Home » নারী শিক্ষার গুরুত্ব রচনা (৯৫০ শব্দ)
নারী শিক্ষার গুরুত্ব

নারী শিক্ষার গুরুত্ব রচনা (৯৫০ শব্দ)

by Susmi
0 comment

নারী শিক্ষার গুরুত্ব দিনদিন বেড়েই চলেছে। নারীরা এখন আর ঘরের মধ্যে বসে নেই। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা কাজ করছে অফিস-আদালত, ক্ষেতে-খামারে সবখানে। একজন শিক্ষিতা নারী নিজের সন্তানকে সুশিক্ষিত করার পাশাপাশি পরিবারের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখতে পারেন। তাই নারী শিক্ষার গুরুত্ব অত্যধিক প্রয়োজনীয়। আজকে এ সম্পর্কে একটি রচনা শিখবো।

নারী শিক্ষার গুরুত্ব

ভূমিকা

আমাদের দেশে প্রচলিত একটি প্রবাদ হচ্ছে, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’। মানবসমাজে নারী ও পুরুষ পরস্পর নির্ভরশীল। আগের দিনে নারীকে গৃহসামগ্রীর কল্যাণার্থে বিবেচনা করা হতো। নারীকে তাদের স্বামী কিংবা পরিবারের ক্রীতদাসী হিসেবে ব্যবহার করা হতো। নারীশিক্ষার কথা কেউ ভাবত না তখন। পিতামাতারা তাদের কন্যার বিয়ে দিয়েই দায়মুক্ত হতেন। নানারকম নির্যাতনেও তারা প্রতিবাদী হতে পারত না। আজ আর সেদিন নেই। বর্তমানে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি কাজে নেমেছে। তাই আজ নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যেসব মহিলারা অশিক্ষিত তারা শুধু পরিবারের বোঝাই নয়, জাতির জন্যও বোকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য নারীশিক্ষার গুরুত্ব অনেক।

বাংলাদেশে নারীর অবস্থা

বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় অনেক আগে থেকেই নারী ও পুরুষের বেলায় শিক্ষার গুরুত্ব সমানভাবে বিচার করা হয় নি। পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষের জন্য শিক্ষার সুযোগ ও উদার মানসিকতা যতটুকু আছে, নারীর জন্য ততটুক নেই। ফলে একই পরিবারে পুরুষের শিক্ষার অগ্রগতির নমুনা থাকলেও নারীর বেলায় তেমন সুযোগ করে দেওয়া হয় নি। পরিণামে আমাদের সমাজ অগ্রসর হতে পারে নি, দেশ ও জাতির উন্নতি সাধিত হয় নি এবং পশ্চাদপদতার অভিশাপ আমাদের জীবনকে সমস্যাগ্রস্ত করে রেখেছে। অপরদিকে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, তারা নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয় সুযোগ দিয়ে উন্নত জীবনের স্বাদ ভোগ করছে। নারীশিক্ষার অগ্রগতি নেই বলে জাতি হিসেবে আমাদের কোনো অগ্রগতি হয় নি।

আরও পড়ুন:   মাতৃভাষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা রচনা

জাতীয় উন্নয়নে নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আজ আর কোনোরকম দ্বিধাদ্বন্দু নেই। নারীরা দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক। আমাদের জাতীয় জীবনে পুরুষের মতো সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই অর্ধেক জনসংখ্যাকে বাদ দিয়ে জাতির উন্নতি আশা করা যায় না। সম্রাট নেপোলিয়ন জাতির উদ্দেশে বলেছিলেন, “আমাকে তোমরা শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি উপহার দেব। “বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়-

“কোন কালে একা হয় নিক জয়ী পুরুষের তরবারি,

প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়ী লক্ষ্মী নারী।”

