বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য রচনা প্রায়ই বিভিন্ন পরীক্ষায় এসে থাকে। নিম্নে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্য রচনাটি তুলে ধরা হলো-
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য
সূচনা
প্রকৃতি বাংলাদেশেকে অকৃপণ হাতে সাজিয়েছে পরম স্নেহে, পরম মমতায়। এর রূপ মাধুর্য বিশ্ববাসীকে নানাভাবে, নানা সময়ে মোহিত করেছে। এ দেশের মাটি, জল, হাওয়া, বৈচিত্র্যময় অরণ্যানী, পাহাড়-সমুদ্র, কোন কিছুই মাধুর্যহীন নয়। এর রূপ বৈচিত্র্য এতটাই মধুর ও স্বতন্ত্র যে, কবি এ দেশকে বলেছেন ‘সকল দেশের রাণী’।
বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি ক্ষুদ্র দেশ। প্রধানত সমতল তবে পাহাড়ি বৈচিত্র্যও এর কম নেই। চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের পাহাড়ি প্রকৃতির পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের নদী নালা আর উত্তরাঞ্চলের দীর্ঘ মাঠ এদেশর প্রকৃতির প্রধান বৈচিত্র্য। তবে কক্সবাজার ও কুয়াকাটার নয়ন ভুলানো সমুদ্র আর সুন্দরবনের গাঢ় সবুজের সমাহার বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যকে আরো বেশী আকর্ষণীয় করে তুলেছে। দেশটি ছোট কিন্তু প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের যেন কোন কমতি নেই সমগ্র দেশ জুড়েই; বহুবিচিত্র রূপ এ-দেশের ছোট্ট পরিধিতে সৃষ্টি করে প্রাকৃতিক রূপ বৈচিত্র্যের এক অপূর্ব সম্ভার।
ঋতুবৈচিত্র্য
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ- প্রতিটি ঋতুই প্রকৃতিকে নিজের মত করে সজ্জিত করে। গ্রীষ্মের দারুণ দাবদাহের মধ্যেও মৌসুমী ফলের লোভনীয় আস্বাদ ভুলিয়ে দেয় খরতাপের দাহন। কালবৈশাখীর যে রুদ্রমূর্তি বৈশাখে দেখা যায় তাকে ভুলিয়ে দেবার জন্য পৃথিবীকে তার স্নিগ্ধ কোমল পরশে শীতল করে দেবার জন্যই যেন আসে বর্ষা। তবে অতিবর্ষণ আবার মাঝে মাঝে বন্যার ভয়াল মূর্তিতে রূপ নেয়। মাঠ-ঘাট-গ্রাম সব একাকার হয়ে যায় পানির নিষ্ঠুর তোড়ে। তার মধ্যেও জেগে থাকে সবুজের সমাহার, কচি ঘাস, আর গাছের কচি সবুজ পাতা প্রকৃতিকে সাজায় কুমারীর সাজে। ঘন বর্ষা কবির মনে গান জাগায় ‘এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরষায়’।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র সমাজের ভূমিকা রচনা/প্রবন্ধ
শরতের বাংলার প্রকৃতি ধারণ করে শান্ত শোভাময় এক অপূর্ব শ্রী। শরতের কাশ ফুলে মাঠের পর মাঠ শ্বেত শুভ্র বসন পরে প্রকৃতি প্রেমিক মানুষকে আবাহন করে আনন্দ-প্রাঙ্গণে। মাথার ওপরে উদার নীল আকাশ আর মাঠ জুড়ে শুভ্রতার অজস্রতা কবির কণ্ঠে জাগায়-
শরৎরাণীর বীণা বাজে
কমল দলে।
ললিত রাগের সুর ঝড়ে তাই
শিউলি তলে।
তাইতো বাতাস বেড়ায় মেতে
কচি ধানের সবুজ ক্ষেতে,
ঢেউ উঠালে।
শরৎ রাণীর বিদায়ের পর ‘হিমের ঘন ঘোমটায়’ আবৃত হয়ে হেমন্ত এসে আসন পেতে বসে। ঘরে ঘরে তখন নতুন ফসলের আনন্দ সওগাত। নতুন ধানের নবান্ন উৎসব আর কৃষকবধুর স্বপ্ন পূরণের সম্ভাবনায় হেমন্ত পরিপূর্ণ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের তখন যেন কোন সীমা-পরিসীমা থাকে না। এক সময় হেমন্ত তার বিনম্র অর্পণ প্রকৃতিকে নিঃশেষে উজার করে শীতের ঘন কুয়াশার আড়ালে বিদায় নেয়। এরপর শীত আসে তার গৈরিক বসন পরিধান করে। মাঠ তখন হয়ে উঠে ফসল শূন্য, শীতের পরশে ঝরে যেতে থাকে গাছের সবুজ পাতা। প্রকৃতিতে জেগে ওঠে এক নিরাভরণ রূপ। তবে এই নিরাভরণ সৌন্দর্যের মধ্যেই জেগে ওঠে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে পিঠাপুলির উৎসব। ভাপা পিঠা, রস পিঠা, পাটি সাপটা, ভাপাপুলি আরো নানা রকমের স্বাদে আর বৈচিত্র্যে শীত সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। আসে বসন্ত। আবার গাছে গাছে নতুন পাতার সমাহার ঘটে, ফুলে ফুলে ভরে ওঠে গৃহ-প্রাঙ্গন। একারণে বসন্তকে বলা হয় ঋতুরাজ। বসন্তের সঙ্গে সঙ্গে মানব মনেও জাগে রঙের ছোঁয়া।
মানব মনে প্রভাব
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য এদেশের মানুষের মনেও এঁকে দেয় নানা রঙের ছবি। এদেশের মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে প্রকৃতি নির্ভর এবং প্রকৃতি বিজড়িত। আমরা প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতির রাজ্যেই বসবাস করি। ফলে তার হাতের কোমল-কঠিন পরশও আমাদের সমান ভাবে আকৃষ্ট করে। এদেশের প্রকৃতি এদেশের মানুষের সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে বলেই মানুষের শান্ত জীবনের বৈশিষ্ট্য যেন প্রকৃতিরিই অকৃপণ দান। তাই এদেশের মানুষ তাদের কাব্যে সাহিত্যে প্রকৃতির লীলাময় রূপের প্রতিফলন ঘটিয়েছে।
উপসংহার
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য এদেশের গর্ব, অহংকার। প্রকৃতির এই বৈচিত্র্যের প্রভাব পড়েছে এদেশের মানুষের মনে, মননে এবং আচরণে। এখানকার শান্তশ্রী সৌন্দর্যমন্ডিত প্রাকৃতিক শোভার কথা বিশ্ববাসীরও অজ্ঞাত নয়, তাদেরও অভিভূত আনন্দিত করেছে। দেশবাসীও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েছে এর প্রাকৃতিক রূপ সৌন্দর্যের জন্য।