Home » রচনা স্বদেশপ্রেম || স্বদেশপ্রেম রচনা
রচনা স্বদেশপ্রেম স্বদেশপ্রেম রচনা

রচনা স্বদেশপ্রেম || স্বদেশপ্রেম রচনা

by Susmi
0 comment

রচনা স্বদেশপ্রেম, স্বদেশপ্রেম রচনা, স্বদেশপ্রেম, প্রবন্ধ রচনা স্বদেশপ্রেম, স্বদেশপ্রেম প্রবন্ধ রচনা ইত্যাদি সম্পর্কে মানুষ প্রায়ই সার্চ করে থাকে। এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়ও প্রশ্ন এসে থাকে। সেজন্যেই আজকের এই লেখাটি। 

স্বদেশপ্রেম

সূচনা

মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই নিজের জন্মস্থানকে ভালোবাসে। জন্মস্থানের আলো-বাতাস, পশু-পাখি- সবুজ প্রকৃতির সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এজন্য জন্মস্থানের প্রতিটি ধূলিকণা তার কাছে সোনার চেয়েও দামি। কবির ভাষায় তার উপলব্ধি নিম্নরূপ-

“মিছা মণি মুক্তা-হেম
স্বদেশের প্রিয় প্রেম
তার চেয়ে রত্ন নাই আর। মানুষের এই উপলব্ধিই হচ্ছে স্বদেশপ্রেম।”

স্বদেশপ্রেমের সংজ্ঞার্থ

স্বদেশপ্রেম অর্থ হচ্ছে নিজের দেশের প্রতি, জাতির প্রতি, ভাষার প্রতি গভীর আকর্ষণ অনুভব করা। দেশের প্রতি প্রবল অনুরাগ, নিবিড় ভালোবাসা এবং যথার্থ আনুগত্যকে দেশপ্রেম বলে। জন্মভূমির স্বার্থে নিজের সর্বস্ব ত্যাগের সাধনাই স্বদেশপ্রেম ।

স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ

স্বদেশ মানে হলো নিজের দেশ। আর নিজের দেশকে সবাই ভালোবাসে। মাকে যেমন সবাই নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে, তেমনি স্বদেশের প্রতিও সকলের ভালোবাসা সবকিছুর উর্ধ্বে থাকে। প্রত্যেক মানুষই তাদের কথায়, চিন্তায় ও কাজে স্বদেশের প্রতি নিবিড় মমত্ববোধ প্রকাশ করে। এই বোধ বা চেতনা হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত। তাই এডউইন আর্নল্ড বলেছিলেন, ‘জীবনকে ভালোবাসি সত্যি, কিন্তু দেশের চেয়ে বেশি নয়।” সংস্কৃত শ্লোকে আছে : “জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী।” অর্থাৎ জননী ও জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।

স্বদেশপ্রেম অনুভূতি

দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি প্রবল আকর্ষণ ও ভালোবাসা থেকে জন্ম হয় স্বদেশপ্রেমের। পৃথিবীর সব জায়গার আকাশ, চাঁদ, সূর্য এক হলেও স্বদেশপ্রেমের চেতনা থেকে মানুষ নিজের দেশের চাঁদ-সূর্য- আকাশকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে ভালোবাসে। স্বদেশপ্রেমের অনুভূতি সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয় দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হলে। তখন স্বদেশপ্রেম প্রকাশে আবেগে মানুষ নিজের জীবন দিতেও দ্বিধা করে না। কেননা সে জানে, দেশের জন্য ‘নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই। “

ছাত্রজীবনে স্বদেশপ্রেম

ছাত্ররাই আগামী দিনের দেশের ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। দেশের উন্নতি ও জাতির আশা পূরণের ভবিষ্যত আশ্রয়স্থল হলো আজকের ছাত্ররা। তাই দেশ ও জাতির প্রতি গভীর মমত্ববোধ ছাত্রজীবনেই জাগিয়ে তুলতে হবে। দেশকে ভালোবাসার উজ্জীবনী মন্ত্রে দীক্ষিত হতে হবে। ছাত্রদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে পারলেই দেশকে তারা সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে দেশের ভালোর জন্য কাজ করবে। এসময় তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হবে বিদ্রোহী কবির বাণী :

“আমরা রচি ভালোবাসার আশার ভবিষ্যৎ,
মোদের স্বর্গ পথের আভাস দেখায় আকাশ-ছায়াপথ।
মোদের চোখে বিশ্ববাসীর স্বপ্ন দেখা হোক সফল।”

আরও পড়ুন:   অধ্যবসায় রচনা || রচনা অধ্যবসায়

বাংলার মানুষের স্বদেশপ্রেম

পৃথিবীতে যুগে যুগে দেশে দেশে অসংখ্য দেশপ্রেমিক জন্মেছেন। তাঁরা দেশের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে অমর হয়ে আছেন। বাংলাদেশেও তার অজস্র দৃষ্টান্ত রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে এ দেশে বিদেশি শক্তি প্রভুত্ব বিস্তারের চেষ্টা করেছে, আর স্বদেশপ্রেমিক বাংলার মানুষ দেশের স্বাধীনতা ও সম্মান রক্ষার্থে অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের হাতে বাংলা ভাষার জন্য রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, বরকতের আত্মদান দেশপ্রেমের ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মদান করেছে অসংখ্য ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক, সাংবাদিক- বুদ্ধিজীবী, মা-বোনসহ সাধারণ মানুষ। অকুতোভয় শত-সহস্র এ সৈনিকের দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এখনো এদেশের লক্ষকোটি জনতা দেশের সামান্যতম ক্ষতির আশঙ্কায় বজ্রকণ্ঠে গর্জে ওঠে।

স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম

স্বদেশপ্রেম মূলত বিশ্বপ্রেমেরই একটি অংশ। কেননা বিশ্বের সব মানুষই পৃথিবী নামক এই ভূখণ্ডের অধিবাসী। তাই স্বদেশপ্রেমের মাধ্যমে সকলেরই বিশ্বভ্রাতৃত্ব, মৈত্রী ও বিশ্ব-মানবতাকে উচ্চকিত করে তুলতে হবে। কারণ বিশ্বজননীর আঁচল ছায়ায় দেশ জননীর ঠাঁই। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেজন্যই গেয়েছেন –

“ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা,
তোমাতে বিশ্বময়ীর – তোমাতে বিশ্ব মায়ের আঁচল পাতা।”

উপসংহার

দেশপ্রেম একটি নিঃস্বার্থ ও নির্লোভ আত্ম-অনুভূতি। কোনো প্রকার লোভ বা লোভের বশবর্তী হয়ে দেশকে ভালোবাসা যায় না। প্রকৃত দেশপ্রেমিকের কাছে দেশের মঙ্গলই একমাত্র কাম্য। দেশের জন্য তাঁরা সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে পারেন। তাঁদের শৌর্য-বীর্য ও চারিত্রিক দৃঢ়তা আবহমানকাল ধরে জাতিকে প্রেরণা যোগায়। কাজেই ব্যক্তিস্বার্থ নয়, দেশ ও জাতির স্বার্থকে সবার ওপরে স্থান দিতে হবে। আমাদের সকলকে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে দেশ গড়ার কাজে মনোযোগ দিতে হবে। সর্বোপরি দেশকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে সমগ্র বিশ্বকে ভালোবাসতে শিখতে হবে। তবেই অর্জিত হবে স্বদেশপ্রেমের চূড়ান্ত সার্থকতা।

Related Posts