নারীরা আজ যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তাই জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নারী জাতিকে অবশ্যই শিক্ষার আলো করতে হবে। নারীর ভূমিকা প্রধানত মা হিসেবে হলেও রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনে, ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও আজ নারীর ভূমিকা খুবই শিক্ষার অভাবে লাভ তাৎপর্যপূর্ণ। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বর্তমানে অফিস-আদালতে, কলকারখানায় কাজ করছে এবং আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। শুধু তাই নয়, নারীরা আজকাল অবলীলায় দেশের মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। তাই নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আরও একধাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসংখ্যার অর্ধেক নারী যদি অশিক্ষিত থাকে, তবে দেশকে এক বিরাট বোঝা বহন করতে হবে। তাই জাতীয় জীবনের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণের জন্য নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

শিক্ষিতা জননী হিসেবে নারী

নারীর ভূমিকা প্রধানত জননী হিসেবে বিবেচ্য। আগামী দিনের নাগরিক আজকের শিশুরা জননীর কোলেই প্রতিপালিত হয়। ছেলেমেয়েদের লালন-পালনের দায়িত্ব মায়েরা বহন করেনব শিশুর প্রাথমিক শিক্ষাদীক্ষার দায়িত্বও অর্পিত হয় মায়ের ওপর। জালেমেয়েদের চালচলন, আচার-ব্যবহার, রীতিনীতি, শিক্ষা ইত্যাদির উৎস হলেন খুলনীয় মায়ের হাতে সন্তানের যে শিক্ষা লাভ হয়ে থাকে, তা তার আগামী দিনের জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে। এক্ষেত্রে মা যদি উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত না হন, তাহলে সন্তানের জীবন গঠনে তিনি তার ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতে পারেন না। নিরক্ষর মায়ের কাছে শিশুর ভবিষ্যৎ অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, মায়ের নিজের পক্ষে তার সন্তানের ভালো-মন্দ বোঝার উপায় থাকে না। তাই সন্তানের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য মাকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। শিশুকে মানুষ করে গড়ে তোলার জ্ঞান ও কৌশল তার জানা থাকা দরকার। অশিক্ষিত মায়ের কাছ থেকে তা কখনো আশা করা যায় না। এদিক থেকে নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।

পারিবারিক জীবনে শিক্ষিতা নারী

পারিবারিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু হলো নারী। একটি সুখী পরিবার গড়ে তুলতেও নারীর ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। শুধু একজন মা হিসেবে নয়, একজন স্ত্রী হিসেবেও তার ভূমিকা অনেক বড়। কারণ পরিবারের সুখশান্তির চাবিকাঠি থাকে নারীর হাতে। তিনি তার জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা সহযোগে পারিবারিক জীবনে আনন্দের সঞ্চার করবেন। ভূমিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’ প্রবালটি। কিন্তু শিক্ষার অভাব থাকলে এখানেও তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালিত হবে না। শিক্ষার আলোয় তার নিজের জীবন আলোকিত হলেই কেবল তিনি অপরের জীবনকেও শান্তিপূর্ণ করে তুলতে সক্ষম হবেন।

