নিরীক্ষা হল যোগ্যতা সম্পন্ন নিরপেক্ষ ব্যাক্তি দ্বারা প্রতিষ্ঠানের প্রামাণ্য দলিলপত্র, ভাউচার ও তথ্যের ভিত্তিতে হিসাব বই ও কার্যকলাপের এমন এক সুশৃঙ্খল এবং সমালোচনামূলক পরীক্ষা যার সাহায্যে প্রতিষ্ঠানের হিসাবপত্রের সত্যতা ও যথার্থতা যাচাই করা যায়। আজকের আর্টিকেলে এই নিরীক্ষা কত প্রকার ও কি কি তা জানবো। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নিই নিরীক্ষার প্রকারভেদ।
নিরীক্ষা কত প্রকার ও কি কি?
নিরীক্ষাকে সাধারণতঃ তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
১) আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষা (Financial Statement Audit)
২) সম্মতি সংক্রান্ত বা ইচ্ছানুসারে নিরীক্ষা (Compliance Audit)
৩) পরিচালনগত নিরীক্ষা (Operational Audit)
নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
আর্থিক বিবরণী পরীক্ষা
আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষা হল এমন এক ধরনের নিরীক্ষা যেখানে প্রামাণ্য দলিলপত্রের সাহায্যে আর্থিক বিবরণীর যথার্থতা এবং নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে লিখিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে নিরীক্ষক তাঁর মতামত প্রদান করেন। আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষা হল এক প্রকার সত্যায়ন সেবা।
আর্থিক বিবরণীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে আয় বিবরণী, উদ্বর্তপত্র, রক্ষিত আয় বিবরণী, নগদ প্রবাহ বিবরণী এবং প্রয়োজনীয় পাদটীকা। এই নিরীক্ষায় আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণে সর্বজন স্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে প্রতিবেদন মারফত মতামত দেয়া হয়। সনদপ্রাপ্ত হিসাববিজ্ঞানী কর্তৃক এই নিরীক্ষা কার্য সম্পাদিত হয়ে থাকে। সাধারণতঃ ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগকারী, ব্যাংক, পাওনাদার, আর্থিক বিশ্লেষক এবং সরকারি এজেন্সি এই ধরনের নিরীক্ষার প্রতিবেদন ব্যবহারকারী।
আরও পড়ুন
নিরীক্ষা কি? নিরীক্ষার উদ্দেশ্য কি?
নিরীক্ষার বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা কর
হিসাববিজ্ঞান ও নিরীক্ষার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর
সম্মতি সংক্রান্ত বা ইচ্ছানুসারে নিরীক্ষা
সম্মতি নিরীক্ষা বা ইচ্ছানুসারে নিরীক্ষা হল এমন এক ধরনের নিরীক্ষা যেখানে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত নিয়ম নীতি ও আইন এবং সরকারি বিধিবিধান অনুসরণ কর াহয়েছে কিনা তা নির্ধারণ করা। যেমন- একটি প্রতিষ্ঠানের বিভাগসমূহ কর্পোরেট নিয়ম ও নীতি অনুসরণ করছে কিনা তা নির্ধারণের জন্য কোম্পানি নিরীক্ষক নিয়োগ করতে পারে।
পরিচালনগত নিরীক্ষা
দক্ষতা বা কার্যকারিতা পরিমাপের উদ্দেশ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ইউনিটের পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষা হল পরিচালনগত নিরীক্ষা। যেমন- একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের রিসিভিং ডিপার্টমেন্টের কার্যাবলীর কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য শুরুতে নির্ধারিত লক্ষ্য বা দায়িত্ব পালন করতে পারলে উক্ত বিভাগ কার্যক্রমে সফল বলে গণ্য হবে।
পরিচালনগত নিরীক্ষার নিরীক্ষক তার পরিচালনগত নিরীক্ষার ফলাফল প্রতিবেদন মারফত ব্যবস্থাপনার নিকট উপস্থাপন করে। পরিচালনগত নিরীক্ষা কার্য পরিচালিত বিভিন্ন অনার্থিক কার্যে যেমন- পারসোনাল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। পরিচালনগত নিরীক্ষার মাধ্যমে কার্যকারিতা, দক্ষতা, মিতব্যয়িতা অথবা কার্যাবলির পরিমাপ বা মূল্যায়ন করা বেশ কষ্টকর। কারণ, এর কোন সর্বজন স্বীকৃত মানদন্ড নেই। পরিচালনগত নিরীক্ষা কাজ সমাপ্তির পর নিরীক্ষক পরিচালন পদ্ধতি উন্নয়নের জন্য পরামর্শ বা দিক নির্দেশনামূলক সুপারিশ প্রদান করে থাকেন।