মাতা পিতার প্রতি সন্তানের অনেক কর্তব্য থাকে। তাই তো শিক্ষার সিলেবাসে রচনাকারে এটি ছাত্রদের শিখানো হয় যাতে ছাত্ররা তাদের মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করতে পারবে। আর এর মধ্যে দিয়ে সে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে।
মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য রচনার সংকেত
ভূমিকা
সন্তানের জীবনে মা-বাবার অবদান
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য
উপসংহার
মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য
অথবা
মাতা পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য
ভূমিকা
জন্মের জন্যে আমরা মাতাপিতার কাছে ঋণী। এই ঋণ অপরিশোধ্য। এ জন্য প্রত্যেক ধর্মেই পিতামাতাকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত’। ‘জননী স্বর্গ অপেক্ষা গরীয়সী’। “পিতা ধর্ম, পিতা কর্ম, পিতাই পরম তপস্যার ব্যক্তি’। পিতামাতা যেমন আমাদের স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে ছোট থেকে বড় করেছেন, তেমনি পিতামাতার প্রতিও আমাদের অনেক দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে।
সন্তানের জীবনে মা-বাবার অবদান
প্রত্যেক মা-বাবাই সীমাহীন আত্মত্যাগ করে পরম স্নেহে সন্তানকে বড় করে তোলেন। সন্তানকে লালন-পালন করা, তার লেখাপড়া, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে মা-বাবা সারাজীবনই উদ্বিগ্ন থাকেন। মা-বাবা নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ান, নিজে না পরে ভালো পোশাকটি সন্তানের গায়ে তুলে দেন। সন্তানের জন্য উৎকণ্ঠায় মা-বাবা বিনিদ্র রজনী কাটান। সন্তানের যে-কোনো অমঙ্গল মা-বাবার জন্য বেদনার কারণ হয়। কঠোর পরিশ্রম আর সীমাহীন দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে মা-বাবা যা আয়-রোজগার করেন, তা নিঃস্বার্থভাবে সন্তানের জন্যই ব্যয় করেন। বটবৃক্ষের মতো মা-বাবার আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে সস্তান বড় হয়, বিকশিত হয়। সন্তানের প্রতি মা-বাবার এই যে মায়া-মমতা, তা স্বৰ্গীয়। সন্তানের জীবনে মা-বাবা আশীর্বাদস্বরূপ। তাই কোনো অবস্থাতেই মাতাপিতাকে অবহেলা করা সন্তানের জন্য গর্হিত কাজ। মাতাপিতার মনে কষ্ট জাগে, এমন আচরণ ও কথা কখনো বলা উচিত নয়।
মাতাপিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য
সন্তানের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হচ্ছে মাতাপিতাকে শ্রদ্ধা করা। তাঁদের শ্রেষ্ঠ সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করা। তাঁদের প্রতি সবসময় বিনম্র আচরণ করা। মনে রাখতে হবে, মাতাপিতার শাসনের আড়ালে থাকে ভালোবাসা, মঙ্গল কামনা। তাঁদের মতো অকৃত্রিম স্বজন পৃথিবীতে দ্বিতীয় আর কেউ নেই।
মাতাপিতা যেমনই হোক না কেন, সন্তানের কাছে তারা সব সময় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। তাই তাঁদের অবাধ্য হওয়া কোনো ক্রমেই উচিত নয় । অবাধ্য সন্তান মাতাপিতার কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কৃতী সন্তান পিতামাতার কাছে মাথার মুকুটস্বরূপ। যে সন্তান মাতাপিতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত, তারা জীবনে সাফল্য লাভ করে।
মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে একটি উদাহরণ দেয়া যায়- হযরত আব্দুল কাদির জিলানি (রা) ডাকাত কর্তৃক আক্রান্ত হয়েও মাতৃ-আজ্ঞা পালন করেছেন। মিথ্যাকথা না বলে। এতে ডাকাত সর্দার অভিভূত হয়ে সৎপথ অবলম্বন করেছিল। হযরত বায়েজিদ বোস্তামির (রা) অসুস্থ মাতার শিয়রে সারারাত পানির গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে থাকার ঘটনা এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মায়ের ডাকে দুর্যোগপূর্ণ রাতে সাঁতার দিয়ে দামোদর নদী পার হওয়ার কাহিনী কে না জানে । এঁরা সকলেই জীবনে সফল হয়েছেন এবং মহান ব্যক্তি হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন। কাজেই মাতাপিতার কথা মেনে চলা এবং তাঁদের প্রতি কর্তব্য পালন করা আমাদের জীবনে সফলতার সোপানও বটে।
অনেক মাতাপিতা আছেন, তাঁরা নিজে অশিক্ষিত হয়েও সন্তানকে উচ্চশিক্ষা দান করেন। সেই সন্তান পড়ালেখা করে উচ্চপদে আসীন হয়ে অনেক সময় তাদের মাতাপিতার প্রতি কোনো দায়িত্ব পালন করেন। না। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা দূরে থাক, ন্যূনতম দায়িত্ব ও কর্তব্যও পালন করেন না। এটা সবচেয়ে দুঃখের ও পরিতাপের বিষয়। কোনো সুসন্তান কখনো মা-বাবার প্রতি এমন অমানবিক আচরণ করতে পারে না। বৃদ্ধ অবস্থায় মা-বাবা সন্তানের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় তাঁদের অসুখ ও স্বাস্থ্যের প্রতি অধিক নজর দিতে হবে। তাঁদের সেবা-শুশ্রূষার প্রতি যত্নশীল হওয়া সন্তানের একান্ত কর্তব্য।
উপসংহার
মাত পিতার প্রতি কর্তব্য যথাযথভাবে পালন সুসন্তান হওয়ার আবশ্যিক শর্ত। বাস্তব ও ব্যবহারিক জীবনে মা-বাবার সেবা ও তাঁদের প্রতি যথার্থ কর্তব্য পালন করে সন্তান হিসেবে নিজের জন্মঋণ শোধ করা উচিত। যদিও মা-বাবার ঋণ অপরিশোধ্য, তবু তাঁদের যেন অযত্ন, অবহেলা না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদের মনে কষ্ট হয়, এমন আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশেষত, বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবা যদি সন্তানের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা না পান, এর চেয়ে দুঃখের আর পরিতাপের কিছু নেই। এ অমানবিক ও হীন কাজ কেউ যেন না করে।
মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য রচনা এর পাশাপাশি আমাদের অন্যান্য রচনা
খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা (৬৫০+ শব্দ)
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা (৭০০ শব্দ)
মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা (৬০০ শব্দ)