বিশ্বায়ন/গ্লোবালাইজেশন
ভূমিকা
বিশ্বায়ন বলতে পারস্পরিক ক্রিয়া এবং আন্তঃসংযোগ সৃষ্টিকারী এমন একটি পদ্ধতি যা বিভিন্ন জাতির সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের মধ্যে সমন্বয় ও মিথস্ক্রিয়ার সূচনা করে। এই পদ্ধতির চালিকাশক্তি হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ; আর এর প্রধান নিয়ামক শক্তি হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি। রাজনীতি, সংস্কৃতি, পরিবেশ পদ্ধতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রগতি এবং মানবিক ও সামাজিক অগ্রগতি সবকিছুর ওপরই এর সুস্পষ্ট প্রভাব বিদ্যমান। বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা ও সম্পদ পৃথিবীর অপরাপর জাতি-গোষ্ঠীর সেবায় লাগাতে প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ নীতিমালা, সুসম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা। তার জন্য প্রয়োজন উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করা । এটিই বিশ্বায়নের মূল উদ্দেশ্য।
বিশ্বায়নের অর্থ ও স্বরূপ
মালয়েশিয়ার বাণিজ্য ইউনিয়ন কংগ্রেসের কর্মকর্তা জি. রাজাস্কেরন-এর মতে “বিশ্বায়নের অর্থ হলো বাজার উন্মুক্ত করা ও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। সাধারণভাবে বিশ্বায়ন হলো দ্রব্য উৎপাদন, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির আন্তঃদেশীয় অবাধ প্রবাহ। বিশ্বায়ন ব্যবস্থায় যে মৌলিক বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করা হয় তা হচ্ছে বাজার সম্পর্কীয় আইন, সরকারি ব্যয় সংকোচন, সরকারি নিয়ন্ত্রণ হ্রাস, বেসরকারিকরণ এবং সরকারি সম্পদ ধারণার বিলোপ সাধন। এ ক্ষেত্রে বিশ্বায়নকে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের হাতিয়ার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জীবনের সামগ্রিক দিকের ওপর বিশ্বায়নের প্রভাব বিদ্যমান। যেমন : অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন; সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন; প্রযুক্তিগত বিশ্বায়ন; তথ্যগত বিশ্বায়ন; পরিবেশগত বিশ্বায়ন। এ ছাড়াও নানামাত্রিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের পরিসর বিস্তৃত ।
নিচে সংক্ষেপে বিশ্বায়নের এসব দিকের ওপর আলোকপাত করা হলো-
অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন
অর্থনীতিবিদের মতে, জাতীয় অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অধিকাংশই অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোর মধ্যে যেমন Organization of Economics Cooperation and Development (OECD)-ভুক্ত দেশগুলোর ৬৫% অর্থনৈতিক উৎপাদন অথবা GDP আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে WTO, IMF শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের প্রসার ঘটাচ্ছে যেমন আন্তর্জাতিকভাবে, তেমনি আঞ্চলিকভাবে। NAFTA, EU, ASEAN তাদের ভৌগোলিক ভূখণ্ডভিত্তিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, অর্থনীতিতে বিশ্বায়নের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তাদের মতে, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো বিশ্বায়নের সুবাদে লাভবান হচ্ছে। অন্যদিকে— আফ্রিকা, এশিয়ার একাংশ মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় তুলনায় অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা যাচ্ছে।
প্রযুক্তি বিশ্বায়ন
শিল্প বিপ্লবের সময় থেকেই উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্র আবিষ্কার এবং তা বিভিন্ন দেশে আদান-প্রদান, ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সান্নিধ্যে আসার বিরাট ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। শিল্পের উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় ও কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাতায়াত ও উন্নত যান্ত্রিক যোগাযোগের সুফল মানুষ ভোগ করতে থাকে। যার ফলে মানুষের সাথে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক বৃদ্ধি পায় এবং এক দেশের প্রযুক্তি অন্য দেশে চালান হয়। এভাবেই সূচিত হয় প্রযুক্তিগত বিশ্বায়ন ।
অন্যান্য রচনা:
ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা (১০০০ শব্দ) | SSC | HSC
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ রচনা তথা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ সম্পর্কে তথ্য
স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা (আপডেটেড তথ্যসহ)
তথ্যগত বিশ্বায়ন
বর্তমান বিজ্ঞানীদের তথ্যপ্রযুক্তির আবিষ্কার ও সহজলভ্যতা বিশ্বায়নের গতিকে হাজার হাজার গুণ বৃদ্ধি করেছে। ব্যক্তিগত খোঁজখবর, ব্যবসায়-বাণিজ্যের লেনদেন, ইন্টারনেট, ই-মেইল, ই-কমার্সের সুবাদে নিজের প্রতিষ্ঠানে বসে থেকেই বিরাট কর্মকাণ্ড মুহূর্তের মধ্যে সুচারুরূপে সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে।
রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন
বিশ্বায়নের ধারণার ওপর গভীর দৃষ্টি দিলে দেখা যায় যে, পৃথিবীর জাতিরাষ্ট্র, সমাজ ও সংস্কৃতির ওপর বিশ্বায়নের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব তীব্রভাবে প্রতিভাত হতে চলেছে। জাতিসংঘ (UN) ও অন্যান্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে ঐক্য ও সংযোগ, রাজনীতি, ব্যবসায়-বাণিজ্য, পণ্য আদান-প্রদান, সামাজিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শ্রমশক্তি বিনিময় প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা যায়।
বিশ্বায়নের ইতিবাচক প্রভাব
ক. অবাধ তথ্যপ্রবাহের বদৌলতে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হচ্ছে।
খ. মুক্তবাজার অর্থনীতির ফলে বিশ্বে বৃহৎ বাজার সৃষ্টি হয়েছে। তাতে বৃহদায়তন উৎপাদন ও বিপণন অতীব সহজতর হয়েছে।
গ. জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন নতুন ক্ষেত্র ও সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ঘ. শুল্কমুক্ত অবাধ বাণিজ্যের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
ঙ. দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংঘাত ও সংঘর্ষ নিরসনে এটি বিরাট ভূমিকা পালন করে চলেছে।
চ. বিশ্বের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় করণীয় ও কর্মপন্থা নিরূপণে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ছ. পৃথিবীর এক অঞ্চলের সংস্কৃতি ও সভ্যতার ঢেউ অন্য অঞ্চলের মানুষের ওপরে প্রভাব বিস্তার করছে।
এককথায়, তথ্যপ্রযুক্তির প্রভূত উন্নয়ন ও মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি সারাবিশ্বের ভৌগোলিক সীমারেখা যেন ঢুকিয়ে দিয়েছে। নিজ ঘরে বসে মুহূর্তের মধ্যে নিখিল বিশ্বের প্রায় সমস্ত খবর, তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব।
বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব
ক. বিশ্বায়নের সুবাদে দরিদ্র দেশগুলোর মেধা পাচার হয়ে ধনী দেশগুলোতে চলে যাচ্ছে।
খ. ধনী দেশগুলো বিশ্বায়নের সুযোগ পুরোপুরি গ্রহণ করতে সক্ষম, কিন্তু দরিদ্র দেশগুলো শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে পশ্চাৎপদতার কারণে পিছিয়ে পড়ছে। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর শিল্পগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে উঠতে পারছে না।
গ. অবাধ তথ্যপ্রবাহের ফলে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
ঘ. বিশ্বায়নের প্রভাবে দেশে দেশে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন শুরু হয়ে গেছে। মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা দিয়েছে ।
ঙ. প্রযুক্তি ও অর্থ মানুষের মনুষ্যত্বকে উপহাস করে নারীকে ভোগ্যপণ্য বানিয়েছে।
চ. শিল্পোন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাজার একচেটিয়া দখল করে ফেলছে।
বিশ্বায়নের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব
বিশ্বায়নের ফলে সামাজিক উন্নতি ও অবনতি উভয় দিকই প্রতিভাত হচ্ছে। পৃথিবীর মানবসমাজ আজ আর কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা নয়। গোটা পৃথিবী একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে।
সত্তরের দশকে উত্থাপিত গ্লোবালাইজেশন চিন্তাটি পাশ্চাত্যের শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে উত্থাপিত একটি প্রকল্প, যার মাঝে বিশ্ব অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতি সবই অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বায়ন বিষয়টি পাশ্চাত্যের শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ওপর বিশ্বের অন্যান্য দেশের দক্ষতা অর্জনের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে। এর মাধ্যমে আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর লক্ষ্য হলো এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অন্যান্য দেশের জাতীয় সংস্কৃতিকে ধীরে ধীরে নিষ্প্রভ করে দেওয়া এবং সময়ের বিবর্তনে তাকে গতিহীন করে ফেলা।
ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ে পরিভাষাটিকে সাংস্কৃতিক মৌলিক কর্মসূচিগুলোর একটি মানদণ্ড হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ১৯৯২ সালে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হার্বার্ট সিলার বলেছেন, “তথ্যপ্রবাহের স্বাধীনতার তত্ত্বের মাঝে বহুজাতিক বা বৃহৎ কোম্পানিগুলোর স্বার্থ ঊহ্য রয়েছে। আর এই পরিভাষাটি কেবল উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একধরনের ধোঁকা।” তাঁর এবং তাঁর মতো যাঁরা অভিন্ন চিন্তার অধিকারী তাঁদের এই পূর্বাভাস একান্তই বাস্তব ছিল।