শিক্ষিত নারীদের সাফল্য

জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নারীসমাজের ভূমিকার গুরুত্ব বিশেষভাবে স্বীকার করে নিতে হয়। এ ভূমিকা যাতে বেশি পরিমাণে কার্যকর করা যায় সেদিকেও দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। নারীর যোগ্য স্থান লাভের জন্য দরকার উপযুক্ত শিক্ষার। শিক্ষাদীক্ষায় পুরুষের মতোই নারীসমাজকে এগিয়ে যেতে হবে এবং শিক্ষার আলোকে নিজেদের জীবনকে যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে। ইতোমধ্যেই শিক্ষিত নারীরা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, তারা পুরুষের চেয়ে নিম্নপর্যায়ভুক্ত নন। রাশিয়া, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশের নারীরা বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্পকলা এমনকি সামরিক ক্ষেত্রেও যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। সমাজসেবা ও রাজনীতির বেলায়ও তারা পিছিয়ে নেই। প্রাসঙ্গিকভাবেই যাদের নাম আসে তাঁরা হলেন সুলতানা রাজিয়া, হেলেন কেলার, ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল, মাদাম কুরি, মাদার তেরেসা, চন্দ্রিমা কুমারাতুঙ্গা, বেনজীর ভুট্টো প্রমুখ। আমাদের দেশেও শিক্ষিতা নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য প্রদর্শন করেছেন। সাহিত্য ক্ষেত্রে নওয়াব ফয়জুন্নেসা, বেগম রোকেয়া, শামসুন্নাহার মাহমুদ, সুফিয়া কামাল, জাহানারা আরজু, রিজিয়া রহমান, সেলিনা হোসেন; সাহিত্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে ড. নীলিমা ইব্রাহিম, প্রফেসর হোসনে আরা শাহেদ,, রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বেগম খালেজা জিয়া ও শেখ হাসিনা যথেষ্ট সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন।

নারীশিক্ষার গুরুত্ব

নানা দিক থেকে নারীশিক্ষার গুরুত্ব রয়েছে। কিচ্ছু মানবজীবনের পরিপূর্ণ সফলতার জন্য নারীর শিক্ষার গুরুত্ব স্বীকৃতি পেলেও যুগে যুগে পুরুষের অনুদার দৃষ্টিভঙ্গি নারী জাতিকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রাখার চেষ্টা করেছে। কারো কারো মতে, নারীর স্থান অন্তঃপুরের সীমানায়। আবার কারো ধারণা নারীসমাজকে শিক্ষিত করে তুললে ঘরের কাজে অসুবিধার সৃষ্টি হবে। শিক্ষার আলোকে উদ্ভাসিত নারীসমাজ কাজের জন্য ঘরের বাইরে গেলে পারিবারিক জীবনে অশান্তি আসবে। এমনি ধরনের সংকীর্ণ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোবৃত্তিসম্পন্ন মানুষের জন্য শিক্ষার সুযোগ থেকে নারীসমাজ বঞ্চিত হয়েছে। অবশ্য প্রতিভার অধিকারী নারীরা নিজেদের দুর্বার সাধনায় শিক্ষাদীক্ষায় বিশিষ্ট আসন লাভ করতে পেরেছেন। অনেক নারীর গৌরব কাহিনী লিপিবদ্য আছে ইতিহাসের পাতায়। শত প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করেও বহু নারী জ্ঞানবিজ্ঞানে বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু পুরুষের পাশাপাশি নারীর স্থান না থাকলে জাতীয় জীবনে উন্নতির আশা করা যায় না। তাই একই দৃষ্টিভঙ্গিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

উপসংহার

নারীরা সমাজের অর্ধেক অংশ। তাদেরকে বাদ দিয়ে সমাজের উন্নতির কথা চিন্তা করা যায় না। আর তাই নারীসমাজকে শিক্ষিত হতে হবে। সে শিক্ষাই হবে নারীর জন্য শ্রেষ্ঠ, যে শিক্ষায় নারীরা নিজেদের উজ্জ্বল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে পুরুষের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যোগ্য আসন লাভ করতে সক্ষম হবে। নারী এবং পুরুষকে এখন আর আসাদা দৃষ্টিতে বিবেচনা করা উচিত নয়। মানুষ হিসেবে উভয়ের সমান বিকাশ ও প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে শিক্ষার সমান সুযোগ দিতে হবে। ভবেই দেশের উন্নতি ও জাতির যথার্থ কল্যাণ সাধিত হবে বলে আশা করা যায়।

অতএব, রচনাটি পড়ে তোমরা কেন নারী শিক্ষার গুরুত্ব এত বেশি তা বুঝতে পারলে। এভাবে সামাজিকভাবে যত বেশি মানুষ সচেতন হবে ততবেশি নারীরা শিক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে। এবং দেশ ও সমাজের উন্নতি হবে।

Related Posts