Home » টেলিভিশন রচনা সপ্তম শ্রেণী, অষ্টম শ্রেণী ও নবম-দশম শ্রেণী
টেলিভিশন রচনা

টেলিভিশন রচনা সপ্তম শ্রেণী, অষ্টম শ্রেণী ও নবম-দশম শ্রেণী

by Susmi
0 comment

সুপ্রিয় শিক্ষার্থী বৃন্দ, তোমরা অনেকেই টেলিভিশন রচনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছো। তোমাদের অনুরোধে রচনাটি সংগ্রহ করে অনলাইনে দিয়ে দিলাম। আশাকরি এতে তোমরা উপকৃত হবে।

টেলিভিশন রচনা এর সংকেত

টেলিভিশন রচনা এর সংকেতগুলো হলো- ভূমিকা, টেলিভিশন আবিষ্কার ,টেলিভিশনের প্রয়োজনীয়তা, জাতীয় জীবনে টেলিভিশনের গুরুত্ব, জনশিক্ষায় টেলিভিশন, কৃষি উন্নয়নে টেলিভিশন, খেলাধুলায় টেলিভিশন, বিনোদন হিসেবে টেলিভিশন, জনমত গঠনে টেলিভিশন, উপসংহার।

এবার রচনাটি শুরু করা যাক।

টেলিভিশন

কত অজানারে জানাইলে তুমি কত ঘরে দিলে ঠাঁই

দূরকে করিলে নিকট বন্ধু পরকে করিলে ভাই।

                                  ———রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা

গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয়তায় অভিষিক্ত হয়েছে টেলিভিশন। দূরমাধ্যম শিক্ষার সার্থক মাধ্যম এটি। শিক্ষাগ্রহণের সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় সম্পর্কে দার্শনিকেরা বলেন যে, পঞ্চেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণ। কিন্তু সাধারণত আমরা যেকোনো একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকি। শুধু বই পড়ে আমাদের যে শিক্ষা হয় তা একান্তই মনন ও চিন্তনসাপেক্ষ। চিত্র দর্শন ও দেশভ্রমণের মাধ্যমে যে শিক্ষা তা দেখার মাধ্যমে শিক্ষা। তা অনেক কার্যকরী শিক্ষা বটে। তবু দেশভ্রমণ বা চিত্র সংগ্রহের ব্যাপারটা খুব সহজ নয় বলে আমরা সে প্রয়োজন মেটাতে পারি টেলিভিশনের মাধ্যমে। টেলিভিশন আবিষ্কারের ফলে এ শিক্ষার পথ সহজ হয়েছে।

টেলিভিশন আবিষ্কার

টেলিভিশন আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিসস্নাকর আবিষ্কার। সর্বপ্রথম জার্মান দার্শনিক পল নেপকো টেলিভিশন সম্পর্কে তাঁর অভিমত প্রকাশ করেন। তাঁর তত্ত্বের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা চালানো হয়। তারপর এই জনপ্রিয় গণমাধ্যমটি ১৯২৬ সালে আবিষ্কার করেন ইংরেজ বিজ্ঞানী জন বেয়ার্ড। ১৯৩৬ সালে সর্বপ্রথম সফলভাবে টেলিভিশন চালু হয় ইংল্যান্ডে। তখন টেলিভিশনের আকৃতি ও কার্যক্রম অন্য রকম ছিল। ক্রমান্বয়ে এর উন্নতি সাধিত হয়। টেলিভিশন বর্তমান রূপ ধারণ করে ১৯৪৫ সালে।

টেলিভিশন রচনা এর পাশাপাশি অন্যান্য রচনা

নারী শিক্ষার গুরুত্ব রচনা (৯৫০ শব্দ)

মাতৃভাষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা রচনা

কম্পিউটার অনুচ্ছেদ || কম্পিউটার রচনা

টেলিভিশনের প্রয়োজনীয়তা

টেলিভিশন আনন্দের উৎস এবং শিক্ষার মাধ্যম। এর অনুষ্ঠানসূচির বৈচিত্র্য সকল শ্রেণির মানুষের হৃদয়ে আবেদন জানাতে পারে। তাই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উদ্দেশে কোনো বক্তব্য বিষয় প্রচার করতে গেলে টেলিভিশনকে রেডিও বা সংবাদপত্রের চেয়ে বেশি উপযোগী হিসেবে বিবেচনা করা যায়। টেলিভিশনের এই ব্যাপক উপযোগিতা আছে বলে জাতি গঠনে এর বিশেষ গুরুত্ব বিদ্যমান। কেনো জাতির অগ্রগতি নির্ভর করে দেশের সরকারের পরিচালনানীতির ওপর। সরকারের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা জনগণের কাছে পৌছাতে হয় এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে তা সহজে পৌছানো সম্ভব। আমাদের দেশের সিংহভাগ লোক নিরক্ষর বলে তারা বইপুস্তক বা পত্রপত্রিকা পড়তে পারে না। রেডিওর কদরও আজকাল আগের মতো নেই। কিন্তু টেলিভিশনের সামনে বসে নিরক্ষর লোকেরাও নানা অনুষ্ঠান উপভোগের সাথে সাথে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কথা শুনতে পছন্দ করে। যারা পড়তে পারে না, মুখের কথা শুনে বুঝতে পারে। এতে যেমন বিনোদন হয়, তেমনি দরকারি কথাগুলো জানা হয়ে যায়। টেলিভিশনের মাধ্যমে নিরক্ষরতা দূরীকরণের কর্মসূচি গ্রহণ করা সহজ হয়। দেশের উন্নয়ন কাজের সঙ্গে পরিচিত করার জন্য টেলিভিশন একটি উত্তম মাধ্যম। টেলিভিশনের মাধ্যমে নিজের দেশকে যেমন জানা যায়, তেমনি বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। জাতীয় সমস্যা ও তার সমাধান সম্পর্কে জনগণ জানতে পেরে নাগরিক হিসেবে সচেতন হতে পারে। কাজেই সকল শ্রেণির মানুষের জন্য টেলিভিশনের প্রয়োজনীয়তা অনেক।

জাতীয় জীবনে টেলিভিশনের গুরুত্ব

সার্থক প্রচার মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশনের বিশেষ গুরুত্ব বিদ্যমান। শুবণ ও দর্শনের নানা রকম সুযোগ টেলিভিশনের মাধ্যমে লাভ করা যায় বলে জনগণের মধ্যে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। টেলিভিশনকে জাতি গঠনের কাজে লাগাতে হলে এর উপযোগিতার কথা বিবেচনা করে এতে জাতি গঠনমূলক অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। অনুষ্ঠানসূচি এমনভাবে পরিকল্পনা করা দরকার যাতে জাতির উন্নয়নমূলক নানা বিষয় এতে সংযোজিত হয়। মানুষের সুপ্ত প্রতিভার জাগরণ ঘটিয়ে টেলিভিশনের মাধ্যমে তা বিশ্বের মানুষের সামনে তুলে ধরা যায়। এছাড়া আমাদের জাতীয় জীবনে টেলিভিশন যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে তা নিম্নরূপ:

জনশিক্ষায় টেলিভিশন

শিক্ষা একটি জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষার অগ্রগতি ছাড়া কোনো জাতি উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না। নিরক্ষরতা যেকোনো জাতির জন্য একটি মারাত্মক অভিশাপ। বাংলাদেশের লোকেরা এই অভিশাপের শিকার। এদেশের সিংহভাগ মানুষ নিরক্ষর। টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ করে নিরক্ষর জনগণকে শিক্ষিত করে তোলা যায়।

