দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ১৯৪০ সালের ২২ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে দ্বিজাতি তত্ত্বের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন, যা ‘জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্ব’ নামে পরিচিত। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্ব
উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতীয়দের প্রথম সুসংগঠিত রাজনৈতিক সংগঠন ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৫ সালে। প্রতিষ্ঠালগ্নে সংগঠনটি সকল ধর্মের মানুষের স্বার্থরক্ষার অঙ্গীকার করলেও কালক্রমে তাতে ভারতের মুসলমানদের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। মুসলমান জনগোষ্ঠী ব্রিটিশ সরকারের সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। এহেন অবস্থায় মুসলমানদের স্বার্থ ও দাবি-দাওয়া ব্রিটিশ সরকারের কাছে তুলে ধরার জন্য মুসলমান নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে ১৯০৬ সালে গড়ে ওঠে মুসলিম লীগ। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ এ দুটি সংগঠন কখনো পৃথক পৃথকভাবে আবার কখনো যৌথভাবে ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন চালিয়েছে। কখনো আবার হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের সম্পর্কের অবনতি ঘটায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখা দিয়েছে। এরূপ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম নেতৃবৃন্দ ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলমানদের পৃথক আবাসভূমি গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ‘নেহেরু রিপোর্ট’, মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে ‘জিন্নাহর চৌদ্দ দফা’ ইত্যাদি পদক্ষেপ এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। পরিশেষে মুসলিম লীগের বিভিন্ন কার্যক্রমে ধর্মের ভিত্তিতে হিন্দু ও মুসলমানদের জন্য পৃথক ও স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জোরালো হতে থাকে। কংগ্রেস সভাপতি পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু ঘোষণা করেন, ভারত উপমহাদেশে কেবলমাত্র দুটি দলের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। একটি কংগ্রেস অন্যটি সরকার। এ ঘোষণায় মুসলমানগণ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন।
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন ও এ আইনের বৈশিষ্ট্য |
১৯৪০ সালের ২২ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে দ্বিজাতি তত্ত্বের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন এভাবে, ‘ভারতবর্ষে দুটি পৃথক জাতির বসবাস- হিন্দু ও মুসলমান। মুসলমানদের কৃষ্টি স্বতন্ত্র, কালচার স্বতন্ত্র, আশা-আকাঙ্ক্ষা স্বতন্ত্র, তাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যও স্বতন্ত্র।’ সুতরাং জাতীয়তার যেকোনো মানদণ্ড অনুযায়ী ভারতের মুসলমানরা একটি জাতি। তিনি বলেন, যেকোনো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মুসলমানরা একটি জাতি।/এজন্য তাদের একটি পৃথক আবাসভূমি প্রয়োজন, প্রয়োজন একটি ভূখণ্ডের এবং একটি রাষ্ট্রের। (By any international standerd The Muslim are a nation. So they are is need of a separate homeland, a territory and a state.)
এভাবে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরা হয়। যার প্রতিফলন ঘটে। ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবে। পরবর্তীতে এ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতেই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
দ্বৈত শাসন বলতে কি বুঝায় | দ্বৈত শাসন কি |