পাকিস্তানে ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন জারির ফলাফল নিচে প্রদত্ত হলো-
১. সামরিক একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত
১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারির ফলে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সামরিক একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলে ক্রমাগত পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি অব্যাহত থাকে। তাছাড়া উপমহাদেশেও এর প্রভাব পড়ে।
২. সংবিধান বাতিল
১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করার পর প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এক ঘোষণার মাধ্যমে ১৯৫৬ সালের সংবিধান বাতিল করেন।
৩. গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত
১৯৫৮ সালে জারি করা সামরিক শাসন পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মূলে কুঠারাঘাত হানে। ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বেড়াজালে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক অগ্রযাত্রা দীর্ঘদিনের জন্য ব্যাহত হয়।
১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারির কারণ আলোচনা কর |
৪. নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথে কুঠারাঘাত
১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি ও সংসদীয় ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কুঠারাঘাত করে। ফলে রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলা, অসহিষ্ণুতা ও দুর্নীতি দুরারোগ্য ব্যাধির মতো দানা বেঁধে ওঠার সুযোগ পায়। রাষ্ট্রীয় জীবনব্যবস্থায় এর ফলে বন্ধ্যাত্বের সৃষ্টি হয়।
৫. বাঙালির স্বার্থ ক্ষুণ্ণ
১৯৫৮ সালে জারিকৃত সামরিক শাসন বাঙালি স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ করে এবং বাঙালিদের শোষণ, বন্ধনা ও হতাশার গহবরে নিক্ষেপ করে। সাবেক পূর্ব পাকিস্তানবাসীদের স্বায়ত্তশাসন অর্জনের ক্ষীণ আশার আলোটুকুও নিভে যায়।।
৬. রাজনৈতিক সংস্কার
১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন এবং ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ নামে অভূতপূর্ব এক রাজনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেন। ১৯৬২ সালে প্রণীত সংবিধানে তিনি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি চালু করেন।
১৯৫৬ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা কর |
বিভিন্ন কারণে পাকিস্তানে ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হয়েছিল। সামরিক সরকার প্রচলিত রাজনৈতিক ধারা এবং রাজনীতিবিদদের অগ্রাহ্য করে শুধু অস্ত্রের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার চেষ্টা করেন। সামরিক সরকার জনগণের মতামতের কোনো গুরুত্ব দেয় না। ফলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং রাজনীতিতে স্থায়ী ক্ষতের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া সামরিক সরকার জনগণের অনুভূতি বুঝতে না পেরে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিতে থাকে। বস্তুত ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনের কুফল ছিল সুদ্রপ্রসারী।