কৃষি উন্নয়নে টেলিভিশন

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের শতকরা ৮০ জন লোক কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এদেশের অধিকাংশ কৃষক নিরক্ষর বলে তারা আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদ সম্পর্কে অজ্ঞ। প্রয়োজনীয় সময়ে জমিতে চাষ দেওয়া, উন্নত বীজ সংগ্রহ করা, মাটির প্রকৃতি অনুসারে চারা রোপণ করা, পরিমাণমত কীটনাশক ও সার ব্যবহার করা, সময়মত জমিতে সেচ দেওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে অধিকাংশ কৃষকেরই ধারণা নেই। নিরক্ষরতার কারণে বই পড়ে এসব জানার সুযোগ নেই তাদের। টেলিভিশনের মাধ্যমে নানা অনুষ্ঠান করে এ সমস্যা যথেষ্ট পরিমাণে দূর করা যায়।

খেলাধুলায় টেলিভিশন

ব্যক্তিজীবনে যেমন, তেমনি সমগ্র জাতীয় জীবনেও খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম। খেলাধুলা থেকে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা শেখা যায়। খেলোয়াড়দের মতো দর্শকদের জীবনেও এর প্রতিফলন ঘটতে পারে। চরিত্র গঠনেও খেলাধুলার উপযোগিতা কম না। আজ বিশ্বের বহু দেশে নানা ধরনের খেলা হচ্ছে। হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল, বিশ্বকাপ ক্রিকেট, অলিম্পিক গেমস, হকি, টেনিস ইত্যাদি খেলা। টেলিভিশনের মাধ্যমে এসব খেলা প্রচারিত হলে, তা দেখে ব্যক্তিজীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার প্রভাব পড়লে তার প্রতিফলন জাতীয় জীবনেও ঘটতে পারে। তাই খেলাধুলা প্রদর্শনের ব্যাপারে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকে আরও মনোযোগী হতে হবে।

বিনোদন হিসেবে টেলিভিশন

বিনোদন জীবনের একটি অংশ। জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে মানুষ সারাদিন পরিশ্রম করে। সকাল থেকে সারাদিন কর্মব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে কাটিয়ে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে আর কি-ই বা করার থাকে একজন মানুষের। মনের প্রফুল্লতার জন্য এ সময়ে তার একটু বিনোদন প্রয়োজন। এতে মানুষের কর্মক্লান্ত জীবনে প্রশান্তি আসে। আর এ প্রশান্তি আসতে পারে টেলিভিশনের মাধ্যমে। নাচ, গান, কৌতুক, নাটক, সিনেমা এবং নানারকম অনুষ্ঠানের মাধ্যমে টেলিভিশন মানুষকে আনন্দ দিতে পারে।

জনমত গঠনে টেলিভিশন

জনমতই গণতন্ত্রের নিয়ন্ত্রক। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সদাজাগ্রত জনমত সরকারকে স্বৈরাচারী হওয়ার পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।। একদিকে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা, অভাব-অভিযোগ প্রভৃতি একমাত্র জনমতের মাধ্যমেই প্রকাশিত হতে পারে, অপরদিকে সরকারের সাফল্যের জন্য জনমতের সমর্থন খুবই প্রয়োজন। গঠনমূলক আলোচনা ও সুপরিকল্পিত অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে জনমত সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে টেলিভিশন।

উপসংহার

বর্তমান যুগে টেলিভিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম। সরকারি টেলিভিশন ছাড়াও বর্তমানে বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল চালু হয়েছে। টেলিভিশনের অবদানকে জাতির কাজে লাগাতে চাইলে জনগণের কাছে সহজলভ্য করতে হবে। প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, সরকারি কর্মক্ষেত্র ইত্যাদির বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে টেলিভিশন পাওয়ার যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা আরও ব্যাপক করতে তবেই আমাদের জাতীয় জীবনে টেলিভিশনের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।

অতএব, তোমরা টেলিভিশন রচনা সম্পর্কে জেনে গেলে। রচনাটি পেয়ে যদি উপকৃত হও, তবে বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করো। আর এরকম আরও কি কি রচনা পেতে চাও তা কমেন্টে জানাও।

Related Posts