহ-আকর গলাতে জানত না। আদিম ব্রিটিশরা লোহা গলানোর পদ্ধতি জানত, তাই তারাও এই পর্যায়ে পড়ে। পার্শ্ববর্তী বহু ইউরোপীয় গোষ্ঠী কিন্তু বেশ কিছু অগ্রসর হয়ে গিয়েছিল।

আরও পড়ুন:   সমাজের বৈশিষ্ট্য কি কি?

উচ্চ বর্বরদশা (Upper Barbarism): এই পর্যায়ের শুরু হয় লৌহ-হাতিয়ার ব্যবহারের সাথে, আর এর সমাপ্তি ঘটে ধ্বনিসমৃদ্ধ বর্ণমালা উদ্ভাবন ও সাহিত্যমূলক রচনা সৃষ্টির সাথে। এখান থেকেই সভ্যতা শুরু হয়। এই পর্যায়ে পড়ে হোমারীয় যুগের গ্রিক গোষ্ঠীসমূহ, রোম সাম্রাজ্য স্থাপনের পূর্বের ইতালির সব গোষ্ঠী এবং জার্মান গোষ্ঠীসমূহ।

সভ্যদশা (Civilization): লেখার ব্যবহার যা পাথরের উপর হায়ারোগ্লিফিক পদ্ধতির লেখার চেষ্টা থেকেই সভ্যতার সূচনা ঘটে। সভ্যতার সূচনায় মানুষ লাঙল দিয়ে চাষ করত এবং চাকাযুক্ত শকট ও পালতোলা নৌকা চালাত। সভ্য যুগকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে প্রাচীন ও আধুনিক। প্রাচীন যুগ মানুষের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিস্তারের যুগ। এ সভ্যতা মূলত তার পূর্ববর্তী বর্বর যুগের উদ্ভাবন, আবিষ্কার রীতি ও প্রতিষ্ঠান উদ্ভূত। আধুনিক যুগ বলতে বিজ্ঞানের যুগকেই বুঝায়। এ যুগের সূচনা হলো ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দ শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে।

  • সমাজ কত প্রকার সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে স্যার হেনরি মেইন সমাজ গঠনের উপর ভিত্তি করে সমাজকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। যথা:

১. Status বা অবস্থা এবং

২. Contact বা সান্নিধ্য।

  • হাওয়ার্ড বেকার সমাজকে পূর্ত (Sacred) ও লৌকিক (Secular) সমাজ, রবার্ট-র‍্যাডফিল্ড সমাজকে গ্রাম্য সমাজ ও শহুরে সমাজ এবং কার্ল উইট ফোগেল সমাজকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সমাজ হিসেবে ভাগ করেছেন।
  • Anthony Giddens তাঁর ‘A Contemporary Critique of Historical Materialism’ গ্রন্থে সাত ধরনের সমাজের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা:

১. ক্ষুদ্র সংঘবদ্ধত সমাজ (Bond societies);

২. স্থায়ী কৃষিভিত্তিক সমাজ (Settled agriculture based societies);

৩. নগররাষ্ট্রভিত্তিক সমাজ (City states based societies);

৪. সাম্রাজ্যভিত্তিক সমাজ (Empires based societies);

৫. সামন্ত সমাজ (Feudal societies);

৬. পুঁজিবাদী সমাজ (Capitalistic societies) এবং

৭. সমাজতান্ত্রিক সমাজ (Socialistic societies) 1

  • Karl Marx তার ‘A Contribution to the Critique of Political Economy’ গ্রন্থে সমাজ বিকাশ সম্পর্কে আলোচনার সূত্রপাত করেছেন এবং ‘Das Capital’ গ্রন্থে সমাজ বিকাশ আলোচনাকে পরিপূর্ণতা দান করেছেন। তিনি মানব ইতিহাসের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। অর্থনৈতিক উৎপাদনকেই তিনি সমাজ পরিবর্তনের মৌল উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেন। মানব ইতিহাসের সমস্ত ঘটনাবলির পিছনে রয়েছে অর্থনৈতিক কারণ। Karl Mars সমাজের শ্রেণিকরণের ক্ষেত্রে সমাজের কাঠামোকে বিশ্লেষণ করেছেন। মার্কস সমাজকে শ্রেণিবিভক্ত করণে পাশ্চাত্য সমাজ ও প্রাচ্য সমাজের বিকাশকে গুরুত্ব প্রদান করেছেন। তিনি দেখেছেন যে, পাশ্চাত্যের সমাজ যেভাবে বিকশিত হয়েছে, প্রাচ্য সমাজ সেভাবে বিকশিত হয়নি। তিনি মানব সমাজকে অর্থনৈতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণের ভিত্তিতে পাঁচ ভাগে ভাগ করেছেন। যথা:

১. আদিম সাম্যবাদী সমাজ (Primitive communistic society)- এ সমাজের মূলভিত্তি আদিম সাম্যবাদী উৎপাদন প্রণালি।

২. দাস সমাজ (Slavery society) – দাস নির্ভর উৎপাদন প্রণালি।

৩. সামন্তবাদী সমাজ (Feudalistic society) – সামন্ত উৎপাদন প্রণালি।

৪. পুঁজিবাদী সমাজ (Capitalistic society) → পুঁজিবাদী উৎপাদন প্রণালি।

৫. সমাজতান্ত্রিক সমাজ (Socialistic Society) → সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন প্রণালি।

  • লেস্কি ও লেস্কি (Lenski and Lenski) সমাজের অস্তিত্বের উপর নির্ভর করে সমাজকে পাঁচভাগে ভাগ করেছেন-

১. শিকার এবং সংগ্রহ সমাজ (Hunting and gathering societies);

২. উদ্যান সমাজ (Horticulture societies);

৩. পশুপালন সমাজ (Pastoral societies);

৪. কৃষি সমাজ (Agrarian societies) এবং

৫. শিল্প সমাজ (Industrial societies)।

অতএব, সমাজ কত প্রকার ও কি কি বিস্তারিত আপনারা জেনে গেলেন। এরকম আরও দরকারি লেখা পেতে নিয়মিত ব্লগটি ভিজিট করুন।

Related Posts