ইউনেস্কোর রিপোর্ট অনুযায়ী গত দুই দশকে সাংস্কৃতিক পণ্যগুলোর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চার গুণ বেড়ে গেছে। এর মধ্য দিয়ে শক্তিমান উন্নত রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থ হাসিল করা হচ্ছে। গরিব ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে বাজার সৃষ্টি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোকে একটি অভিনব ফাঁদে ফেলা হচ্ছে।
পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর বিশ্বায়নের প্রভাব
আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার কারণে প্রতিনিয়ত বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের মাত্রা বেড়ে চলেছে। তাতে বিশ্বের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশি উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাকে এককথায় গ্রিনহাউস এফেক্ট বলে। মেরু অঞ্চল, পাহাড়ের চূড়ায় জমে থাকা বরফসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে পুঞ্জীভূত বরফখণ্ড গলা শুরু করেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর ভূভাগ নোনা পানির আগ্রাসনে ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা ও বাসস্থানের ওপর তার বিরূপ প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ঝড়, সাইক্লোন, খরা পৃথিবী নামক গ্রহকে পীড়িত করে তুলছে।
জলবায়ু পরিবর্তন
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য গ্যাস। তা মূলত বেশি উৎপাদন করে ধনী দেশগুলো। কিন্তু তার কুফল ভোগ করছে গরিব দেশগুলো। অপরদিকে ধনী দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাব স্থানীয়ভাবে রোধ করতে সক্ষম। অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো গরিব দেশগুলো ভৌগোলিক ও ইতিহাসগত দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
বিশ্বায়ন ও বাংলাদেশ
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিশ্বায়নের নেতিবাচক দিকটিই বেশি প্রতিভাত হয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বায়নের নানামুখী বৈরী স্রোতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। মুক্তবাজার অর্থনীতি আমাদের সার্বিক অঙ্গনে নাড়া দিয়েছে। কিন্তু এর প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি ও মোকাবিলা করার মতো পরিবেশ বা উপাদানসমূহ বাংলাদেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই। সেজন্য অবাধ বাজারের নামে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে বিদেশি পণ্যের বাজারে পরিগণিত হয়ে চলেছে। বিশ্বব্যাংক, IMF, ADBসহ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানের কঠিন শর্ত আরোপের কারণে দেশীয় মুদ্রা ও পুঁজিবাজার কোনো শক্ত কাঠামোর ওপর দাঁড়াতে পারেনি। বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ প্রত্যাশিত মাত্রায় বাড়েনি। অপরদিকে এদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে।
বিশ্বায়নের বদৌলতে বাংলাদেশ আধুনিক কোনো প্রযুক্তি পাচ্ছে না। গড়ে তুলতে পারছে না কোনো নতুন শিল্পভিত্তি। বাংলাদেশের গড়ে ওঠা গার্মেন্টস শিল্প নতুন বাণিজ্য ব্যবস্থায় চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। গার্মেন্টস আমাদের রপ্তানি আয়ের ৭৬% জোগান দিচ্ছে, সেটি মোট মূল্যের দুই-তৃতীয়াংশই ব্যয়িত হয় প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কিনতে। গার্মেন্টস শিল্পে বাংলাদেশের মাত্র ২৫% মূল্য সংযোজন হয়ে থাকে।
বিশ্বায়নের যুগে বাংলাদেশের নারী-শিশু পাচার, কৃষিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ, টেলিভিশনে ডিশ অ্যান্টেনার মাধ্যমে নগ্ন ছবি প্রদর্শন বাংলাদেশের সংস্কৃতির মূলে নগ্ন আঘাত হেনেছে। তাই বিশ্বায়নের এই যুগে নিজেদের টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন, সুশাসন নিশ্চিতকরণ, রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যাবশ্যক।
উপসংহার
বিশ্বায়ন তার আপন গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। সে জন্য এর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট থেকে কোনো রাষ্ট্রেরই দূরে সরে থাকার সুযোগ নেই। তবে সমগ্র বিশ্বের মানব কল্যাণে বিশ্বায়ন যখন যথাযথ কার্যকরি ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে, তখনই অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন ফলপ্রসূ ও কার্যকর হবে, সম্পদের সুষম বণ্টন হবে, সুযোগের ন্যায়সংগত অধিকার ধনী-দরিদ্র সকল দেশ সমানভাবে কাজে লাগাতে পারবে। সেই লক্ষ্যে প্রয়োজন বিশ্বজুড়ে সুশিক্ষিত মানবসম্পদ উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনিক কাঠামো বিনির্মাণ। বিশ্বায়নের সুবর্ণ রথে বাংলাদেশের আরোহণ শুভ হোক এটাই আমাদের ঐকান্তিক প্রত্যাশা।
1 comment
[…] […]
Comments are closed.